Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫
Beta
বৃহস্পতিবার, ১ মে, ২০২৫

নির্বাচন নিয়ে মিউনিখে কোনও প্রশ্ন ওঠেনি : শেখ হাসিনা

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : বাসস
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : বাসস
[publishpress_authors_box]

জার্মানিতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলেন বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনও প্রশ্ন তোলেননি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি একথা জানান। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে সরকার গঠনের পর শুক্রবারই প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী গত ১৬-১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ শহরে অনুষ্ঠিত ৬০তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগ দেন। নির্বাচনে জয়লাভের পর রেকর্ড পঞ্চম ও টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটিই ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর। 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা তাকে যেমন অভিনন্দিত করেছেন তেমনি মিউনিখ সম্মেলনে গিয়েও অভিনন্দনে ভূষিত হয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে কেউ যেমন কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেননি, তেমনি কোনও প্রশ্নও তোলা হয়নি।

তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে তাদের কোনও উদ্বেগও নেই, প্রশ্নও নেই। নির্বাচন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। বেশির ভাগই আলোচনা হয়েছে দ্বিপাক্ষিক। আমরা যে ১শ’টা অর্থনৈতিক অঞ্চল করছি তাতে তাদের বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছি।”

শেখ হাসিনা বলেন, “নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনও কথা বলেনি। কারণ তারা নিজেরাও জানত যে নির্বাচনে আমি জিতে আসব। আর এটা যারা চায় নাই তারাই কথা ওঠায় বা প্রশ্ন তোলে।”

নির্বাচন দিয়ে সমালোচকদের সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি দেশে নির্বাচনের ফল ঘোষণায় ১২/১৩ দিন সময় লাগলেও সে ইলেকশন ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার আর বাংলাদেশে নির্বাচনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রেজাল্ট এসে গেল, সেটা নাকি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার নয়। কাজেই এই রোগের কোনও ওষুধ আমাদের কাছে নাই।”

এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ষড়যন্ত্র ছিল (নির্বাচন নিয়ে)। ষড়যন্ত্র তো আছেই। ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে। বার বার করেছে। নির্বাচন যাতে না হয়, বিরাট চক্রান্ত ছিল। ২৮ অক্টোবরের ঘটনা আপনারা জানেন। এগুলো হঠাৎ করে নয়, পরিকল্পিতভাবে করেছে। নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না বুঝে গেছে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা ছিল। তাই তারা পরিকল্পনা করেছে, দ্রব্যমূল্য বাড়বে আর তারা আন্দোলন করবে।”

তিনি প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের প্রসঙ্গ ধরে বলেন, “ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানোর কথা তো আপনিই বললেন। আপনার কি মনে হয় না, যারা সরকার উৎখাতে আন্দোলন করে তাদেরও এখানে কারসাজি আছে? এর আগে দেখলাম পেঁয়াজের খুব অভাব। পরে দেখা গেল বস্তাকে বস্তা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে।”

মিয়ানমারের ব্যাপারে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি আগেই বলেছি ধৈর্য ধরে এগোনো এবং তাদের সাথে আলোচনাও করছি। দেখা যাক কী হয়।”

আসন্ন রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের কোনও সংকট হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রমজানে কোনও কিছুর (অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের) অভাব হবে না। ইতোমধ্যে সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনও সমস্যা হবে না।”

ছোলা, খেজুর, চিনিসহ পর্যাপ্ত পরিমাণ পণ্য আমদানির ব্যবস্থা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুতরাং, এটি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না কারণ আমরা অনেক আগেই এর জন্য ব্যবস্থা করেছি।”

আগামী পাঁচ বছরে সরকারের কাজের প্রাধান্য তুলে ধরার বিষয়ে তিনি বলেন, “যেহেতু আমাদের উন্নয়নশীল দেশের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ থেকে, কাজেই যে সময়টুকু পাব সেটাকে কাজে লাগিয়ে যথাযথভাবে এগিয়ে যাওয়া এবং সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কমিটি গঠন করে আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।”

উন্নয়ন টেকসই করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আগামী পাঁচ বছরে সরকারের প্রধান গুরুত্বই থাকবে আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির যেটা হয়েছে সেটা যেন টেকসই হয়। কারণ, যে পর্যায়ে থেকে আমরা উঠে এসেছি সেটা টেকসই করে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। একটা হচ্ছে জাতিসংঘের এসডিজি বাস্তবায়ন ২০৩০ সালের মধ্যে, সেটা আমরা সময় পেয়েছি ২০৩২ সাল পর্যন্ত এবং এরমধ্যে যেগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলো আমরা ইতোমধ্যে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”

গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে দেশ উন্নত হয় একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “যে কারণে গত ১৫ বছরে আমরা দেশের উন্নতি করতে পেরেছি। মানুষের  আর্থ সামাজিক উন্নয়ন হয়েছে, তাদের মন মানসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা সব দিক থেকে বাংলাদেশ অনেক উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।”

বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের অভাব রয়েছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি যদি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি, একটা তো যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াতে ইসলামী। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। সংবিধান সংশোধন করে এদেরকে ভোটের অধিকার দিয়েছে, এমনকি পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে যে ফিরে গিয়েছিল তাকেও আবার ফিরিয়ে এনেছে এবং তাদেরকে দল করার অধিকার দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “মিলিটারি ডিক্টেটরদের পকেট থেকে দুটো পার্টি হয়েছে। একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সেগুলোরতো আসলে মাটি মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না। কাজেই তাদের চিন্তা চেতনায় থাকে এমন একটা পরিবেশ হোক কেউ তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে তারা প্রথম ধরা খেল ২০০৮ সালের নির্বাচনে। সে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেল আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় ঐক্য জোট পেল ৩০টি আসন।”

“এরপর থেকেই শুরু হলো এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার অপচেষ্টা। বারবার সে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। কিন্তু আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে পেরেছি”, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “যে গণতান্ত্রিক ধারা আমরা স্থায়ী করেছি, তার শুভ ফল দেশবাসী পাচ্ছে। তাদের জীবন মান উন্নত হয়েছে । এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিয়ে যাব। ইতোমধ্যে আমরা দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা করেছি। এতে প্রতিটি মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে এবং বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হবে— এটাই আমাদের লক্ষ্য। কিন্তু আমাদের প্রতিপক্ষরা জ্বালাও পোড়াও, মানুষ খুন, ট্রেন ও বাসে আগুন দেয়া,মা ও শিশুকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে যাচ্ছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, রাজনীতি যদি জনগণের জন্য হয় সে রাজনীতি জনগণের জন্যই এবং জনগণের কল্যাণেই কাজ করে। আর রাজনীতি যদি হয় শুধু ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা তাহলে তো মানুষ কিছু পাবে না।

এর আগে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই সম্মেলন মূলত রাষ্ট্র অথবা সরকারপ্রধান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও নেতৃবৃন্দ, মিডিয়া, সুশীল সমাজ, সরকারি এবং বেসরকারি খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিগণের অংশগ্রহণ করেন। এটি সমকালীন ও ভবিষ্যত নিরাপত্তার স্বার্থে উচ্চ-পর্যায়ের নিয়মিত আলোচনার একটি শীর্ষস্থানীয় ফোরাম হিসেবে বিবেচিত। এ বছরের ফোরামে ৩৫-জনেরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান অংশগ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, বড় শক্তিগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং আঞ্চলিক সংঘাত, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা, নিউক্লিয়ার নিরাপত্তা, খাদ্য নিরাপত্তা, জলবায়ু নিরাপত্তা, তথ্য নিরাপত্তা, পানি নিরাপত্তা, অভিবাসন, সাপ্লাই চেইন, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, মহামারি ইত্যাদি বিষয়ে এবারের ফোরামে আলোচনা করা হয়।

সফরকে ফলপ্রসূ উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মিউনিখে আমার এই ফলপ্রসূ সফরের ফলে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের শান্তি, সার্বভৌমত্ব ও সর্বাঙ্গীন নিরাপত্তার প্রতি অঙ্গীকার বলিষ্ঠরূপে প্রতিফলিত হয়েছে। দেশের আকার নয় বরং নীতির শক্তিতেই যে মানবতার রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক মুক্তি, এবারের সম্মেলনে আমি এই বার্তাই বিশ্বের দরবারে তুলে ধরেছি।”

পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকসমূহের মাধ্যমে বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা আরও দৃঢ় হয়েছে এবং সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

টাঙ্গাইল নয়, সফিপুরের শিফন

এক সাংবাদিক বলেন, তার কাছে মনে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী টাঙ্গাইল শাড়ি পরেছেন। তাকে শুধরে দিয়ে শেখ হাসিনা জানান, শাড়িটি গাজীপুরের সফিপুর থেকে কেনা। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের আনসার-ভিডিপির তৈরি করা। এটার নাম দিলাম সফিপুর শিফন। সবাই ফ্রেঞ্চ শিফনের প্রশংসা করে, এটার নাম দিলাম সফিপুর সিফন। ওরা শাড়ি তৈরি করে, আমি কিনে উপহার দিই। আজকে পরে আসলাম। তিনি বলেন, এটা সফিপুর শিফন। কাজেই এটা বুঝতে হবে, আমি এ দেশের মাটি-মানুষের সাথে আছি। 

সবসময় টাঙ্গাইল শাড়ি পরার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, পেটেন্ট রাইটসের জন্য আমরা ইতোমধ্যে আবেদন করেছি। আপনারা লক্ষ্য করবেন, কয়দিন আমি সমানতালে টাঙ্গাইল শাড়ি পরলাম এজন্য; যেন দেখাতে পারি- এটা আমাদের। 

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী মঞ্চে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম। বাসস।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত