দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পর পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন শেখ হাসিনা। বিশ্বে এখন যারা বেঁচে আছেন, তার চেয়ে বেশিবার এই দায়িত্ব কি কেউ পেয়েছেন? খুঁজলে নগণ্য সংখ্যাই মিলবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় মেয়ে শেখ হাসিনার সরকার প্রধান হিসেবে যাত্রার শুরুটা হয়েছিল ১৯৯৬ সালে। এরপর ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদে ফেরেন তিনি। তখন থেকে টানা ১৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তার আগের পাঁচ বছর হিসাব করলে এরইমধ্যে ২০ বছর হয়ে গেছে তার প্রধানমন্ত্রিত্বের। ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনার রয়েছে দীর্ঘ সময় রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এবং বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী বিষয়ে তার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে ‘হোয়াইটবোর্ড’ ম্যাগাজিনের সর্বশেষ সংখ্যায়। ‘হোাইটবোর্ড’ আওয়ামী লীগের গবেষণা উইং সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) নীতি নির্ধারণী বিষয়ক সাময়িকী। ইংরেজিতে প্রকাশিত সাক্ষাৎকারটি ভাষান্তর করে প্রকাশ করা হলো বাংলাভাষী পাঠকের জন্য।
হোয়াইটবোর্ড : আপনার বেড়ে ওঠার সময় নিয়ে বলুন- সরকার ও রাজনীতির বিষয়ে আপনার শৈশবের ভাবনাগুলো কেমন ছিল?
শেখ হাসিনা : সত্যি কথা বলতে কি, আমি কখনোই ভাবিনি যে আমি প্রধানমন্ত্রী হতে পারব। আমি ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলাম, কিন্তু সারাদেশের দায়িত্ব নেওয়ার বিষয়টি আমার মাথায় আসেনি। কীভাবে একটি দেশের উন্নয়ন করা যায় বা কীভাবে মানুষের জীবন উন্নত করা যায়- সেগুলো সম্পর্কে আমি সত্যিই সচেতনভাবে চিন্তা করিনি।
কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারি যে আমার বাবার আশেপাশে থাকা মানে, অবচেতনভাবে ছোটবেলা থেকেই আমার মনে (রাজনীতি ও দেশ ভাবনার) একটি ব্লুপ্রিন্ট তৈরি হয়েছিল। রাজনীতি তার জীবনের একটি সর্বাঙ্গীণ অংশ ছিল এবং এটি এমন কিছু যার মধ্য দিয়ে আমরা বড় হয়েছি। আমরা দিনের সংবাদপত্র নিয়ে তার চারপাশে জড়ো হতাম এবং সারাবিশ্বে এবং আমাদের নিজেদের আঙ্গিনায় কী ঘটছে সে সম্পর্কে তার কথা শুনতাম। অনেক প্রশ্ন, অনেক দীর্ঘ আলোচনা! এভাবেই আমাদের দিন শুরু হতো।
আমরা গ্রামে অনেক সময় কাটিয়েছি। তিনি আমাদের কাছে তুলে ধরতেন যে লোকেরা কীভাবে ভোগান্তির শিকার হয়। কারণ তাদের জীবনে খাদ্য, বস্ত্র, চাকরি, বাসস্থান এবং স্বাস্থ্যসেবা, মর্যাদাপূর্ণ জীবনের মতো মৌলিক অধিকার ছিল না।। তিনি সর্বদা কীভাবে জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হবে সে সম্পর্কে কথা বলতেন। তার চিন্তাভাবনা এবং ধারণাগুলো আমাকে আজও পরিচালিত করে।
হোয়াইটবোর্ড : দেশে ফেরার সময় প্রধান চ্যালেঞ্জ কী ছিল?
শেখ হাসিনা : আমি যখন আওয়ামী লীগের নেতা নির্বাচিত হয়ে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে আসি, তখন এটা স্পষ্ট হয় যে রাষ্ট্র আর তার জনগণের সেবা করছে না। ১৯৭৫ সাল থেকে দেশটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল। রাষ্ট্রযন্ত্র অভিজাতদের দখলে ছিল, একটি ছোট গোষ্ঠীর সুবিধার জন্য নীতি তৈরি করেছিল। জনগণের কাছে কোনও জবাবদিহিতা ছিল না। জনগণেরও কথা বলার জায়গা ছিল না। এসব জিনিসগুলো পরিবর্তন করতে হয়েছিল।
হোয়াইটবোর্ড : সংকটে থাকা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব যখন আপনি নিলেন, বাংলাদেশের বয়স এক দশকও হয়নি। সে সময় থেকে পরবর্তী দিনগুলো জন্য আপনি কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছেন?
শেখ হাসিনা : ৮০ দশকের গোড়ার দিকে যখন আমি একটি প্রগতিশীল জোটের নেতৃত্ব দিতে শুরু করি তখন আমি একজন তরুণ রাজনীতিবিদ ছিলাম। আমি বাংলাদেশের ভেতর এবং বাহির জানার বিষয়ে আরও আগ্রহী ছিলাম। নিজের জন্য দেশটি দেখতে চেয়েছিলাম। আমাদের নীতির অগ্রাধিকার নির্ধারণের জন্য আমি আমার দলের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসেছি। মানুষের চাহিদা বোঝার জন্য আমাকে তাদের কাছে যেতে হয়েছে, তাদের সংগ্রাম দেখতে হয়েছে। সর্বোপরি, আমি কীভাবে কল্যাণমূলক নীতিগুলো তৈরি করব, যদি আমি না জানি যে সেগুলো কাদের জন্য? আমি আরামে বসে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি।
আওয়ামী লীগ বরাবরই একটি তৃণমূল দল, যার সর্বত্র সদস্য রয়েছে। আমি দেশের প্রতিটি কোণায় যেতে শুরু করি, যদিও বেশিরভাগ জায়গায় রাস্তা ছিল না। আমি হেঁটেছি, ছোট ছোট নৌকা নিয়েছি, রিকশা-ভ্যানের পিঠে চড়েছি, মূলত দুর্গম স্থানে পৌঁছানোর জন্য যা যা দরকার তাই করেছি। দেশের প্রতিটি জেলায় ঘুরেছি। আমি আমাদের জনগণের কষ্টগুলো সরাসরি গিয়ে দেখেছি । এটি আমার অন্তর্দৃষ্টি খুলে দিয়েছে, যা আমি অন্য কোথাও পাইনি।
হোয়াইটবোর্ড : বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিপথের দিকে তাকালে, কোনটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে বলে আপনি মনে করেন?
শেখ হাসিনা : রাজনীতির সঙ্গে নীতিকে যুক্ত করতে হবে। আমার রাজনৈতিক সংগ্রামের কারণে আমি একজন নীতিনির্ধারক। দেশের অগ্রগতির পথে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ১৯৭০ ও ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকের সামরিক স্বৈরশাসকরা। সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ ছাড়া আপনি ভালো নীতি গড়ে তুলতে পারবেন না।
বিষয়টি হচ্ছে, জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া, একটি দেশ কেবল উন্নয়ন করতে পারে না। নীতিতে জনগণের দাবিকে প্রতিফলিত করতে হবে। এটি আমাদের দেশের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমি মৌলিক সাংবিধানিক অধিকার, বিশেষ করে ভোট প্রদানের জন্য আমার প্রচেষ্টাকে উৎসর্গ করেছি। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ছিল আমাদের অন্যতম বড় অর্জন।
হোয়াইটবোর্ড : একজন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে, আপনার প্রথম দিকের নীতিগত অগ্রাধিকারগুলোর একটি কী ছিল?
শেখ হাসিনা : কিছু অর্জন করতে হলে একজন সিদ্ধান্ত গ্রহণকারীকে নীতিগত অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমার অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি ছিল গৃহহীনতা নির্মূল করা। গৃহহীনতার অনেক কারণ রয়েছে: জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, স্বামী পরিত্যক্তা ও দারিদ্র্য এমন সব বিষয়।
আমার প্রশাসন জনসাধারণকে সরকারি তহবিল থেকে বাড়ি দেওয়ার একটি সহজ নীতির মাধ্যমে এই সমস্যার মোকাবিলা করেছে। অন্য কথায়, আমরা গৃহহীনদের বিনামূল্যে বাড়ি দিয়েছি। আমরা তিন দশক ধরে এই নীতি বাস্তবায়ন করেছি এবং আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে। যখন কারও নিজস্ব ঠিকানা থাকে, তখন তা তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
হোয়াইটবোর্ড : আপনার নাম প্রায়শই ‘উন্নয়নের রাজনীতি’ শব্দটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। এই শব্দটির ব্যাখ্যা কী আপনার কাছে?
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে একটি সহজ উত্তর দিই। ভালো রাজনীতি ছাড়া ভালো নীতি হতে পারে না। ভালো রাজনীতির জন্য পাকা রাজনীতিবিদ প্রয়োজন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদরা দেশকে অন্যভাবে বোঝেন, তাদের বাস্তবতা সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা রয়েছে। নীতির দিক দিয়ে উন্নয়ন প্রায়শই শুধুমাত্র অর্থনৈতিক পরিভাষায় বোঝা যায়। কিন্তু আমরা যারা রাজনীতি করি, আমরা দেশকে নিয়ে ভাবি আরও স্বজ্ঞাতভাবে।
রাজনীতি ব্যক্তিগত লাভ এবং ক্ষমতার অপব্যবহার জন্য হওয়া উচিত নয়, যা আপনি একজন সামরিক স্বৈরশাসক বা বিচ্ছিন্ন অভিজাতদের মধ্যে দেখতে পাবেন। এটি একটি দেশের উন্নয়ন এজেন্ডাকে লাইনচ্যুত করতে পারে। বাংলাদেশে, আপনি পার্থক্য দেখতে পাচ্ছেন। কারণ দেশটি উভয় পদ্ধতির সরকারই দেখেছে।
ফিরে যাওয়া যাক ১৯৭২ সালে। বাংলাদেশের প্রথম বছর। এটি একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ ছিল। মাথাপিছু আয় ছিল ১০০ ডলারের নিচে। আওয়ামী লীগ ছিল দেশব্যাপী তৃণমূল মানুষের সাথে গভীর যোগাযোগ স্থাপন করা একটি রাজনৈতিক দল। একজন মাঠের রাজনীতিবিদ শেখ মুজিবুর রহমান তখন সরকারের দায়িত্ব নেন। তার সরকারকে প্রথম থেকেই শুরু করতে হয়েছিল। তাদের মূলত একটি সার্বভৌম দেশ গড়ে তুলতে হয়েছিল, যা ছিল পূর্বে পাকিস্তানের একটি অবহেলিত প্রদেশ। সমস্ত অবকাঠামো পুনর্গঠন, নতুন প্রতিষ্ঠান গঠন এবং লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত লোককে পুনরায় একত্রিত করার মতো কাজ ছিল তাদের দীর্ঘ করণীয় কর্ম তালিকায়। এখানেই রাজনীতির বিকাশ ঘটেছে। একজন সত্যিকারের জনপ্রতিনিধিই পারে এমন অসম্ভব চ্যালেঞ্জ নিতে। মুজিবের মতো একজন রাজনীতিবিদ যখন এ ধরনের দায়িত্ব পান, তিনি তা ভালোভাবে করতে পারেন। আওয়ামী লীগের মতো নেটওয়ার্ক থাকায় তিনি দ্রুত জনগণের চাহিদা মূল্যায়ন করতে পারতেন। ১৯৭৫ সালে মাত্র তিন বছরের মধ্যে তিনি জনগণের মাথাপিছু আয় ২৫০ ডলারের ওপরে উন্নীত করতে সক্ষম হন। ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যার পর, পরবর্তী সংবিধান বহির্ভূত সামরিক জান্তা জনগণের জীবনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়নি- কারণ এতে তৃণমূল বা সমাজকল্যাণের আদর্শের অন্তর্দৃষ্টি ছিল না। ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত জনগণের আয় মূলত স্থবির ছিল। জনগণের একজন সত্যিকারের প্রতিনিধির একটি দেশের উন্নয়নের অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে, যা একজন অভিজাত সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী করতে অক্ষম। উন্নয়ন একটি রাজনৈতিক এজেন্ডা। উন্নয়নকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা যাবে না।
হোয়াইটবোর্ড : আমি নিশ্চিত যে আপনি বিষয়টি যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তা নিয়ে সমালোচনা থাকবে-
শেখ হাসিনা : অন্যরা কীভাবে এটি ব্যাখ্যা করেছে তা আমি সত্যিই নিশ্চিত নই। তবে আমি জানতে আগ্রহী।
হোাইটবোর্ড : আপনি একটি বাজারমুখী নীতি গ্রহণ করেছেন, আবার সমাজতন্ত্রকেও নীতি হিসেবে রেখেছেন, যা আপনার পিতা মুজিব গ্রহণ করেছিলেন। একইসঙ্গে এই দুটি নীতির মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব আছে কি? যদি না থাকে তাহলে আপনি কীভাবে একটি ভারসাম্য অর্জন করতে সক্ষম হলেন?
শেখ হাসিনা : মুজিব একজন সামাজিক গণতন্ত্রী ছিলেন, যিনি বাংলাদেশকে সমাজকল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করেছিলেন। তিনি সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্য ও বাসস্থানের মতো মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে উন্নত করার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তিনি ‘কাউকে পিছিয়ে না রাখ’ ব্যবস্থায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি আরও স্পষ্ট করেছিলেন যে বাংলাদেশ অন্য কোথাও থেকে কোনও ‘মতবাদ’ আমদানি করবে না। অন্য কথায়, আমাদের নিজস্ব মতবাদ অনুসারে সবকিছু পরিচালিত হবে। এই সূক্ষ্ম বিষয়গুলো বোঝার জন্য আপনাকে আমাদের ইতিহাস নিয়ে অনুসন্ধান করতে হবে।
১৯৭২ সালে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের শিল্পভিত্তি ছিল ধ্বংসস্তূপ। প্রায় সব শিল্পের মালিকানা ছিল পাকিস্তানি শাসক শ্রেণির, যারা তাদের কার্যক্রম এ দেশ থেকে গুঁটিয়ে নিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর সরকার সমস্ত শিল্পকে জাতীয়করণ করে, কারণ সরকার ছিল একমাত্র নিয়ন্ত্রক। এতে দেশে উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং অসংখ্য মানুষ চাকরির সংস্থান হয়েছে। এরপর প্রশাসনও শিল্পগুলোকে বিদেশিকরণ শুরু করে। এই বিষয়টি সমালোচকরা প্রায়শই উপেক্ষা করে।
মূলত, সরকারি ও বেসরকারি উভয় খাতই অর্থনীতিকে চালিত করেছিল। এই পাবলিক-প্রাইভেট ইন্টারপ্লে বাংলাদেশের সংবিধানে নিহিত ছিল, যা তিনটি ধারার অধীনে অর্থনৈতিক মালিকানা নির্ধারণ করে- সরকারি, বেসরকারি ও সমবায়। এই ট্রাইফেক্টা ফর্মুলাটি দেশের সেই শুরুর দিনগুলোতেই প্রণয়ন করা হয়েছিল।
আমার কাছে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণই ছিল আমার ‘সমাজতন্ত্র’-এর সংস্করণ। জনগণের সেবা করার জন্য দলকে সময় ও বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে পরিবর্তন করতে হয়েছে। এটা করে, আমি বিশ্বাস করি আমি আমার বাবার নির্দেশ অনুসরণ করেছি; আমি কোনও দ্বন্দ্ব দেখি না।
হোয়াইটবোর্ড : চিন্তাধারার পরিবর্তন কীভাবে এল?
শেখ হাসিনা : আসলে, আমরা বিশ্বের বাকি অংশে যা ঘটছে তা উপেক্ষা করতে পারি না। আমি সোশালিস্ট ইন্টারন্যাশনালের ফোরামের এক আলোচনায় যোগ দিয়েছিলাম। এটি বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর একটি বৈশ্বিক প্ল্যাটফর্ম এবং সেখানে মিশ্র-অর্থনীতির মডেলের যোগ্যতা নিয়ে অনেক আলোচনা হতো। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাতের ভূমিকা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছিল এখানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এটি গৃহীত হয়েছিল এবং মনে করা হতো বিষয়টি একটি বড় ভূমিকা পালন করবে। সোশালিস্ট ইন্টারন্যাশনালও আনুষ্ঠানিকভাবে এই অবস্থানকে সমর্থন করেছে। সময়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ইউরোপের আয়রন কার্টেনও হ্রাস পেতে শুরু করে। এদিকে বাংলাদেশে অর্থনীতি উন্মুক্ত করার বিষয়ে বিতর্ক ছিল। আমরা তখন বিরোধী দলে ছিলাম।
আমার মনে আছে যুক্তরাজ্যে আমার এক সফরের সময় সেই সময়ের লেবার পার্টির নেতা নিল কিনকের সাথে এই প্যারাডাইম পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা হাউস অব কমন্সে ছিলাম এবং সাবেক লেবার পার্টির নেতা এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসনও আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন। হ্যারল্ডের দৃষ্টিভঙ্গি খুব স্পষ্ট ছিল যে, ‘এই ৪০ বছরের পুরোনো অর্থনৈতিক চিন্তা আর কাজ করবে না।’
একই সময়ে, আমি নীতি সংস্কারের পুনর্বিবেচনার জন্য একটি অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটি গঠন করি। এটি আওয়ামী লীগের মধ্যে নীতিগত পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে। এজেন্ডা ছিল নতুন যুগের জন্য একটি প্রগতিশীল রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করা।
এটা সহজ ছিল না, আমাদের অনেক বিতর্ক ছিল। কিন্তু আমরা অবশেষে একটি মিশ্র অর্থনীতি নীতির দিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে ১৯৯২ সালে একটি উন্মুক্ত অর্থনীতির পদ্ধতি গ্রহণ করি। এ নিয়ে বিতর্ক চলার মধ্যে ৯০ দশকের মাঝামাঝি আমি প্রধানমন্ত্রী হই। এই সময় খুব যথাযথ ছিল। আমরা এরপর দ্রুত আমাদের কিছু ধারণা সরকারি নীতি হিসেবে গ্রহণ করেছি।
হোয়াইটবোর্ড : দলের এই অর্থনৈতিক মূল্যবোধের পুনর্বিন্যাস করার সময় আপনি কি কোনও প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছেন?
শেখ হাসিনা : আমার দলের মধ্যে কিছু মতাদর্শী একটি মিশ্র অর্থনীতি মডেলের তীব্র আপত্তি জানিয়েছিলেন। এটি একটি ধীর প্রক্রিয়া ছিল, মাঝে মাঝে খুব কঠিন। আমাদের মধ্যে অনেক উত্তপ্ত বিতর্ক এবং অভ্যন্তরীণ দলীয় আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু আমি আমার দলের মধ্যে থেকে আমার সংস্কার এজেন্ডার পক্ষে সমর্থন আদায় করতে পেরেছিলাম। জনগণের আয় ও জীবনযাত্রার মান বাড়াতে আমাদের সর্বোত্তম নীতির প্রয়োজন ছিল। বাংলাদেশ একটি প্রাচীন পদ্ধতিকে কঠোরভাবে আঁকড়ে থাকার মতো অবস্থায় নেই। রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে দূরদর্শী নীতি গ্রহণ করতে হয়।
হোয়াইটবোর্ড : অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ কী শিখতে পারে?
শেখ হাসিনা : এটা একটি মজার প্রশ্ন। আপনি বাংলাদেশের ইতিহাস জানলে দেখবেন যে এই দেশের মডেল গড়ে উঠেছে নির্দিষ্ট দেশীয় মূল্যবোধ এবং নীতি ধারাবাহিকতার ওপর ভিত্তি করে। দেশের প্রতিষ্ঠাতা মুজিব একবার বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের শাসন চলবে শুধু আমাদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে।’ অন্য কথায়, বাংলাদেশ অন্য দেশের উন্নয়ন ফর্মুলা আমদানি করতে পারে না।
আমাদের নীতি-নির্ধারকদের আমাদের কৌশলগত অবস্থান, আমাদের ভূপ্রকৃতি, আমাদের জনগণের চাহিদা, আমাদের ইতিহাস, আমাদের পরিবেশ এবং আমাদের সম্পদের মতো বিষয়গুলো বুঝতে হবে। উন্নয়নের জন্য বিদেশি পরামর্শ এখানে কখনই কাজ করে না। এর মানে এই নয় যে, আমরা সারাবিশ্বের উন্নয়নে চোখ বন্ধ করে রাখি। বিভিন্ন দেশের ভালো চর্চাগুলো আমাদের প্রয়োজনের জন্য শিখতে হবে।
হোয়াইটবোর্ড : আপনারা কোন বিদেশি নীতি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন?
শেখ হাসিনা : স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে দারুণ সামাজিক কল্যাণ ব্যবস্থা রয়েছে। তারা তাদের জনগণের অর্থনৈতিক অধিকার রক্ষার একটি বড় উদাহরণ। পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর দুর্দান্ত পরিবহন অবকাঠামো রয়েছে, যা তারা মেধাসম্পন্ন নীতির মাধ্যমে বাস্তবায়ন করেছে।
স্বাস্থ্য খাতের একটি উদাহরণ দিই। আশির দশকে যখন আমি প্রায়শই যুক্তরাজ্যে যেতাম, আমি লক্ষ্য করেছি যে তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রতিটি পাড়ায় পৌঁছেছে। বাড়ির কাছাকাছি, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে একই ধরনের স্বাস্থ্য নেটওয়ার্ক বিদ্যমান। এই সর্বজনীনভাবে অর্থায়ন করা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সর্বোত্তম প্রাথমিক সেবা প্রদান করে। এগুলোর স্থানীয় চাহিদার জন্যও খুব প্রাসঙ্গিক। তাই, আমি কমিউনিটি ক্লিনিক নীতি গ্রহণ করে বাংলাদেশের জন্য তাদের সিস্টেমগুলোকে গ্রহণ করেছি। মূল ধারণা ছিল সবার কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া।
এটিকে টেকসই করার জন্য, স্থানীয়দের মালিকানা প্রদানের মাধ্যমে এই ব্যবস্থাকে একটি পাবলিক-প্রাইভেট অংশীদারত্ব হিসাবে দাঁড় করানো হয়েছে। স্থানীয়রা জমি দেবে, ফার্মা কোম্পানিগুলি ওষুধ সরবরাহ করবে এবং সরকার পরিষেবাগুলো সহজতর করবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলি তৃণমূলে স্বাস্থ্যসেবার একটি নতুন স্তর যুক্ত করেছে, যা সামগ্রিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বোঝা কমিয়েছে।
হোয়াইটবোর্ড : বিদেশি অংশীদাররা দুটি প্রধান হাতিয়ার ব্যবহার করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে- সাহায্য ও নীতির ব্যবস্থাপত্র। দেশ কি এই নির্ভরতা কাটিয়ে উঠছে?
শেখ হাসিনা : বিদেশি নির্ভরতা কমেছে এবং এটি আমার সরকারের একটি প্রচেষ্টার কারণেই হয়েছে। এই নির্ভরতার শেকড় অনেক গভীরে ছিল। এই সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে আমাদের প্রথমে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হয়েছে। এই প্রচেষ্টায় আপনার নিজেকে সমান হিসাবে দেখা শুরু করতে হবে। এই সমস্যাগুলো যথাযথ সমাধান করা প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও অর্থ এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
যখন অন্যান্য সরকার উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বাজেট প্রণয়ন করত, তখন সিংহভাগই বিদেশি অর্থায়ন থেকে আসতো। তাদের আর্থিক নীতি ছিল মূলত ‘দাতা-নির্ভর’। সর্বোপরি, জনসাধারণের ব্যয়ের ক্ষমতা ছিল নগণ্য। আমি বিদেশি ধার করা অর্থ প্রত্যাখ্যান করে এই নীতিটি উল্টে দিয়েছি।
আমার প্রশাসন আমাদের অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ গ্রহণ ত্বরান্বিত করেছে। অন্তত টাকা আমাদের নিজেদের সীমানার মধ্যে সঞ্চালিত হবে। দীর্ঘমেয়াদী এই নীতির ফল এসেছে। এখন আপনি দেখতে পাবেন যে আমাদের সরকারি ব্যয়ের সিংহভাগ আসে আমাদের নিজস্ব দেশীয় সম্পদ থেকে।
হোয়াইটবোর্ড : উন্নয়ন সহযোগীদের দ্বারা নির্ধারিত নীতি ও প্রকল্প সম্পর্কে কী বলবেন?
শেখ হাসিনা : যখন আন্তর্জাতিক পরামর্শদাতারা আমাদের কাছে বড় প্রকল্প নিয়ে আসে, তখন মূলত অর্থই আমরা তাদের দেই। অনেক বাংলাদেশি নীতি-নির্ধারক কঠিন প্রশ্ন উত্থাপন না করেই তারা যা বিক্রি করছেন তা দ্রুত কিনতে চায়। কনসালটেন্সি ফি কেমন? প্রকল্পের বিনিয়োগের আয় কী? এতে কার উপকার হবে? এসব বিষয় ভাবতে হবে।
আমাদের বেপরোয়াভাবে ধার করা এবং করের বোঝা বাড়ানো উচিত নয়। তবে কিছু বিদেশি আমাদের এটি করতে বলেছে। বড় বড় প্রকল্প প্রত্যাখ্যান করার জন্য আমি সুপরিচিত! উপযুক্ত মনে করলে নীতি-নির্ধারকদের অর্থ ব্যবহার করা উচিত। আপনার প্রয়োজন না হলে ঋণ নেবেন না। আপনি যদি অলাভজনক প্রকল্পের জন্য অর্থ নেন তবে এটি কেবল ঋণের বোঝা তৈরি করবে।
আমাদের এখন নীতি-নির্ধারকরা আর সহজে বিদেশিদের প্রণীত প্রকল্পে প্রভাবিত হন না। এই আত্মবিশ্বাস তৈরি করতে সময় ও প্রচেষ্টা লাগে। এখন বাংলাদেশিরা বিশেষ করে সরকারি সহায়তায়, সারাবিশ্ব থেকে সেরা প্রশিক্ষণ পাচ্ছে। অনেকেই সেরা জায়গা থেকে পিএইচডি করছেন। এটি বাংলাদেশের মধ্যে দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য আমাদের সুচিন্তিত নীতির প্রভাব।
আমরা আমাদের দেশের মধ্যে একটি দক্ষ জনবল তৈরি করব। তাহলে নীতি বা প্রকল্প প্রণয়নের জন্য আমাদের আর বিদেশে যেতে হবে না। নীতি প্রণয়ন চিরকাল বিদেশি পরামর্শকদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে না। বাংলাদেশের নিজস্ব নীতি প্রণয়নের ক্ষমতা আছে। এটা আমার সহজ কথা, আমাদের দেশ আমাদের নীতি।
হোয়াইটবোর্ড : বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারকদের আপনি কী পরামর্শ দেবেন?
শেখ হাসিনা : তাদের জন্য, আমি আমার সরকারের নীতির নকশা শেয়ার করতে পারি। শুরুতে, আমরা প্রয়োজন বিশ্লেষণ করি; তারপর, আমরা তিনটি টাইমলাইনে নীতিগুলি তৈরি করি: বর্তমান, মধ্য মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী। ২০০৭ সালে যখন সামরিক নিয়ন্ত্রিত সরকার আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল, তখন আমি বাংলাদেশের পরবর্তী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য কারাগারের সময়কে কাজে লাগাই। আমি সাক্ষরতা, পুষ্টি, আয় এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো সূচকগুলোতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কাঠামো আমার কারাবাসের সময় তৈরি করা হয়। ২০০৯ সালে যখন আমার সরকার দায়িত্ব নেয়, তখন আমরা বিভিন্ন সময়ের জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছিলাম। ১২ বছরের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলে থাকি। এটি স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য একটি ভবিষ্যৎ-বাউন্ড রেফারেন্স টুল হিসাবে কাজ করে। এই নীতির নকশা কৌশল পরীক্ষা করা হয়েছিল কারণ আমার সরকার ১২ বছর ক্ষমতায় ছিল। ২০২১ সালের মধ্যে এই নীতি নকশা বাংলাদেশের জন্য সফল ফলাফল এনেছিল। ওই বার প্রথমবারের মতো, একটি দীর্ঘমেয়াদী এজেন্ডা দেশে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।
হোয়াইটবোর্ড : আপনি কি মনে করেন যে ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারকদের আপনার দীর্ঘমেয়াদী নীতি অনুসরণ করা উচিত?
শেখ হাসিনা : আসলে তা না। কিন্তু তাদের বোঝা উচিত কৌশলগত নীতি নির্ধারণের ফলে বাংলাদেশ এগিয়েছে। এর অগ্রগতি কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়। নীতি গবেষণা দ্বারা তৈরি একটি সূত্র রয়েছে, যা স্থানীয় জ্ঞান, নমনীয়তা, একটি প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাকে একত্রিত করে। ভবিষ্যৎ নীতিনির্ধারকরা যদি সূত্রটি বোঝেন এবং নতুন বাস্তবতার জন্য পরিকল্পনাগুলোকে নতুন করে সাজান তাহলে তারা বাংলাদেশকে একটি উন্নত অর্থনীতিতে পরিণত করতে পারবেন। আমি তাদের কঠোর না হওয়ার পরামর্শ দেব।
হোয়াইটবোর্ড :আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশের প্রধান নীতিনির্ধারণী ও আদর্শিক চ্যালেঞ্জগুলো কোথায় দেখছেন?
শেখ হাসিনা : পরিবর্তনই একমাত্র জিনিস যা অনুমানযোগ্য। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, দর্শন- সবকিছু বদলে যায়। আমি সত্যিই সংঘাতের পূর্বাভাস দিতে পারি না, তবে আমি জানি যে সংকট অবশ্যই আসবে। আমাদের দূরদর্শিতা দিয়েই আমরা নীতি প্রণয়ন করতে পারি। কোভিড-১৯ মহামারী এবং ইউক্রেন যুদ্ধের নিষেধাজ্ঞা আমার মেয়াদে অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের বড় উদাহরণ।
আদর্শগত কারণে এটি আসতে পারে, তবে প্রভাব পরিমাপ করা কঠিন। চরমপন্থী কট্টরপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করতে পারে। এছাড়া যাদের কোনও সুনির্দিষ্ট আদর্শ নেই, তারা ক্ষমতায় এলে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে। এটা আমাকে মাঝে মাঝে উদ্বিগ্ন করে। উদারপন্থী মতাদর্শের লোকেরা যদি বাংলাদেশকে শাসন করে, তবে তারা অবশ্যই দেশের অগ্রগতি ফিরিয়ে দেবে। এটা অনেক দেশেই হয়েছে।
হোয়াইটবোর্ড : বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন ঘটছে, আপনি কি আগামী বছরগুলোতে সরকারের ভূমিকা সঙ্কুচিত বা সম্প্রসারিত হতে দেখছেন?
শেখ হাসিনা : আমি দেখছি সরকারের ভূমিকা শক্তিশালী। এটা সঙ্কুচিত হবে না। আমি ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিশ্বাস করি, কিন্তু আমি এটাও বিশ্বাস করি যে, সরকারের এখনও সব সেক্টরে প্রধান ভূমিকা পালন করতে হবে।