Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫
Beta
বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

গুলি চালানো বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট খারিজ

ss-highcourt-2024
[publishpress_authors_box]

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট।

আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে রবিবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

তবে রিট খারিজ করে দিলেও সহিংস মিছিল সমাবেশের ক্ষেত্রে পুলিশ বা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি এবং পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল-এর বিধি অনুসরণ করতে বলেছেন হাইকোর্ট।

আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে গত ২৯ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী আইনুন নাহার সিদ্দিকা ও মানজুর-আল মতিন। সে সময় ডিবি হেফাজতে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তির নির্দেশনাও চাওয়া হয় রিটে।

তবে ইতোমধ্যে ওই ছয় সমন্বয়কে ডিবি ছেড়ে দেওয়ায় আবেদনের এই অংশটি আমলে নেয়নি আদালত।

রবিবার আদালতে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। রিটকারীদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারা হোসেন, জেড আই খান পান্না ও অনীক আর হক।

হাইকোর্টের আদেশের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ এবং জনসভা করার অধিকার রয়েছে। মানুষের জীবন সবচেয়ে দামি সম্পদ। মানুষের জীবন ও মর্যাদা রক্ষায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। যেখানে কঠিনভাবে প্রয়োজন কেবল সেখানেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ফোর্স ব্যবহার করতে পারে।

“আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের মর্যাদা ও সম্মান রক্ষা করতে হবে এবং সকলের মানবাধিকার সমন্নুত রাখতে হবে। শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ কোনও প্রকার বৈষম্য করতে পারবে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আইনের বাধ্যবাধকতা মানতে হবে এবং ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ বেআইনিতে (সহিংস, দাঙ্গা) পরিণত হলে পুলিশ সংশ্লিষ্ট আইন ও সংবিধানের অনুচ্ছেদ ব্যবহার শুরু করবে।”

এই ধরনের পরিস্থিতিতে পুলিশকে সংবিধানের ৩২,৩৩(আই) (এম), ৩৬, ৩৭ ও ৩৮, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭-১৩২, পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল (পিআরবি)-এর ১৫৩, ১৫৪, ১৫৫, ১৫৬, ১৫৭ এবং দণ্ডবিধির ৯৬-১০৬ পর্যন্ত অনুসরণ করতে হবে, বলা হয়েছে হাইকোর্টের আদেশে।

হাইকোর্ট আরও বলেছে, “তবে কেউ যদি আইন অমান্য করে তখন পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাবার বুলেট, টিয়ার শেল, ব্যবহার করতে পারে এবং পরে লাইভ রাউন্ড। কিন্তু যদি কোনও অমান্য না হয় বা কোনও দাঙ্গা না হয়, তাহলে লাইভ রাউন্ড ব্যবহার করতে পারবে না।”

আদেশের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “একটি গণতান্ত্রিক দেশে এটা প্রয়োজনীয় যে, পুলিশ আইনের চারটি কর্নার (সংবিধান, পিআরবি, সিআরপিসি ও দণ্ডবিধি) অনুসারে দায়িত্ব পালন করবে এবং সংবিধানের জনগণের দেওয়া অধিকার অনুসারে। আর আবেদনের দ্বিতীয় অংশ (ছয় সমন্বয়কের মুক্তি) এখন অকার্যকর হয়েছে। তাই বিষয়টি আমলে নেওয়া হচ্ছে না।”

আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, “রিট করার একটা রুলস আছে। সেই রুলসে ব্যত্যয়ের কারণে আমরা রিটটি খারিজ চেয়েছি। আদালত আমাদের বক্তব্য শুনে পিটিশনটি সামারিলি খারিজ করে দিয়েছেন। অর্থাৎ সরাসরি এটা খারিজ হয়ে গেছে।”

তবে আদালত কয়েকটি অবজারভেশন দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আদালত বলেছেন, আইন ও সংবিধান অনুসারে প্রত্যেক নাগরিকের শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ করার অধিকার আছে। আদালত বলেছেন, যদি কোনও সভা-সমাবেশ থেকে সহিংসতা অরাজকতা হয় সেক্ষেত্রে পুলিশ সিআরপিসি, পিআরবি অনুসারে অ্যাক্ট (কাজ) করতে পারবে। তবে সতর্কতার সাথে করতে হবে। আইন অনুযায়ী করতে পারবে। আইন যেন মেন্টেইন করে।”

পুলিশ হত্যার ঘটনাগুলো নিয়ে রিটে কিছু ছিল না জানিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “খুলনায় একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে মেরেছে সেটা সম্পর্কে (রিট) আবেদনে কিছু ছিল না। একজন পুলিশকে যাত্রাবাড়ীতে ঝুলিয়ে মারা হয়েছে। একজন নাগরকিকে উত্তরায় মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। সেটা সম্পর্কে তাদের (রিটকারীদের) কোনও বক্তব্য ছিল না।

“আমরা বলেছি যে, কথা বললে সকলের জন্য বলতে হবে। আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওনাদের (আবেদনকারীদের) রাজনৈতিক বিবৃতি দেখেছি। বাংলাদেশের সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী শান্তিপূর্ণ মিছিল, সমাবেশ ও জনসভায় অংশগ্রহণের অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত