Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৫

এমপিরা বিদেশে গেলে স্পিকারকে কি জানাতে হয়

জাতীয় সংসদ ভবন
জাতীয় সংসদ ভবন
[publishpress_authors_box]

সংসদ অধিবেশন চলাকালে সংসদ সদস্যরা বিদেশে গেলে স্পিকারকে জানিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। তবে আইনি বাধ্যবাধকতা নেই।

এই রেওয়াজ সংসদের অধিবেশন চলাকালীন সংসদ সদস্যরা অনুসরণ করলেও অন্য সময় তা মানেন না বলে খোদ সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে জানা গেছে।

পাশের দেশ ভারতে পার্লামেন্ট সদস্যদের বিদেশ গমনে অনুমতির প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশেও রেওয়াজটি বিধিতে রূপ দেওয়ার পক্ষে কেউ কেউ।

সম্প্রতি ভারতে গিয়ে ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার পর সংসদ সদস্যের বিদেশ গমনে স্পিকারের অনুমতির বিষয়টি আবার সামনে এসেছে।

কিছু নেই কার্যপ্রণালী বিধিতে

সংসদ পরিচালিত হয় কার্যপ্রণালী বিধি অনুসরণ করে। সেখানে সংসদ সদস্যদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতি নেওয়ার কিংবা জানিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কিছু লেখা নেই।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত অধিবেশন চলাকালে কেউ বিদেশে গেলে স্পিকারকে জানিয়ে যান। কেউ কেউ আবার ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) থেকে অনাপত্তিপত্র নিয়ে যান।

আইপিইউ হচ্ছে একটি বৈশ্বিক আন্তঃসংসদীয় প্রতিষ্ঠান।

সংসদ সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আব্দুস সালাম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সেশন চলাকালীন সংসদ সদস্যরা বিদেশে গেলে স্পিকারকে জানিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ আছে। তবে কোনও বাধ্যবাধকতা নেই।”

সংসদ সদস্যরা বিষয়টা অনুসরণ করছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনেকেই এটা ফলো করছে। অন্তত সংসদ চলাকালীন সময়ে।”

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ২৪তম অধ্যায়ে সংসদে অনুপস্থিতির বিষয়ে বলা আছে। কেউ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে অনুপস্থিতির শুরু ও সমাপ্তির তারিখ কারণসহ উল্লেখ করে স্পিকারের কাছে লিখিত আবেদন করতে হয়।

স্পিকার সেই আবেদন সংসদে পড়ে শোনান। সংসদ তখন সেই সংসদ সদস্যদের ছুটি মঞ্জুর কিংবা নামঞ্জুর করেন।

ভারতে পার্লামেন্ট সদস্যদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আগে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বিদেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অনুমতি ছাড়া কোনও পার্লামেন্ট সদস্য বিদেশ যেতে পারে না।

বাংলাদেশে সংসদ সদস্যদের জন্য এমন কোনও বিধান নেই শুনে কিছুটা অবাক হন নাগরিক সংগঠন সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “সংসদ সদস্যদের দেশের বাইরে যেতে স্পিকারের অনুমতি নেওয়ার বিষয়টি কার্যপ্রণালী বিধিতে থাকা উচিৎ।”

এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “সংসদ সদস্য পরিচয়ে যারা দুর্বৃত্তায়ন করছে, তাদের বিরুদ্ধে আসলে ব্যবস্থা নিতে হবে। যাতে ওই সুন্দর ভবনে অসুন্দর মানুষরা না থাকতে পারে।”

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামানও আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী বিষয়টি বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ বলে মনে করেন।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসাবে অনুমতি নেওয়ার বিষয় না, তবে ন্যূনতম স্পিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা উচিৎ।

“রাষ্ট্রীয় কাজে গেলে সেক্ষেত্রে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন হয়। ব্যক্তিগত সফরে যদি দেশের বাইরে যায়, সেক্ষেত্রে স্পিকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো উচিৎ।”

সংসদ অধিবেশন। ফাইল ছবি

রেওয়াজ কি বিধি হবে

বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে অনুমতির বিষয়টি নিয়ে দশম সংসেদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এটা বিধি না, রেওয়াজ। তবে অধিবেশন চলাকালে বিষয়টা ম্যান্ডাটরি।

“অধিবেশন না চললে না জানিয়ে গেলেও হয়। চিফ হুইপের মাধ্যমে স্পিকারকে জানানো হয়। কেউ মানে, কেউ মানে না।”

পটুয়াখালী থেকে নির্বাচিত আটবারের এই সংসদ সদস্য মনে করেন, এখন রেওয়াজটি বিধিতে রূপ দেওয়ার সময় এসেছে।

সংসদ সদস্যদের বিদেশ গমনের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় জানিয়ে এটা এড়াতে অনুমতিপত্র থাকা ভালো বলে মনে করেন ফিরোজ।

রেওয়াজটা বিধি হিসাবে আনা দরকার বলে মনে করেন কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, “পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে হওয়া উচিৎ। আমরা কোথাও গেলে যাতে দূতাবাসগুলো এটেন্ড করে।”

বিষয়টি নিয়ে ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর কাছে জানতে চাইলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, সংসদ সদস্যদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন আছে। তবে তা সংসদ অধিবেশন চলাকালে। আর এটা রেওয়াজ, বিধি নয়।

এই রেওয়াজটা বিধিতে রূপান্তর করা উচিৎ কি না- জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত