দিনে দিনে অনেক সময় পেরিয়েছে। দ্বৈরথের বয়স ঠেকেছে ১১ বছরে। শুরুটা জার্মানি থেকে, এরপর ইংল্যান্ডে এসে ডাগ আউটের লড়াইয়ে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছেন পেপ গার্দিওলা ও ইয়ুর্গেন ক্লপ। কোচিংয়ের ক্ষুরধার মস্তিষ্কে ফুটবলকে নতুন আঙ্গিকে সাজিয়ে ইতিহাসের ‘বিশেষ’ পাতায় লিখে নিয়েছেন নিজেদের নাম। তাদের মুখোমুখি লড়াই মানেই উত্তেজনার ডালি সাজানো মনোমুগ্ধকর ফুটবলের প্রদর্শনী।
পাসিং ফুটবল বনাম গেগেন প্রেসিংয়ে সেই প্রদর্শনী হয়তো শেষবার উপভোগ করতে যাচ্ছে ফুটবল দুনিয়া। প্রিমিয়ার লিগে যে শেষবার, সেটা নিশ্চিত করে বলাই যায়। রবিবার (১০ মার্চ) লিভারপুলের মাঠে আতিথ্য নেবে ম্যানচেস্টার সিটি। অ্যানফিল্ডের এই ম্যাচ দিয়েই প্রিমিয়ার লিগে শেষবার ডাগ আউটে মুখোমুখি হচ্ছেন গার্দিওলা-ক্লপ। এফএ কাপে দুই দলের দেখা না হলে এটাই হবে ইংলিশ ফুটবলে তাদের শেষ সাক্ষাৎ।
দুই কোচের দ্বৈরথে জমজমাট ম্যাচ
সময়ের দুই সেরা কোচ তাদের কোচিং মেধা দিয়ে বদলে দিয়েছে ইংলিশ ফুটবলকে। প্রিমিয়ার লিগের সর্বশেষ ছয় শিরোপা জিতেছেন গার্দিওলা ও ক্লপ। পাঁচবার জিতেছেন স্প্যানিশ কোচ, একবার জার্মান ট্যাকটিশিয়ান। রবিবারের ম্যাচেও হয়তো আঁকা হয়ে যাবে এবারের প্রিমিয়ার লিগের শিরোপার পথ। ম্যান সিটি-লিভারপুলের যে দল জিতবে, তারাই ১০ ম্যাচ বাকি থাকতে এগিয়ে যাবে শিরোপার পথে। তবে ড্র হলে আর্সেনাল চলে আসবে দৃশ্যপটে।
পয়েন্ট টেবিলের হিসাব তো আছেই, একইসঙ্গে অ্যানফিল্ডের ম্যাচটি গার্দিওলা-ক্লপের শেষ সাক্ষাতের ম্যাচ বলেও আলাদা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ১১ বছর আগে জার্মানিতে বায়ার্ন মিউনিখের গার্দিওলা ও বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের ক্লপের যে দ্বৈরথ শুরু হয়েছিল, সেটিই শেষ হতে যাচ্ছে রবিবার। কারণ গত জানুয়ারিতে ক্লপ ঘোষণা দিয়েছেন, চলতি মৌসুম শেষেই বিদায় বলবেন লিভারপুলকে। প্রিমিয়ার লিগের এই ম্যাচের পর আর খেলা নেই ম্যান সিটি-লিভারপুলের (যদিও এফএ কাপে সুযোগ আছে)।
ইংল্যান্ডে দ্বৈরথের শুরুটা যেভাবে
ব্রেন্ডন রজার্সকে বরখাস্ত করার পর ক্লপকে নিয়োগ দেয় লিভারপুল। ২০১৫ সালের অক্টোবরে অ্যানফিল্ডে আসার পর জার্মান কোচ বলেছিলেন, “এই চেয়ারে যদি চার বছর থাকি, আমি নিশ্চিত একটি শিরোপা দিতে পারব লিভারপুলকে।” সময় একটু বেশি লেগেছে, তবে সাড়ে চার বছর পর তিনি যেটি করেছেন, আগের ৩০ বছরে কেউ করতে পারেননি। প্রিমিয়ার লিগ যুগে প্রথমবার শিরোপা জিতিয়েছেন অলরেডদের।
এই জার্মান কোচের লিভারপুলে যোগ দেওয়ার ৯ মাস পর ইংলিশ ফুটবলে নাম লেখান গার্দিওলা, ম্যান সিটির কোচ হয়ে। প্রথম মৌসুম তৃতীয় হয়ে শেষ করলেও পরের ছয় বছরে সিটিজেনদের জিতিয়েছেন পাঁচটি প্রিমিয়ার লিগ ট্রফি। শিরোপা সংখ্যায় গার্দিওলা এগিয়ে থাকলেও মুখোমুখি লড়াইয়ে কিন্তু জয়ী ক্লপ। জার্মানি ও ইংল্যান্ড মিলিয়ে স্প্যানিশ কোচের ১০ জয়ের বিপরীতে জার্মান কোচ জিতেছেন ১১বার।
আছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা
শিরোপার খেলায় প্রায় সব মৌসুমেই লড়াই হয়েছে গার্দিওলা ও ক্লপের। তবে সেই দ্বৈরথ কখনোই তিক্ততার ছিল না, বরং দুজন দুজনকে দেখেছেন সম্মানের চোখে। শেষবেলাতেও একজনের প্রশংসা ঝরল আরেকজনের কণ্ঠে।
অ্যানফিল্ডের ম্যাচের আগে গার্দিওলা যেমন বলেছেন, “আমি তার (ক্লপ) সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাই। তার সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তিনি ফুটবল ভালোবাসেন। তার জায়গা এখানেই। (লিভারপুল ছাড়ার) কারণটা তিনি সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং, প্রিমিয়ার লিগে এটাই শেষবার (আমাদের দেখা হচ্ছে)। হয়তো এফএ কাপে আবার দেখা হবে।”
প্রিমিয়ার লিগের শেষ সাক্ষাতের আগে ক্লপের মুখেও ঝরল গার্দিওলার প্রশংসা, “এই কাজটা (কোচিং) আমি নিজে যেহেতু করি, তাই পেপের (গার্দিওলা) শ্রেষ্ঠত্বই আমি দেখতে পাই। তিনি ফুটবলকে প্রভাবিত করেছেন এবং প্রচুর শিরোপা জিতেছেন, তারপরও ডাগ আউটে দেখে মনে হয় তিনি কখনও কিছু জেতেননি। আমার কাছে অবশ্যই তিনি দুর্দান্ত এক কোচ।”