ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থেকে অপহৃত আট মাসের শিশু সাইফানকে শরীয়তপুর জেলার পালং এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটিকে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন তানজিলা আক্তার পারভীন নামের এক নারী।
সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে র্যাব জানিয়েছে, সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে র্যাব-১০ এর একটি দল সাইফানকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয় দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার আগানগর এলাকার আশরাফুল আলমের স্ত্রী পারভীনকে।
র্যাব বলছে, ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার আগানগর এলাকায় ছেলে আদিফ মজুমদার (১৩), আহনাফ মজুমদার (৬) ও সাইফান মজুমদারকে (৮ মাস) নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভাড়া থাকেন সাকিলা এনাম ও এনামুল হক মজুমদার দম্পতি।
তাদের বাসার পাশেই ভাড়া থাকেন তানজিলা আক্তার পারভীন (৩৫)।
পারভীন শনিবার সন্ধ্যায় সাকিলার কাছে নিজের অসহায়ত্বের কথা বলে শুধু থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে বাসায় কাজের বিনিময়ে আশ্রয় দিতে অনুরোধ করেন। পারভীনের আকুতি শুনে নিজের বাসায় তাকে আশ্রয় দেন সাকিলা। এর পরদিন সাকিলার ছেলে আহনাফ আইসক্রিম খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি শুরু করলে পারভীন আহনাফ ও সাইফানকে নিয়ে আইসক্রিম কেনার জন্য বাসার কাছের একটি দোকানে যান।
কিছুক্ষণ পর আহনাফ আইসক্রিম নিয়ে একা বাসায় ফেরে। সাকিলা ছেলের কাছ থেকে জানতে পারেন, আহনাফকে পাঠিয়ে দিয়ে পারভীন বলেছেন তিনি ও সাইফান কিছুক্ষণ পরে আসবেন। এরপর অনেকক্ষণ সাইফানকে নিয়ে পারভীন বাসায় না ফেরায় নিজেরাই সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজখবর শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা।
এক পর্যায়ে সাকিলা বুঝতে পারেন যে সাইফানকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে রবিবার রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় তানজিলা আক্তার পারভীন এবং অজ্ঞাত আরো ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি অপহরণ মামলা করা হয়।
র্যাব-১০ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার তাপস কর্মকার বলেন, “সাইফানকে অপহরণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। বিষয়টি জানতে পেরে র্যাব-১০ এর একটি দল সাইফানকে দ্রুত উদ্ধারে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সকালে র্যাব-৮ এর সহায়তায় শরীয়তপুর জেলার পালং থানাধীন চরলক্ষী নারায়ণ এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তানজিলা আক্তার পারভীনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তার দেওয়া তথ্যমতে পাশের একটি বাসা হতে অক্ষত অবস্থায় সাইফান মজুমদারকে উদ্ধার করা হয়।”
পারভীনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে এই র্যাব কর্মকর্তা জানান, সন্তান জন্ম দিতে না পারায় পারভীনের প্রথম বিয়েতে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের প্রবাসী আশরাফুল আলমের সঙ্গে বিয়ে করেন তিনি। বিয়ের কয়েক মাস পরেও পারভীনের সন্তান না হওয়ায় এই সংসারেও শুরু হয় বিবাদ।
কিছুদিন পর আশরাফুল আবার বিদেশ চলে গেলে পারভীন জানান যে তিনি গর্ভধারণ করেছেন। আশরাফুল খুশি হয়ে দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। আশরাফুল দেশে এসে যদি জানতে পারেন যে, পারভীন মিথ্যা বলেছেন তাহলে আবারও সংসার হারাবেন এমন শঙ্কায় তিনি ৮-১০ মাসের একটি শিশু অপহরণের সিদ্ধান্ত নেন।
সে অনুযায়ী তিনি আগে থেকে পরিচিত সাইফানকে অপহরণের পরিকল্পনা করেন এবং তাদের বাসায় যান।
র্যাব জানিয়েছে, সংসার বাঁচাতেই পারভীন সাইফানকে অপহরণ করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন।