বঙ্গবাজার নগর পাইকারী বিপণি বিতানসহ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) চারটি উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।
শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।
অপর তিন প্রকল্প হচ্ছে– পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়েরবাজার স্লুইসগেট পর্যন্ত আট লেনের ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক মণি সরণি (ইনার সার্কুলার রিং রোড)’, ধানমণ্ডি হ্রদে ‘নজরুল সরোবর’ ও শাহবাগে ‘হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যান’ আধুনিকীকরণ।
ঢাকার বঙ্গবাজারে ২০২৩ সালের এপ্রিলে বঙ্গবাজার শপিং কমপ্লেক্সে আগুন লেগে ২ হাজার ৯৩১টির বেশি দোকান পুড়ে যায়। পরে সেই স্থানে একটি আধুনিক বিপণি বিতান নির্মাণ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১০তলা বিশিষ্ট আধুনিক বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণি বিতানের নির্মাণকাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।
১০৬.২৮ কাঠা জমির ওপর নির্মিতব্য ১০তলা বিশিষ্ট বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণি বিতানে চারটি ব্লকে পাঁচটি সাধারণ সিঁড়ি ও ছয়টি অগ্নি প্রস্থান সিঁড়িসহ পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিপণি বিতানের প্রতিটি ব্লকের জন্য আলাদা বাহির ও প্রবেশদ্বার থাকবে। ভবনে বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক কক্ষ এবং প্রতিটি ব্লকের প্রতি তলায় চারটি করে শৌচাগার থাকবে।
এ ছাড়া ভবনের বেসমেন্টে ১৬৯টি গাড়ি ও ১০৯টি মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের সুবিধা থাকবে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ২ হাজার ৯৬১ জনের সবাইকে বঙ্গবাজার নগর পাইকারি বিপণি বিতানে পুনর্বাসন করা হবে।
এর আগে পুড়ে যাওয়া মার্কেটের ব্যবসায়ীরা ১৭ থেকে ২২ বর্গফুট আয়তনের দোকানে ব্যবসা পরিচালনা করতেন। এখন নতুন বিপণি বিতানে প্রতিটি দোকানের আয়তন হবে ৮০ থেকে ১২০ বর্গফুট।
ডিএসসিসির মতে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে মার্কেটের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।
পোস্তগোলা ব্রিজ থেকে রায়ের বাজার স্লুইসগেট গেট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের আট লেনের বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ শেখ ফজলুল হক মণি সরণি। ৯৭৪ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পের আওতায় ১০ কিলোমিটার নর্দমা, ১০ কিলোমিটার পথচারী হাঁটার ফুটপাত, ৩টি উড়াল সেতু, ৩টি পথচারী পারাপার সেতু, দুই কিলোমিটার সংরক্ষণকারী দেয়াল, তিনটি মসজিদ, ছয়টি যানবাহন বিরতির স্থান ও ছয়টি যাত্রীছাউনি নির্মাণ করা হবে। এতে ঢাকা শহরের ভেতরে বাস, ট্রাক ও পণ্যবাহী যানবাহনের চাপ কমার পাশাপাশি বহুলাংশে যানজট নিরসন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিজস্ব অর্থায়নে প্রায় ২৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ধানমণ্ডি লেকের ৫০.৯৬৭ কাঠা এলাকা জুড়ে নজরুল সরোবর নির্মাণ করা হচ্ছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম স্মরণে ‘নজরুল সরোবর’ নামের উন্মুক্ত বিনোদন মঞ্চে একটি ঘাটলা, উন্মুক্ত মিলনায়তন, পথচারীদের হাঁটার পথ, গণপরিসর, রেস্তোরাঁ, বসার স্থান, দৃষ্টিনন্দন বাতি, পর্যাপ্ত সবুজায়ন ও শব্দযন্ত্র স্থাপনের পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও নজরুল ইসলামের স্মৃতিময় মুহূর্ত ও সাহিত্যকর্ম সংবলিত ফলক স্থাপন করা হবে।
শাহবাগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শিশু উদ্যানের আধুনিকীকরণ প্রকল্পের মাধ্যম প্রায় ৬০৪ কোটি টাকা ব্যয়ে এই শিশু উদ্যানের আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। ১৯৭৯ সালে স্থাপিত এই পার্কে আগে ১১টি রাইড ছিল। আধুনিকায়নের মাধ্যমে সেখানে মেগা ডিস্কও, সুপার এয়ার রেস, ফ্লাইং ক্যারোস্যাল, গ্যালিয়ন, ১২ডি থিয়েটার, মাইন কোস্টার, ক্লাইম্বিং কার, সুপার হ্যাপী সুইং, ওয়াটার ম্যানিয়াসহ অত্যাধুনিক নতুন ১৫ ধরনের রাইডস বসানো হবে।
এছাড়াও আগত দর্শনার্থীদের জন্য শৌচাগার, চত্বর, রেস্তোরাঁ, বিশ্রামাগার, প্রশস্ত হাঁটার পথ, বসার স্থান, বৃক্ষরোপণ ও সৌন্দর্য বর্ধন ইত্যাদি প্রয়োজনীয় সুবিধাদি সংযোজন করা হয়েছে। বাসস।