দুর্নীতির একটি অভিযোগ তদন্তের অংশ হিসেবে রোলেক্সসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলাসী ঘড়ির খোঁজে পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বলুয়ার্তের সরকারি প্রাসাদ ও ব্যক্তিগত বাসভবনে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার এই অভিযানের সময় দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানানো হলে পুলিশ দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তল্লাশি চালায়।
পেরুর সংবাদমাধ্যম লা এনসেরোনায় প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তের ঘড়ি নিয়ে করা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। হাজার হাজার ছবি পর্যালোচনা করে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনটি তৈরি করা লা এনসেরোনা নিশ্চিত যে, প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তের অন্তত ১৪টি বিলাসবহুল ঘড়ি রয়েছে।
পেরুর সংবাদমাধ্যমে এ ঘটনাকে ‘রোলেক্স কেস’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
পুলিশের অভিযান শুরুর আগে প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তে যেকোনো ধরনের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, তার মালিকানাধীন সবকিছুই তার কঠোর পরিশ্রমের ফল।
তিনি বলেছিলেন, “আমি পরিষ্কার হাতে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে এসেছি এবং হাত পরিষ্কার রেখেই আমি চলে যাব, যেমনটা আমি পেরু জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি।”
বলুয়ার্তের দপ্তর শনিবার সকালে এক বিবৃতিতে জানায়, কোনও ধরনের ‘ঘটনা’ ছাড়াই তল্লাশি কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
তার আইনজীবী মাতিও কাস্তানেদা পেরুর সম্প্রচারমাধ্যম আরপিপিকে জানান, পুলিশ প্রায় ১০টি ঘড়ির ছবি তুলে নিয়ে গেছে। তবে সেগুলো কোন ব্র্যান্ডের ঘড়ি ছিল তা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি।
কাস্তানেদা আরও জানান, এ বিষয়ে আগামী মাসে প্রসিকিউটরের অফিসে প্রেসিডেন্ট বলুয়ার্তে সাক্ষ্য দেবেন।
এ ঘটনার পর প্রেসিডেন্টের রাজনৈতিক মিত্ররা অনুমিতভাবেই তার পক্ষে দাঁড়িয়েছেন এবং পুলিশি অভিযানকে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে অভিহিত করেছেন।
পেরুর প্রধানমন্ত্রী গুস্তাভো আড্রিয়ানজেন আরপিপিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ব্যাংক হলিডের রাতে রাতে চালানো পুলিশের ওই অভিযানকে প্রেসিডেন্টের মর্যাদায় আঘাত বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে দেশটির বিচারমন্ত্রী এদুয়ার্ডো আরানা প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ ও বাড়িতে তল্লাশির ঘটনাকে অসাংবিধানিক বলে দাবি করেছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পেরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেশ বেড়েছে। দেশটিতে দুর্নীতি ও রাজনৈতিক অপকর্মের অভিযোগে একের পর এক পেসিডেন্টকে পদচ্যুত হতে হয়েছে।
বলুয়ার্তে পেরুর প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০২২ সালের ডিসেম্বরে দায়িত্ব নেন। তার আগে দেশটির প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন পেদ্রো কাস্তিলো। পেরুর গ্রামীণ এলাকা থেকে উঠে আসা সাবেক শিক্ষক ও ইউনিয়ন নেতা কাস্তিলো দেশটির কংগ্রেস ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে অভিশংসনের মুখে পড়েন, যার ধারাবাহিকতায় তাকে পদও ছাড়তে হয়। পরে কাস্তিলোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়, যদিও তিনি সেই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
কাস্তিলোর আগে পেরুর প্রেসিডেন্ট পদে থাকা মার্টিন ভিজকারাকেও ২০২০ সালে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে অভিশংসনের মুখে পদ ছাড়তে হয়েছিল।
ভিজকারার আগে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করা পেদ্রো পাবলো কুচিনস্কিও ২০১৮ সালে দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর তার আগে প্রেসিডেন্টের পদে থাকা ওলান্তা হিউমালার বিচার চলছে অর্থপাচারের অভিযোগে করা মামলায়।