Beta
শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ২৩ মে, ২০২৫

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা ‘জড়িত’, নতুন করে বিচার দাবি

রাকিন আহমেদ ভুঁইয়া। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
রাকিন আহমেদ ভুঁইয়া। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেড় দশক আগে ঘটে যাওয়া পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নতুন করে বিচারের দাবি তুলেছে নিহত সেনা কর্মকর্তাদের স্বজনরা।

সেই ঘটনায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তৎকালীন সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসও জড়িত ছিলেন বলে তাদের দাবি।

শনিবার ঢাকার একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি জানানো হয়। সেখানে বিডিআরের নিহত প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিন আহমেদ ভুঁইয়াও ছিলেন।

তিনি বলেন, “পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম সরাসরি জড়িত। এখানে তাদের সহায়তা করেছে আরও অনেকে। বিদেশি শক্তিও এখানে জড়িত।

“দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার জন্য পরিকল্পনা করে ভারতের সহযোগিতায় এই হত্যাকাণ্ড চালায় শেখ হাসিনা।”

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পরপরই ফেব্রুয়ারি মাসে সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিডিআরে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছিল। পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহী জওয়ানরা বাহিনীতে কর্মরত সেনা কর্মকর্তাদের নির্বিচারে হত্যা করে।

বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিলসহ ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে বিদ্রোহীরা। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের দুই দিনে মোট ৭৪ জন নিহত হয়।

নিহতদের পরিবারের সদস্যরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

রক্তাক্ত সেই বিদ্রোহের পর বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি করা হয়, বাহিনীর পোশাকও বদলে ফেলা হয়।

বিদ্রোহী জওয়ানদের বিচার বিজিবির আদালতে হয়েছিল। আর পিলখানায় হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় প্রচলিত আদালতে।

চার বছর পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলায় ঢাকার আদালত ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে রায় দেয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক মামলায় এতজনের ফাঁসির রায় আর কখনও হয়নি।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরও ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা।

এই মামলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। সাজা ভোগের মধ্যে ২০১৫ সালে কারাগারে মারা যান তিনি।

বিএনপি তখন থেকে পিলখানা মামলার তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিল। ১৫ বছর পর নিহতদের পরিবারের সদস্যরাও একই অবস্থান জানাল।

পিলখানা হত্যামামলার রায়ে হাইকোর্ট বলেছিল, এই বিদ্রোহের উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে সাংঘর্ষিক অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির মাধ্যমে নতুন সরকারকে বিপদে ফেলা।

বিডিআরের ‘ডাল-ভাত কর্মসূচি’ নিয়ে জওয়ানদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল, তাকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহের সূত্রপাত বলেও রায়ে উঠে এসেছিল।

রক্তাক্ত সেই ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে রাকিন বলেন, “আমরা জানি, কারা হুকুম দিয়েছেন, কারা কারা জড়িত। অথচ আমাদের চোখের সামনে লোক দেখানো ডাল-ভাত তদন্ত হয়েছে। আমরা বুঝেও কিছু বলতে পারিনি। সব কিছু মুখ বুঁজে সহ্য করে যেতে হয়েছে।”

আওয়ামী লীগের শাসনকালে এনিয়ে কথা বলতে পারেননি দাবি করে তিনি এক আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে হুমকি পাওয়ার অভিযোগও করেন।

কথা বলছেন সাকিব রহমান, পাশে লবী রহমান ও রাকিন আহমেদ ভুঁইয়া। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

“আমাকে বলে, ‘আমার নেত্রী তোমার বাবাকে পিলখানায় জবাই করেছে, তুমি কথা বললে তোমাকেও জবাই করা হবে, কোনও কথা বল না, চুপ থাক’।

“এখন ছাত্ররা নির্ভয়ে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই বলতে পারছি, ভারতের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। শুধু শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে এত এত সেনা অফিসারকে মারা হয়েছে।”

সেই বিদ্রোহে বাবা-মাকে হারানো রাকিন বলেন, “আমার বাবা বিডিআর জওয়ানদের অনেক ভালোবাসতেন, তাদের খেয়ালও রাখতেন। এখন আমাদেরও দায়িত্ব বিডিআর সদস্যদের ভালোবাসা। যেসব বিডিআর সদস্য ওই ঘটনায় বিনা অপরাধে জেল খাটছেন, তাদের মুক্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

তখন যেসব সেনা কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন, তাদেরও এই শাস্তি থেকে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান তিনি।

পিলখানায় নিহত শহীদ মেজর কাজী মোছাদ্দেক হোসেনের মেয়ে কাজী নাজিয়া তাবাস্সুম হোসেন বলেন, “আমরা জানি, সেদিন সেনা অফিসারদের বিডিআর জওয়ানরা খুন করেনি। দেশের বাইরে থেকে বাহিনী এসে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। দেশের সেরা অফিসারদের এক জায়গায় এনে এই ম্যাসাকার করা হয়েছে।”

২০০৯ সালের সেই ঘটনাকে ‘বিডিআর বিদ্রোহ’ না বলে হত্যাকাণ্ড বলতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

নিহত সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নানও বলেন, এতদিন নানা ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাদের মুখ বন্ধ রাখা হয়েছিল।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ তদন্তসহ কয়েকটি দাবি এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর ইমেইল করা হয়েছে বলে জানান নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে সাকিব রহমান। রবিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে দেখা করে তার কাছে দাবি-দাওয়া তুলে ধরারও পরিকল্পনা করেছেন তারা।

সেনা তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের দাবি হাফিজের

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সেনা তদন্ত প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য, অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে তিনি এই দাবি জানান।

হাফিজ বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে গতকাল শপথ নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর… তার নেতৃত্বে একটা ইনকোয়ারি হয়েছিল বিডিআর বিদ্রোহ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে। তিনি সঠিকভাবে কারণ এবং সমাধান বর্ণনা করেছেন।

“কিন্তু এই রিপোর্ট আলোর মুখ দেখে নাই। আমরা চাই, তার নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত যে সত্য অনুসন্ধান রিপোর্ট, তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হোক।”

সাবেক সেনা কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, “বিডিআরে মেধাবী চৌকশ সেনা অফিসারদের পোস্টিং দেওয়া হয়েছিল। এদেরকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কারণে তাদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত