পিরোজপুর-২ আসনে নৌকার প্রার্থী জাতীয় পার্টির (জেপি-মঞ্জু) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে হারিয়ে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ।
এই আসনে সাতবারের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মঞ্জু হেরে যাওয়ার পর তার নেতাকর্মীরা জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মহারাজের কর্মী-সমর্থকদের চাপে বেশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
ভান্ডারিয়া, কাউখালী ও নেছারাবাদ উপজেলা মিলে গঠিত পিরোজপুর-২ আসন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার মনোনয়ন চেয়েছিলেন মহারাজ, তবে তা না মিললে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে নামেন। এরপর থেকেই উত্তপ্ত হতে থাকে নির্বাচনী এলাকা।
অভিযোগ উঠেছে, মহারাজের জয়ের পর মঞ্জুর নেতাকর্মীর উপর কয়েক দফা হামলা চালানো হয়েছে। এ অবস্থায় তিন উপজেলার মঞ্জুর কয়েকশ নেতাকর্মীকে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে। হামলা করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের উপরও।
ভান্ডারিয়া উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের জেপির সাধারণ সম্পাদক আলামিন খন্দকার। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘ধাওয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু ডাকুয়ার পুত্রা (আত্মীয়) হন নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ। সেই সূত্র ধরে টুলু ডাকুয়া আমাদের নেতাকর্মীদের উপর হামলা করেছে। হুমকি দিচ্ছে হত্যার। তাই ঢাকায় পালিয়ে বেড়াচ্ছি আমরা ২১ জন। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে হামলার ভয়ে লুকিয়ে রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ জন নৌকার কর্মী।’’
একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জেপির সভাপতি মনির আকন বলেন, ‘‘সব এলাকায় নৌকার কর্মীদের উপর হামলা করা হচ্ছে। যাকে পাচ্ছে তাকে পেটানো হচ্ছে। আমরা ভয়ে এখন ঢাকায় পালিয়ে আছি।
‘‘থানায় জানিয়েও কোনও লাভ হবে না। কেননা মহারাজ সব কিনে নিয়েছে টাকা দিয়ে। হামলার ভয়ে ভান্ডারিয়া থানা যুব সংহতির সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু, ফিরোজ মালকার, জাহিদ হোসেন সাইয়েদ হাওলাদার, ছগির ও মুনানসহ অনেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন। নৌকার পক্ষে নির্বাচন করে নিজ এলাকায় ফিরতে পারছেন না।’’
একই অবস্থা নেছারাবাদের স্বরুপকাঠি থানাধীন জলাবাড়ি ইউনিয়নেও। ওই ইউনিয়নের নৌকার কর্মী কালাচাঁদ মিত্র অক্ষেপ করে বলেন, ‘‘নৌকার পক্ষে কাজ করাই এখন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থীর পক্ষে কাজ করেছি বলে আজ বাড়িতে থাকতে পারছি না। একবার মারধরের শিকার হয়েছি।
‘‘নির্বাচনের পর থেকে মহারাজের লোকজন দুইবার বাসায় এসেছিল খুঁজতে। এরপর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছি। বরিশালে এসে এখন আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নিয়েছি। আমার মতো এই এলাকার অনেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছে। নৌকার আমলে নৌকা করে বাড়ি ঘরে থাকতে পারছি না আমরা।’’
অন্যদিকে নেছারাবাদের আটঘর কুড়িয়ানা, দৈহারী ইউনিয়ন, সোহাগদল ও সারেঙ্গকাঠি ইউনিয়নেও একাধিক হামলার ঘটনা ঘটেছে মঞ্জুর নেতাকর্মীদের উপর। সদ্য নির্বাচিত সংসদ সদস্যর সমর্থকরা এই ঘটনা ঘটাচ্ছেন বলে অভিযোগ।
তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে মহারাজের সমর্থক ভান্ডারিয়ার ধাওয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু ডাকুয়া বলেন, ‘‘এই ধরনের অভিযোগের কোনও ভিত্তি নেই। নির্বাচনে হেরে গিয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা কারও উপর হামলা কেন করব ?’’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন মহারাজ বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও খবর আমার কাছে নেই। অভিযোগ যা করা হচ্ছে, তার কোনও ভিত্তি নেই।’’
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রতিবেদক, সকাল সন্ধ্যা, বরিশাল থেকে]