ভারতের বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী একটি যাত্রীবাহী বিমান ২৪২ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, আরোহীদের মধ্যে ২০৪ জনের মরদেহ ইতোমধ্যে উদ্ধার করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে এক ব্রিটিশ নাগরিককে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে উড্ডয়নের কিছু সময়ের মধ্যেই দুর্ঘটনায় পড়ে বিমানটি।
ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলের বিমানটিতে ২৩২ জন যাত্রী ও ১০ জন ক্রু ছিল।
আশঙ্কা করা হচ্ছিল বিমানটির সব আরোহী মারা গেছে। তবে বিমানটির এক ব্রিটিশ যাত্রী জীবিত রয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনার জিএস মালিক। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তিনি বলেন, ১১এ নম্বর আসনে বসেছিলেন ওই যাত্রী এবং তিনি জীবিত আছেন। হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে।
বিমানের যাত্রীর যে তালিকা কর্তৃপক্ষ প্রকাশ করেছেন, তা থেকে জানা যাচ্ছে যে, ওই ব্যক্তির নাম বিশোয়াস কুমার রমেশ এবং তিনি ব্রিটিশ নাগরিক।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, তারা হাসপাতালে রমেশের সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি সাংবাদিকদের নিজের প্লেনের বোর্ডিং পাসও দেখিয়েছেন। সেখানে তার নাম রয়েছে এবং আসন সংখ্যা উল্লেখ করা আছে ১১এ।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো তার বক্তব্য দেখাচ্ছে, যেখানে তিনি বলছেন, “আকাশে ওড়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই ভীষণ জোরে আওয়াজ হয় আর বিমানটা ভেঙ্গে পড়ে। সব কিছু খুব কম সময়ের মধ্যেই ঘটে যায়।”
আহমেদাবাদের পুলিশপ্রধান জি এস মালিক এর আগে জানিয়েছিলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানটির যাত্রীদের কেউই আর বেঁচে নেই।
তিনি বলেন, যেহেতু বিমানটি একটি আবাসিক এলাকায় বিধ্বস্ত হয়েছে, তাই “সেখানে থাকা কিছু স্থানীয়ও নিহত হতে পারে।”
নিহতের সঠিক সংখ্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি বলে বার্তাসংস্থা এপিকে জানান জি এস মালিক।
বিবিসিকে তিনি জানিয়েছেন, ঘটনাস্থল থেকে এখন পর্যন্ত ২০৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই বিমানের আরোহী কিনা বা যেখানে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে সেখানে ছিলেন কিনা- তা নিশ্চিত নয়।
দুর্ঘটনায় ৪১ জন আহত হয়েছে বলেও জানান আহমেদাবাদের পুলিশপ্রধান।
এক বিবৃতিতে এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আহমেদাবাদ থেকে যুক্তরাজ্যের লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরে যাওয়ার কথা ছিল বিমানটির। এর ফ্লাইট নম্বর ছিল এআই ১৭১। ফ্লাইটটিতে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, একজন কানাডীয় ও সাতজন পর্তুগিজ নাগরিক ছিল।
গ্যাটউইক বিমানবন্দর আল জাজিরাকে জানিয়েছে, স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে (গ্রিনিচ মান সময় ৫টা ২৫ মিনিটে) পৌঁছানোর কথা ছিল বিমানটির।
বিমান চলাচল পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ফ্লাইটরাডার টোয়েন্টিফোর জানিয়েছে, ‘রানওয়ে থেকে ওঠার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে’ ৬২৫ ফুট উচ্চতায় বিমানটির সিগন্যাল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বিধ্বস্ত হয়ে বিমানটি বিমানবন্দরের বাইরের দিকে পড়ে।
স্থানীয়দের ধারণ করা ভিডিওতে বিমানবন্দরের বাইরে কালো ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলী দেখা গেছে। ইতোমধ্যে অগ্নিনির্বাপক যানবাহন ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে আহমেদাবাদের দমকল বিভাগ।
আহমেদাবাদের এক পুলিশ কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা এএনআইকে জানিয়েছেন, চিকিৎসকদের একটি হোস্টেলে আছড়ে পড়ে বিমানটি। পুলিশ ও দমকল বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নগরকর্মীরা কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায়।
ঘটনাস্থল থেকে বিবিসির সংবাদদাতা রক্সি গাড্ডেকার জানিয়েছেন, খুবই মর্মান্তিক দৃশ্য। সবাই দৌড়াদৌড়ি করছে, যাতে যত বেশি সম্ভব মানুষকে বাঁচানো যায়। যেখানে উদ্ধার তৎপরতা চলছে, সে এলাকাটি বিমানবন্দরের খুব কাছে।
চারদিকে শুধুই অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজছে। সব রাস্তা বন্ধ। অগ্নিনির্বাপক দলের কর্মীরা এখনও কিছু জায়গায় আগুন নেভানোর চেষ্টা করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বিবিসিকে জানিয়েছে, তারা হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পাওয়ার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখতে পায়।
রক্সি গাড্ডেকার আরও জানিয়েছেন, বহু মানুষ সেখানে জড়ো হয়েছে। স্বেচ্ছাসেবকরা কাছাকাছি এলাকা থেকে এসে সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করছে। মৃতদেহগুলো সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।