প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে সক্ষমতা বাড়ছে বাংলাদেশের। সেই সঙ্গে বাড়ছে রপ্তানিও। বর্তমানে বিশ্বের ১২৬টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশে উৎপাদিত প্লাস্টিক পণ্য। যার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোও।
এ মুহূর্তে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যগুলোর মধ্যে প্লাস্টিকের অবস্থান ১২তম। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে ১৬ কোটি ৬২ লাখ মার্কিন ডলারের প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। পরের অর্থবছরেই তা বেড়ে দাঁড়ায় ২০ কোটি ৯৮ লাখ ডলারে। অর্থাৎ এক অর্থবছরের ব্যবধানে প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি বেড়েছে ২৬ দশমিক ২৩ শতাংশ।
এখন বছরে সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রপ্তানি করে বাংলাদেশ। বিশ্বের ৬০৯ বিলিয়ন ডলারের প্লাস্টিকের বাজারের তুলনায় যা খুবই সামান্য। এই খাতে রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে চায় সরকার।
সেজন্য দেশের চাহিদা মিটিয়ে আগামী ২০৩০ সাল নাগাদ বছরে ৮৫ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্যসামগ্রী রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৫ হাজার ৩০টি প্লাস্টিক কারখানা আছে। এর মধ্যে ৯৮ শতাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মালিকানায়।
স্থানীয় বাজারে বছরে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকার প্লাস্টিক পণ্য বিক্রি হয়। এরমধ্যে পিভিসি পাইপ বিক্রি হয় ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার গৃহস্থালী সামগ্রী বিক্রি হয়।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই খাতে মোট বিনিয়োগ প্রায় ২০ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। সরকারের বর্তমান পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বিনিয়োগ আরও বাড়বে।
প্লাস্টিক শিল্পখাত নিয়ে যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে তার প্রথম ধাপ হলো ধারাবাহিকভাবে ১৫ শতাংশ হারে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি ২০২৬ সালের আগেই এ খাতের নতুন ব্যবসা উদ্যোগ সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা।
সরকারের লক্ষ্য হলো, ২০২৮ সালের মধ্যে প্লাস্টিক এবং প্যাকেজিং শিল্পের বাজার ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ২০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করা।
গত বছরের ৪ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত প্লাস্টিক শিল্প উন্নয়ন নীতিমালা-২০২৩ তে এসব লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।
সরকারের লক্ষ্যমাত্রাকে উচ্চাভিলাষী বলছেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। তবে তিনি এটাও মনে করেন যে, বৈশ্বিক আর্থিক সংকট শিগগিরই শেষ হলে তা অর্জন অসম্ভব নয়। এই সময়ের মধ্যে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও স্থিতিশীল থাকবে।
নীতিমালা অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে এই খাতে পাঁচ লাখ নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। এই সময়ের মধ্যে মোট জিডিপিতে প্লাস্টিক খাতের অবদান ন্যূনতম দুই শতাংশ বাড়ানো এবং ২০৩০ সালের মধ্যে প্লাস্টিক এবং প্যাকেজিং পণ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে শতভাগ বর্জ্যমুক্ত জাতি (জিরো ওয়েন্ট নেশন) হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ঘোষণাও রয়েছে নীতিমালায়।
এই খাতের জন্য নীতিমালার অধীনে কিছু প্রণোদনাও রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ী, সরকার প্লাস্টিক পার্ক এবং ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের পাশাপাশি মূলধনী সরঞ্জাম, খুচরা যন্ত্রাংশ এবং আনুষাঙ্গিক শুল্কমুক্ত আমদানিতে প্রথম ১০ বছরের জন্য আয়কর অব্যাহতি দেবে।
এছাড়া বন্দরে পণ্য লোডিং, আনলোডিং, স্টোরেজ বা ক্যাপিটাল ইকুইপমেন্ট আমদানিতে রপ্তানি শুল্ক, শুল্ক, কর ও ফিতে বিশেষ ছাড় দেওয়া হবে।
এছাড়াও কাঁচামাল এবং সরবরাহের উপর ট্যাক্স ক্রেডিট দেওয়া এবং মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কর ছাড়ের ব্যবস্থাও থাকবে।
এমনকি জমি-ভিত্তিক টেলিযোগাযোগ, বিদ্যুৎ এবং ইউটিলিটিসহ স্থানীয় পণ্য ও পরিষেবা কেনার উপর ভ্যাট কমানো হবে, বন্ডেড গুদাম সুবিধাও পাবেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
পরিকল্পনায় প্রণোদনার পাশাপাশি দক্ষ জনশক্তি তৈরির বিষয়টিও রয়েছে।
সে অনুযায়ী, ২০২৮ সালের মধ্যে ১০ হাজার ব্যক্তিকে চাহিদাভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
প্লাস্টিক খাতের দক্ষ জনবল সংকট কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে বিপিজিএমইএর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ প্লাস্টিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি (বিআইপিইটি)। এসব প্রতিষ্ঠানে প্লাস্টিক শিল্প খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
প্লাস্টিক পণ্য শিল্পের সক্ষমতা বাড়াতে বুধবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকায় শুরু হচ্ছে ১৬তম আন্তর্জাতিক প্লাস্টিক মেলা। বসুন্ধরায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটিতে (আইসিসিবি) চার দিনব্যাপী চলবে এই আয়োজন।
বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিজিএমইএ) এবং ইয়র্কারস ট্রেড অ্যান্ড মার্কেটিং সার্ভিসেস কোম্পানি লিমিটেড যৌথভাবে এই মেলার আয়োজন করছে।