মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই মূল্যস্ফীতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন রমজান মাসে যেন দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং ওই সময়ের প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ যেন স্বাভাবিক থাকে সেই ব্যাপারে কাজ করতেও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে এখনই কর্মপরিকল্পনা নিতেও বলেছেন।
এসব কাজে প্রয়োজনে তার পরামর্শও নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে এসব কাজের ফলাফল দেখতে চান বলেও সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছেন।
দ্বাদশ সংসদের নতুন মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক শেষে সোমবার (১৫ জানুয়ারি) বিকালে সচিবালয়ে ব্রিফিং করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। সেখানেই সাংবাদিকদের বৈঠকের নানা তথ্য জানান তিনি।
সচিব বলেন, “আজকের বৈঠকে একটি মাত্র এজেন্ডা ছিল। সেটা হচ্ছে সামনে জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন বসবে। অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দিয়ে থাকেন। নিয়ম অনুযায়ী সেই ভাষণ মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয়। আজ সেই অনুমোদন হয়েছে।”
ব্রিফিং থেকেই জানা যায়, ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি পূরণে নেওয়া কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ মনিটরিং নিশ্চিত করার ওপর জোর দিয়েছেন শেখ হাসিনা। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিার সরকারের জিরো টলারেন্স অবস্থানের বিষয়টি আবারও পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি। বলেছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো কৌশল ঠিক করলেও প্রয়োজনে তার সঙ্গে পরামর্শ করে নেবে। আর এসব ক্ষেত্রে ‘রেজাল্ট চান’ বলেও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
মো. মাহবুব হোসেন আরও বলেন, কৃষি উৎপাদন যেন কোনও অবস্থাতেই ব্যহত না হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রয়োজন অনুসারে আরও বেশি কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগার তৈরিরও নির্দেশনা দিয়েছেন।
স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট গর্ভমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমিকস এবং স্মার্ট পাবলিক; স্মার্ট বাংলাদেশের এই চারটি স্তম্ভকে ভিত্তি করে প্রধানমন্ত্রী সব মন্ত্রণালয়কে পরিকল্পনা নিতে বলেছেন, জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। যে মন্ত্রণালয়ের যে অংশ এসব স্তম্ভের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে সে অনুযায়ী পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন করার নির্দেশও দিয়েছেন।
এছাড়া সারাদেশে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেইসঙ্গে জনগণ যেসব প্রকল্পের সরাসরি উপকারভোগী হবে সেগুলোও দ্রুত শেষ করতে বলেছেন।
সচিব আরও জানান, নতুন প্রকল্প নেওয়ার আগে সেটি কীভাবে জনগণের কল্যাণে লাগবে তা খুব ভালোভাবে পরীক্ষা করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সম্ভাব্যতা যাচাই করে প্রকল্প প্রণয়ন এবং সে অনুযায়ী বাস্তবায়ন করতে বলেছেন। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবহিদিতার কথাও উল্লেখ করেছেন।
সরকারি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য জনপ্রশাসনকে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনার পাশাপাশি নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে সাফল্যর যে ধারা তৈরি হয়েছে সেটি যেন কোনও অবস্থাতেই ব্যহত না হয় সেদিকেও নজর দিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
রপ্তানি বহুমুখীকরণের নির্দেশনাও এসেছে বৈঠক থেকে।
সচিব জানান, নতুন বাজার অনুসন্ধান ও সে বাজারে প্রবেশের জন্য কিভাবে সহায়তা করা যায় সেটি খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশেষ করে চামড়া ও চামড়াজাত, পাট ও পাটজাত এবং কৃষিজাত পণ্যকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। প্রয়োজনে এসব খাতকে পোশাক খাতের মতো সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নিতেও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বসেছিল নতুন মন্ত্রিসভার এ বৈঠক। এতে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা। সভার শুরুতে মন্ত্রিসভার জ্যেষ্ঠ দুই সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
মন্ত্রীদের পাশাপাশি কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীও আমন্ত্রিত হিসেবে প্রথম দিনের বৈঠকে অংশ নেন।
সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে প্রথম বৈঠকের প্রচলিত রীতির কথা জানান সচিব।
তিনি বলেন, “প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রী তার সহকর্মীদের আনুষ্ঠানিকভাবে একসঙ্গে পান। তখন প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে একটি প্রারম্ভিক বক্তব্য দেওয়া হয়। যেহেতু সরকারের প্রথম বছরের প্রারম্ভিক সভা, সেই উপলক্ষে তার তরফ থেকে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেওয়া হয়। এবারও সেটিই দিয়েছেন তিনি।”