Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

জনতার বাঁধভাঙা উল্লাস-উচ্ছ্বাস

বিলবোর্ডের ওপর চড়ে পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করেছেন ঢাকার অনেক মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিলবোর্ডের ওপর চড়ে পতাকা উড়িয়ে উল্লাস করেছেন ঢাকার অনেক মানুষ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

সকাল সন্ধ্যা প্রতিবেদন

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর উল্লাসের জনপদে পরিণত হয়েছে রাজধানী ঢাকা।

রবিবার বিকালে জনতার ঢল নেমে আসে সড়কে সড়কে; জাতীয় পতাকা নিয়ে চলতে থাকে একের পর এক মিছিল।

গণভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সংসদ ভবনেও ঢুকে পড়ে জনতা, যা মনে করিয়ে দেয় দুই বছর আগে শ্রীলঙ্কার ঘটনাকে।

শেখ হাসিনার পতন উদযাপনের মিছিলে যোগ দেওয়া সুব্রত ও লাকী দম্পতি বলছিলেন, ‘ইতিহাসের সাক্ষী’ হতে পথে নেমেছেন তারা।

“এতদিন মনে হয়, দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এখন আমরা স্বাধীন, মুক্ত,” বলেন সুব্রত।

পুরান ঢাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব ইলিয়াস খান বলেন, “আজ আমরা দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জনের উল্লাস করছি। আগে ছিল জালিম হানাদার বাহিনী থেকে আর এবার স্বাধীনতা পেলাম স্বৈরাচার হাসিনা থেকে।

“মানুষের মধ্যে যে এত ক্ষোভ ছিল, তা বাসার বাইরে বের না হলে বুঝতাম না।”

২০০৯ সাল থেকে টানা ১৫ বছর শেখ হাসিনার শাসনকাল প্রহসনের নির্বাচন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মত প্রকাশের অধিকার সঙ্কুচিত করা, গুম-খুনের নানা অভিযোগে ছিল প্রশ্নবিদ্ধ।

গত দেড় দশকে বিরোধী দলকে কঠোর হাতে দমন আওয়ামী লীগ সভাপতি করতে পারলেও এবার সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সামনে তাকে নতি স্বীকার করে দেশ ছাড়তে হলো।

হাইকোর্ট এক রায়ে সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহাল করে গত জুন হাইকোর্টের রায়ের পর শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামে।

‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণই ছিল। কিন্তু গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালালে তা সহিংসতায় গড়ায়।

পরদিন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রংপুরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ছয়জন নিহত হয়। ১৮ জুলাই সংঘাত ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এরপর কয়েকদিনে দুই শতাধিক নিহত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে সরকার।

এরই মধ্যে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনায় সব ধরনের সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কার করে সরকার। ৫৬ শতাংশ থেকে কোটার অনুপাত নামিয়ে আনা হয় ৭ শতাংশে।

এরপর আন্দোলনের যৌক্তিকতা নেই বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৯ দফা দাবি তুলে তা আদায়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

এরপর আন্দোলনের সমন্বয়কদের ডিবি অফিসে তুলে নেওয়া এবং পুলিশের গ্রেপ্তার-হয়রানি সাধারণ মানুষকেও ক্ষুব্ধ করে তোলে। এরপর আন্দোলনকারীদের প্রতিহত করতে আওয়ামী লীগ নামার পর সহিংসতার পাশাপাশি ক্ষোভও আরও বাড়ে।

শনিবার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সরকার পদত্যাগের একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে রবিবার থেকে অসহযোগ কর্মসূচি শুরু করে। তা ঠেকাতে আওয়ামী লীগ নামার পর দেশজুড়ে সহিংসতা ব্যাপক আকার নেয়। একদিনেই প্রায় একশ মানুষ নিহত হয়।

এরপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সোমবার ঢাকা মার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করে সারাদেশ থেকে মানুষকে রাজধানী আসার আহ্বান জানায়। তা ঠেকাতে শেখ হাসিনা কারফিউ জারি করে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পাশাপাশি আন্দোলন দমনের কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন।

কিন্তু সোমবার দিনটা পুিলশের কঠোরতার মধ্য দিয়ে শুরু হলেও সময় গড়াতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূইয়াসহ অবসরপ্রাপ্ত একদল সেনা কর্মকর্তা আন্দোলন সমর্থন করে রাজপথে নামার কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে জনগণের উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ জামান।

এরমধ্যে শাহবাগে জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীসহ জনতা; কারফিউ উপেক্ষা করে ঢাকার বিভিন্ন স্থান থেকে শাহবাগের দিকে এগোতে থাকে হাজার হাজার মানুষের মিছিল।

সেনাসদস্যদের সঙ্গে শাহবাগে জনতা।

ইলিয়াস বলেন, “এভাবে ছাত্র হত্যা করে কেউ ক্ষমতায় টিকতে পারে? পারে না। ছাত্র-জনতা সেটা আবারও বুঝিয়ে দিল। এরশাদের পতনের সময়ও এত মানুষ দেখিনি।”

বেলা ১টার দিকে শাহবাগে ছাত্র-জনতা এক হতে থাকে৷ তখন পুলিশকে পিছিয়ে যেতে দেখা যায়। সেনাসদস্যরা অবশ্য বিভিন্ন মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছিল।

এরই মধ্যে ২টার দিকে শাহবাগে উপস্থিত হন আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। আধা ঘণ্টা পর তিনি ঘোষণা দেন গণভবনের দিকে যাত্রার। তারপর শুরু হয় মিছিল।

প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে মিছিলে মানুষ বাড়তে থাকে। সংসদ ভবনের ভেতরে রিকশা করে মানুষজনকে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়৷ এক রিকশাচালক বলেন, “কোনোদিন এই রাস্তা দিয়ে যাইতে পারি নাই৷ আজকে ঢুকে পড়ছি। আজকে স্বাধীন।”

সন্তানদের নিয়ে মিছিলে আসা এক ব্যক্তি বলেন, “এমন এক দিনে যদি ওদের নিয়ে বের না হই। তাহলে তো ওরা ইতিহাস দেখতে পারবে না।”

অনেককে দেখা যায়, সংসদ ভবনের সামনে ব্লুটুথ সাউন্ড বক্স দিয়ে গান ছাড়তে। আন্দোলন দিয়ে জনপ্রিয় হওয়া র‍্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উঠা’ গানটি ব্যাপকভাবে বাজছিল।

ভুভুজেলা বাশি, মুখে বিজয় লেখা, হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে মানুষের উল্লাস চলে রাত পর্যন্ত।

এক শিশু মিছিলে হাঁটছিল। সেসময় একজন তাকে কোলে নিতে বলে তার অভিভাবকদের। সেসময় পাশের একজন বলে উঠেন, “এই শিশুদের জন্যই তো এত লড়াই। ওরা স্বাধীনভাবে হাঁটবে রাস্তায়, হাঁটতে দিন।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত