প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও বৈশ্বিক মানদণ্ডে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।
তিনি বলেন, “সশস্ত্র বাহিনী আমাদের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আমার বাবার হাতে গড়া সশস্ত্র বাহিনীকে আরও উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের করার জন্য আমরা এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট (পিজিআর) সদর দপ্তরে এর ৪৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘ একুশ বছর পর ’৯৬ সালে সরকার গঠনের উল্লেখ করে বলেন, “যে সশস্ত্র বাহিনী আমার বাবার হাতে গড়া তাকে আরও উন্নত করা, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করার সেই পদক্ষেপ আমি নিয়েছিলাম পাশাপাশি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নতি যাতে হয় সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়ে পরিকল্পিত ভাবে কাজ করা শুরু করি।”
বাসস জানিয়েছে, শেখ হাসিনা, ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর সামরিক স্বৈরশাসন এবং বার বার ক্যু এবং এর ওজর তুলে মুক্তিযোদ্ধা সেনা অফিসার হত্যা এবং প্রবাসে তার ৬ বছর রিফিউজি জীবন কাটাতে বাধ্য হওয়ার পর ’৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হলে একরকম জোর করেই দেশে ফিরে আসার প্রেক্ষাপট স্মরণ করে ’৮১ সালের ৭ জুন ৬ দফা দিবস পালনকালে তার প্রথম বক্তৃতার কথাও এখানে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “সেদিন আমি বলেছিলাম যে আমি সশস্ত্র বাহিনীতে আর কোন বিধবার কান্না শুনতে চাই না। সন্ত্রানহারা পিতার বা পিতাহারা সন্তানের কান্না শুনতে চাই না। তখন থেকে আমার প্রচেষ্টাই ছিল যারা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে সেখানে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা এবং সেটাকে আরও উন্নত সমৃদ্ধশালী করা। যেখানে সংঘাত নয় শান্তি থাকবে।”
তখন থেকে একটাই চেষ্টা ছিল যে দেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সে দেশ কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর আরও উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য ’৯৮ সালে ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজ এবং ওয়ার কলেজ’ আমি গড়ে তুলি। মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি, ’৯৯ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস সাপোর্ট অপারেশন ট্রেনিং (বিপসট), আমর্ড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজ তখন থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়। পাশাপাশি ২০০০ সালে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীতে নারী অফিসার অন্তর্ভূক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেছে। কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট একটি অত্যন্ত সুসংহত বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র এবং নানা প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে প্রমত্তা পদ্মার বুকে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখি সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে জাতির পিতার ৭ মার্চের ভাষণের অমোঘ মন্ত্র ‘আমাদের কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’র উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সেটা আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি যে কারও রক্তচক্ষুকে বাংলাদেশ ভয় পায় না। আমরা ইচ্ছা করলে নিজেরাও পারি। এদেশকে কেউ আর পেছনে টানতে পারবে না। অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে।”
তিনি বলেন, বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে। কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়। ২০৪১ সাল নাগাদ জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ তথা আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলারও দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিজিআর সদস্যরা দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান, জাতির পিতার পরিবার-সকলের নিরাপত্তায় বিরাট অবদান রেখে যাচ্ছেন। তাছাড়া, বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
পিজিআর সদস্যদের উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালনকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি জানি আমার জীবনটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই, এখানে যারা দায়িত্ব পালনে আসেন তারাও ঝুঁকি নিয়েই এখানে আসেন।”
তিনি বলেন, নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলনের মাধ্যমে এই গার্ড রেজিমেন্ট আগামীতে আরও দক্ষতা অর্জন করবে।
২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকাতে বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের ধারাটা সূচিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে উৎক্ষেপণ করে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড সেবা ও ইন্টারনেট সংযোগ, বিনামূল্যে মাধ্যমিক পর্যন্ত পাঠ্যপুস্তক, সাধারণ বৃত্তি-উপবৃত্তি এবং গবেষণা ও উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থার পাশাপাশি দেশটাকে আর্থসামাজিকভাবে আরও উন্নত করতে সক্ষম হয়েছে। যারা স্বাধীনতার সময় বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে কি হবে এটাতো বটমলেস বাস্কেট হবে-সেটা আর তারা বলতে পারে না। বরং বলতে হয় বাংলাদেশ একটি উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে আমরা ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি।”
সরকার তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বেকারত্বের হার কমে ৩ দশমিক ২ ভাগে দাঁড়িয়েছে। সেখানেও বহুমুখি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আছে। দারিদ্রের হার ২০০৬ সালে থাকা ৪১ দশমিক ৬ ভাগ থেকে নামিয়ে ১৮ দশমিক ৭ ভাগে এনেছি।
তিনি বলেন, যদি করোনা মহামারি না হতো, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না হতো, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন না হতো, আর মুদ্রাস্ফীতি না হলে আমাদের লক্ষ্য ছিল এই দারিদ্রে হার আরো ২ শতাংশ কমানোর। কারণ, যে বড় দেশ বলেছিল আমরা বাস্কেট কেস হব সেখানে দারিদ্রের হার ১৭ শতাংশ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের দারিদ্রের হার আরও কমিয়ে আনার জন্যই সবাইকে সবক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা সাধনের অনুরোধ করেন।
গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “আমি আন্তর্জাতিকভাবে যখন যেখানে গেছি, এর প্রতিবাদ করেছি, এখনও করে যাচ্ছি। আমরা সবসময় ফিলিস্তিনীদের পক্ষে আছি। সবসময়ই আমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করি এবং ন্যায়ের সঙ্গে থাকি।”