গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় দুই হাত হারানো এক ফিলিস্তিনি শিশুর হৃদয়বিদারক ছবি প্রেস ফটো অব দ্য ইয়ার পুরস্কার জিতেছে।
ছবিটি তুলেছেন আলোকচিত্রী সামার আবু ইলফ। তার জন্মও গাজাতেই।
ফিলিস্তিনের এই অঞ্চলে ইসরায়েলি বাহিনীর বোমা বিস্ফোরণে মাহমুদ আজুর নামে নয় বছরের ওই শিশুর এক হাত বিচ্ছিন্ন এবং অন্য হাত বিকৃত হয়ে যায়। চিকিৎসার জন্য তাকে তার পরিবার কাতারের রাজধানী দোহায় নিয়ে যায়।
ইসরায়েলের হামলায় আহত হওয়ার তিন মাস পর এই রাজধানী শহরেই মাহমুদের দেখা পান আলোকচিত্রী ইলফ। তিনি সেখানেই থাকেন।
ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণে দু’হাত হারানো ফিলিস্তিনি এই শিশুর ছবির সঙ্গে সংযুক্ত মন্তব্যে ইলফ লেখেন, “ছেলেকে নিয়ে মাহমুদের মা আমাকে যেসব কষ্টের কথা বলেছিলেন, তার একটি হলো-মাহমুদ যখন প্রথম বুঝতে পারে, তার দুই হাত কেটে ফেলা হয়েছে, তখন সে তার মাকে প্রথম যে কথা বলেছিল তা হলো- আমি তোমাকে এখন কীভাবে জড়িয়ে ধরব?”
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মাহমুদের ছবিটি গাজায় ইসরায়েলের হামলার পরিণতি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, যে হামলা ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিয়েছে; ঘরহীন করেছে হাজার হাজার মানুষকে; ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে গোটা জনপদ।
জাতিসংঘ বলছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় শুরু হওয়া ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত নিহতদের প্রায় অর্ধেকই নারী এবং শিশু।
পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবিটি সম্পর্কে নেদারল্যান্ডসভিত্তিক সংগঠন ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটোর নির্বাহী পরিচালক এল জেইন খুরি এক বিবৃতিতে বলেন, “এটি একটি নীরব ছবি, কিন্তু এর বার্তা অনেক সরব।
“ছবিটি একটি ছেলের গল্প বললেও এর ভেতরে লুকিয়ে আছে এমন এক যুদ্ধের গল্প, যার রেশ থাকবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে।”
আলোকচিত্র প্রতিযোগিতার অন্যতম জুরি লুসি কন্তিসেল্লো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “এ বছর পাঠানো ছবিগুলোর মধ্যে সংঘাত, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তন- এই তিন মূল বিষয় লক্ষ্য করেছেন বিচারকমণ্ডলী।
“আরেকভাবে দেখলে এগুলো টিকে থাকার সংগ্রাম, পরিবার ও সম্প্রদায়ের গল্পও বটে।”
তিনি জানান, মাহমুদের ছবিটির মধ্যে থাকা আলো ও আঁধার, সৌন্দর্য ও যন্ত্রণা-এই বৈপরীত্যই বিচারকদের মনোযোগ কাড়ে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ১৪০টির বেশি দেশ থেকে জমা পড়া প্রায় ৬০ হাজার ছবির মধ্যে মাহমুদের ছবিটি সেরা হিসেবে বেছে নেওয়া হয়।
প্রতিযোগিতায় আরও দুটি ছবি রানার-আপ পুরস্কার পায়।
তার মধ্যে একটিতে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্ত পেরোনোর পর আগুনের পাশে নিজেদের উষ্ণ করছেন চীনা অভিবাসীরা।
অন্যটিতে আমাজনের মরুপ্রায় নদীখাতে হেঁটে হেঁটে এক তরুণ ফিরছেন তার গ্রামে, যেখানে একসময় নৌকায় করে পৌঁছানো যেত।