Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

আগামীতে কলা খেতে বেশি দাম দিতে হবে বিশ্ববাসীকে

ss-banana-stock-photo-2024
[publishpress_authors_box]

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাড়ছে বিশ্বের তাপমাত্রা। এতে সমস‍্যা হবে কলার উৎপাদনে। ফলে ভবিষ‍্যতে কলা কিনতে দাম দিতে হবে বেশি, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ প্যাসকেল লিউ এমন এক বিশেষজ্ঞ। সম্প্রতি বিবিসিকে তিনি বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তন কলার সরবরাহে ‘বিশাল হুমকি’ সৃষ্টি করছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোগ-বালাইয়ের প্রভাবকে আরও জটিল করে তুলছে।”

এসব চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনার জন্য গত মঙ্গলবার রোমে দ্য ওয়ার্ল্ড বানানা ফোরামের বৈঠক হয়।

প্রাকৃতিক হলুদ মোড়কে আবৃত পুষ্টিকর ও সুস্বাদু এ ফল বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রপ্তানিকৃত ফল। যুক্তরাজ্য একাই বছরে প্রায় ৫০০ কোটি কলা আমদানি করে, যার প্রায় ৯০ শতাংশ দেশটির বড় বড় সুপারশপে বিক্রি হয়।

গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি সুপারশপে কলার ঘাটতি দেখা দেয়। বিক্রেতারা জানান, সমুদ্রে ঝড়ের কারণে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এই পরিস্থিতি হয়েছে।

কলাকে আরও টেকসই করার ওপর গবেষণা করছেন ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার অধ্যাপক ড্যান বেবার। তার মতে, বিষয়টি বেশিরভাগ ভোক্তারই নজরে পড়বে না।

ড্যান বেবার বিবিসি নিউজকে বলেন, “কলার সরবরাহে প্রায়ই ঘাটতি দেখা দেয়। তবে যুক্তরাজ্য আসলে এমন ধাক্কা মোকাবেলায় বেশ দক্ষ। দেশটির কলা পাকানোর কেন্দ্রগুলো যে হারে কলা পাকায়, তাতে তারা প্রয়োজনে বাড়াতে বা কমাতেও পারে। ফলে ঘাটতির সময় তারা কলার সরবরাহে ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে।”

তবে কলার সরবরাহ স্বল্প-মেয়াদি আবহাওয়ার এই ধরনের ঘটনাগুলোর মোকাবেলা করতে পারলেও বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্রমবর্ধমান হুমকি এবং এর ফলে ছড়িয়ে পড়া রোগ-বালাইগুলো নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন।

বিশ্বব্যাপী কলার খুচরা বিক্রেতা, উৎপাদক দেশ, রপ্তানিকারক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানসহ কলা শিল্পের স্টেকহোল্ডারদের সংগঠন দ্য ওয়ার্ল্ড বানানা ফোরাম জাতিসংঘের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।

ফোরামের গত মঙ্গলবারের বৈঠকে প্যাসকেল লিউ বলেন, “আমি মনে করি জলবায়ু পরিবর্তন সত্যিই কলা উৎপাদন খাতের জন্য একটি বিশাল হুমকি।”

চরম আবহাওয়া কলা উৎপাদনে প্রভাব ফেলে। এছাড়া কলা তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রতি সংবেদনশীল। ফলে বিশ্বের কিছু জায়গা থেকে ফলটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। সম্ভবত সবচেয়ে বড় তাৎক্ষণিক হুমকি হলো, ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা রোগ-বালাই ছড়াতে সাহায্য করছে।

সবচেয়ে উদ্বেগের কারণ হলো, ফুসারিয়াম উইল্ট টিআরফোর নামের একটি ছত্রাকের সংক্রমণ। ছত্রাকটি অস্ট্রেলিয়া ও এশিয়া থেকে আফ্রিকা হয়ে এখন দক্ষিণ আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে।

একবার একটি বাগানের কোনও গাছ এই ছত্রাকে সংক্রমিত হলে, এটি পুরো বাগানকে তছনছ করে ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ছত্রাক থেকে মুক্তি পাওয়াও বেশ কঠিন।

রূপান্তরের মাধ্যমে ছত্রাকটি এখন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় কলার জাত ক্যাভেন্ডিশের জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে।

লিউ বলেন, “আমরা জানি, এই ফুসারিয়াম উইল্ট ছত্রাকের বীজ সহজে মরে না। এগুলো বন্যার পানি, এমনকি প্রবল বাতাসেও ছড়াতে পারে। ফলে বেশি সময় ধরে অস্বাভাবিক আবহাওয়া থাকলে এই রোগটি অনেক দ্রুত ছড়াবে।”

সার, জ্বালানি ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি শ্রমিক সংকটও কলা উৎপাদনকারীদের সমস্যার মুখোমুখি দাড় করাচ্ছে।

এসবের সঙ্গে সরবরাহের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে যুক্তরাজ্য ও বিশ্বজুড়ে কলার দাম বাড়তেই থাকবে।

লিউ বলেন, “দাম তো অবশ্যই বাড়বে। কলার সরবরাহ খুব বেশি না বাড়লে, আমার অনুমান সামনের বছরগুলোতে কলার দাম তুলনামূলকভাবে বেশি থাকবে।”

রোমে দ্য ওয়ার্ল্ড বানানা ফোরামের বৈঠকে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এরমধ্যে আরও টেকসই উপায়ে কলা উৎপাদনের মতো ইস্যুও ছিল।

ভোক্তারাও ক্রমবর্ধমান হারে টেকসই উপায়ে উৎপাদিত কলা ও অন্য পণ্য কিনতে চাইছেন। এ জন্য কলা চাষীদের কেবল তাদের উৎপাদনের উপায়কে আরও পরিবেশবান্ধব করলেই চলবে না বরং তাদের ফল টেকসই কি না- তা প্রমাণের জন্য স্বাধীন পরীক্ষকদের অর্থও দিতে হবে।

লিউর মতে এই বাধ্যবাধকতাগুলো একদিক থেকে ভালো। এতে উৎপাদকদের তাদের উৎপাদন ব্যবস্থাকে আরও টেকসই করার সুযোগ কাজে লাগাতে সাহায্য করবে। তবে উৎপাদকদের খরচও বাড়ে।

তিনি বলেন, উৎপাদক ও ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আরও নিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার প্রয়োজন। ভোক্তাদেরই এই বাড়তি খরচের যোগান দিতে হবে। ফলে কলার দাম বাড়বে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত