বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, হোস্টেলের ক্যান্টিন কিংবা কর্মক্ষেত্রে, বন্ধু ভেবে কারও সঙ্গে দেদারসে আড্ডা চলছে বহুদিন ধরে। কিন্তু বন্ধুত্ব জমে উঠছেনা কিছুতেই। অনেক ভেবেও বের করা যাচ্ছে না সংকটটা কোথায়।
হতে পারে ওই বন্ধুটি স্বার্থপরতার এক বিশেষ পর্যায়ে চলে গেছে। যাকে বলা যায় ‘ভয়ংকর’ স্বার্থপর। ফলে বন্ধুত্বকে সহজ এবং স্বাভাবিকভাবে বরণ করে নেওয়া তাদের পক্ষে অসম্ভব এক ব্যাপার।
জেনে নেওয়া যাক এ ধরনের স্বার্থপরদের ১০ বৈশিষ্ট্য-
‘তালগাছটা আমার’
যে কাজে সকলের অংশগ্রহণ প্রয়োজন, এমন ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় সবাই ব্যক্তিগত চাহিদা এবং অন্যের চাহিদার মধ্যে ভারসাম্য করে থাকেন। কিন্তু যারা গভীরভাবে স্বার্থপর তাদের স্বভাবে এটি নেই।
দলেবলে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবেন? ছুটির দিনে যাবেন দূরে কোথায় বেড়াতে? এসব ক্ষেত্রে কখনো কখনো এমন কিছু ব্যক্তিদের পাবেন যারা নিজের পছন্দের বাইরে কোথাও যেতে একেবারেই নারাজ। সর্বক্ষেত্রে এদের দাবি- যত যাই হোক, ‘তালগাছটা আমার’।
কাজের পরিবেশে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় এমন কারও সঙ্গে যদি প্রায়ই যুঝে চলতে হয়, তবে ধরে নিতে হবে ভয়ংকর স্বার্থপর কারও সঙ্গেই মেলামেশা করছেন।
আসলে এই লোকেরা এমনকি বুঝতেও পারে না যে তারা এটি করছে।
সহমর্মিতার অভাব
ভীষণ স্বার্থপর মানুষদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা অন্যের কষ্ট এবং জীবন সংগ্রাম বুঝতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়। এমন ব্যক্তি যদি হযন কারও রুমমেট তবে তার জীবনের কষ্ট আর সংকট বাড়ে বৈ কমেনা। এমনকি কেউ খুব দুঃখে থাকলেও এরা সহানুভূতির হাতটুকু বাড়াতে জানেনা।
এমন মানুষদের সঙ্গে যদি কাজের প্রয়োজনেও সম্পর্ক রাখতে হয়, তবে তা জীবনকে কঠিন করে তুলতে পারে।
অনুভূতি বা বস্তুগত জিনিস শেয়ার না করা
যে কোন মানবীয় সম্পর্কে আবেগীয় সমর্থন খুব জরুরী একটি বিষয়। কার্যত, এভাবেই সকল মানবিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাছাড়া আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্কে এটি জরুরী দক্ষতাও। পাশাপাশি নিজের মালিকানাধীন বিষয়গুলোও অনেকসময় ছাড় দিতে হয়। তা একটি ছোট্ট কলম থেকে শুরু করে ব্যবহারের ছাতা কতো কী-ই না হতে পারে। কখনো আবার নিজের ব্যক্তিগত সময়েও দিতে হয় ছাড়।
কিন্তু ভীষণ স্বার্থপর লোকজন এগুলোর কোনটাই করতে নারাজ। খারাপ সময়ে অন্যকে সময় দেওয়া দূরে থাক, মূলত আবেগ অনুভূতি অন্যের জন্য ভাগ করে নেওয়াকেও এদের কাছে ‘খরচ’ বলে মনে হয়। বস্তুগত জিনিস তো বহু দূরের বিষয়।
সবক্ষেত্রে নিজেকে অসহায় হিসেবে উপস্থাপন করা
এমন লোক নেহায়েত কম নয় যারা যে কোন পরিস্থিতিতেই নিজেকে অসহায় এবং আক্রান্ত হিসেবে দেখাতে পছন্দ করেন। আসলে নিজেকে এভাবে উপস্থাপন করলে যে কোনও কাজের দায় এড়ানো যায়। নিজের ভুল ত্রুটিগুলো ঢেকে রাখা যায়।
এমন ব্যক্তিরা কখনোই নিজের ভুল স্বীকার করেন না। গুরতরভাবে স্বার্থপর ব্যক্তিদের মধ্যে এই বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
ব্যক্তিগত সীমানা বুঝতে অক্ষম
যে কোন সম্পর্কে ব্যক্তিগত সীমারেখা বুঝতে পারা অত্যন্ত জরুরী। কিন্তু গভীরভাবে স্বার্থপর ব্যক্তিরা অন্যের ব্যক্তিগত সীমানা বুঝতে প্রায়ই অসমর্থ হন। কারণ তাদের মাথায় কেবল তাদের প্রয়োজন এবং আকাঙক্ষাই গুরুত্ব পায়।
কর্মক্ষেত্রে এই ধরনের ব্যক্তিরা নিজের সুবিধা অনুযায়ী অন্যদের কাজ করতে বাধ্য করেন।
অন্যদের প্রতি আগ্রহের অভাব
যে কোনও সম্পর্কে ভালো শ্রোতা হওয়া খুব জরুরী। ভালো শ্রোতা হতে পারার অর্থ হলো অন্যের কথা গুরুত্ব দিয়ে শোনা। তবে ভীষণভাবে স্বার্থপর লোকেরা এই কাজটি ভালোভাবে করে উঠতে পারেন না। অন্যের কথায় তাদের মনোযোগ থাকে খুবই কম, কিন্তু কথোপকথনে আধিপত্য বিস্তার করে নিজের কথাই বলতে তারা পছন্দ করেন।
ছাড় দিতে রাজি নয় একেবারেই
সুন্দর সম্পর্কের অন্যতম ভিত্তি হলো পারষ্পরিক ছাড় অথবা আপস। এটা হতে পারে ব্যক্তিগত কিংবা পেশাগত সম্পর্কে। এই ছাড় অথবা আপস কিন্তু পারষ্পরিক বোঝাপড়া এবং শ্রদ্ধাবোধকেও তুলে ধরে।
কিন্তু দুঃখজনক হলো, স্বার্থপর ব্যক্তিরা সাধারণত কোনও সম্পর্কেই ছাড় দিতে রাজি থাকেনা। এদের কথা হলো- হয় আমার কথা মানো, নয়তো রাস্তা মাপো।
মাত্রাতিরিক্ত উদারতা
তবে ব্যতিক্রম একটি বৈশিষ্ট্যও এদের কারও কারও আছে। তা হলো অসম্ভব উদারতা। তাদের আপাত উদার এই আচরণের পেছনে কাজ করে ফিরতি কিছু পাওয়ার আকাঙ্খা। ফলে লাগামছাড়া উদারতা কারও আচরণে ফুটে উঠলে খুব সহজে বিশ্বাস না করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
অন্যের সাফল্য উদযাপনে অনীহা
স্বার্থপর ব্যক্তিরা যেহেতু নিজ স্বার্থ বাদে অন্যকিছু চিন্তা করতে অক্ষম, ফলে অন্যের ভালো খবরে তাদের কিছু যায় আসে না। কারণ এতে তাদের কোনও স্বার্থ নেই!
অন্যের চাওয়া এবং প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করা
ভীষণভাবে স্বার্থপর ব্যক্তিদের কাছে অন্যের প্রয়োজন এবং চাওয়া পাওয়ার কোন গুরুত্ব নেই। যেহেতু তারা নিজের প্রয়োজন এবং চাহিদা নিয়েই সারাক্ষণ মগ্ন থাকেন, ফলে অন্যের চাওয়া পাওয়া নিয়ে ভাববার তাদের সময় কোথায়?
আর এই বৈশিষ্ট্যটি গভীরভাবে স্বার্থপর মানুষদের একটি সাধারণ ব্যাপার। এমনকি আপনজনদের প্রয়োজন এবং চাহিদার বিষয়টি তারা দিনের পর দিন অগ্রাহ্য করে কাটিয়ে দিতে পারেন।