বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্ব মঞ্চে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের ওপর সংশ্লিষ্টদের জোর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি মুদ্রিত বইগুলোর ডিজিটাল সংস্করণ বের করার বিষয়েও নজর দিতে বলেন।
বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকায় শুরু হওয়া অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। বিকালে বাংলা একাডেমিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি বইয়ের প্রকাশকদের মুদ্রণ প্রকাশনার পাশাপাশি ডিজিটাল বইয়ের প্রকাশক হতেও অনুরোধ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের যুগটা হয়ে গেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির। ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে আমাদের যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা উচিত।”
বইয়ের পাশাপাশি ডিজিটাল প্রকাশনা হলে তা দ্রুত বিদেশের পাঠকদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া সম্ভব বলে মত দেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, অনুবাদের সংখ্যা বাড়ালে অন্য ভাষাভাষীদের কাছেও পৌঁছে দেওয়া যাবে সমৃদ্ধ বাংলা সাহিত্য।
এজন্য মন মানসিকতায় কিছুটা পরিবর্তন এনে আধুনিক প্রযুক্তি রপ্ত করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, “লাইব্রেরিগুলোয় পড়ার জন্য থাকবে আবার অডিও ভার্সনটাও যেন থাকে। এটারও প্রয়োজন আছে। সেটা থাকলে অনেকের সুবিধা, শোনার মাধ্যমে জানতে পারবে।”
তবে বই পাঠের আনন্দ ডিজিটাল ডিভাইসে বই পড়ার মধ্যে পুরোপুরি পাওয়া যায় না বলেও নিজের মত জানালেন।
অনুবাদ সাহিত্যের প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এক সময় অনেকে দাবি তুলেছিলেন অনুবাদ করা যাবে না। কিন্তু আমি অনুবাদের পক্ষে। অনুবাদ যদি না হয় তাহলে এত ভাষা আমরা কোথা থেকে জানব। এক একটা দেশকে জানতে হলে, জাতিকে জানতে হলে, সংস্কৃতিকে জানতে হলে-আমরা ভাষার মধ্যে দিয়েই জানতে পারি।”
অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগৃহীত রচনা: দ্বিতীয় খন্ড’ এবং ‘প্রাণের মেলায় শেখ হাসিনা’ (বাংলা একাডেমিতে শেখ হাসিনার গত ২০ বারের ভাষণের সংকলন) শীর্ষক দুইটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।
এরপর সাহিত্যে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য ১৬ জনের হাতে তুলে দেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩।
পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন : শামীম আজাদ (কবিতা), ঔপন্যাসিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীর ও সালমা বাণী (কথা সাহিত্য), জুলফিকার মতিন (প্রবন্ধ/গবেষণা), সালেহা চৌধুরী (অনুবাদ), নাট্যকার মৃত্তিকা চাকমা ও মাসুদ পথিক (যৌথভাবে নাটক ও নাট্য সাহিত্য), তপঙ্কর চক্রবর্তী (শিশু সাহিত্য), আফরোজা পারভিন এবং আসাদুজ্জামান আসাদ (মুক্তিযুদ্ধের উপর গবেষণা), সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল এবং মো. মজিবুর রহমান (বঙ্গবন্ধুর উপর গবেষণা), পক্ষীবিদ ইনাম আল হক (পরিবেশ/বিজ্ঞান ক্ষেত্র), ইসহাক খান (জীবনী) এবং তপন বাগচী ও সুমন কুমার দাস (যৌথভাবে লোক কাহিনী)।
উদ্বোধন ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথা সাহিত্যক সেলিনা হোসেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে বইমেলা ঘুরে দেখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।