ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
সরকার প্রধান বলেন, “প্রকৃতির নিয়মেই আমাদের দেশে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস আসে। সেখানে মানুষের জীবন বাঁচানোই সবচেয়ে বড় কথা। জিনিস গেলে পাওয়া যায়, কিন্তু জীবনতো আর পাওয়া যায় না।”
ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে এবার খুবই অস্বাভাবিক জলোচ্ছ্বাস হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মানুষ আমাদের করে দেওয়া সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় পেয়েছে। আমরা আপনাদের পাশে আছি, ঘূর্ণিঝড় রেমালের আঘাতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার জন্য যা যা করা দরকার সব ধরনের সহযোগিতা আমরা করব।”
তিনি বলেন, “ইতোমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছে। যাতে বর্ষার আগেই এগুলো পুনর্নির্মাণ করে মানুষকে জলোচ্ছ্বাস বা পানির হাত থেকে বাঁচাতে পারা যায়।”
প্রশাসনের সঙ্গে বসে হিসাব নিকাশ করে যাদের ঘর-বাড়ি ভেঙ্গেছে সেগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। ধানকাটা শেষ হলেও নষ্ট হওয়া তরিতরকারি ও খেতের ফসলের জায়গায় কৃষক যেন নতুন উদ্যমে চাষাবাদ করতে পারে সেজন্য বীজ ও সার দেওয়ার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও আশ্বাস দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে কিন্তু সেটাকে মোকাবিলা করে মানুষের জীবন-মান রক্ষা করাই সরকারের লক্ষ্য এবং সেই কাজই সরকার করে যাচ্ছে।
বাসসের খবরে বলা হয়েছে, এই অঞ্চল অবহেলিত ছিল। এই অঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত প্রকৃতির সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে। প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধে লিপ্ত হয় বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দুর্যোগ সহনীয় ঘর-বাড়ি দরিদ্রদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যে কারণে মানুষ ও পশু-পাখি আশ্রয়ের জায়গা পেয়েছে। সরকার চায় এই এলাকার মানুষ যেন দুর্যোগ থেকে মুক্তি পায় কারণ এই এলাকা সবসময়ই দুর্যোগপ্রবণ।
হেলিকপ্টার থেকে ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার হেলিকপ্টার থেকে পটুয়াখালী জেলার মঠবাড়িয়া ও পাথরঘাটা এলাকায় ঘূর্ণিঝড় রেমালে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন।
ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে হেলিকপ্টারটি যখন ধীর গতিতে অনেক নীচ দিয়ে উড়ছিল তখন তিনি রেমাল আক্রান্ত দুটি এলাকা দেখেন।
প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারি হেলিকপ্টারটি ঢাকা থেকে যাত্রা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা পর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন হেলিপ্যাডে অবতরণ করে।
গত রবিবার সন্ধ্যায় ঘণ্টায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার কাছে আঘাত হানে রেমাল। রেমালের তাণ্ডবে কমপক্ষে ১৩ জন প্রাণ হারিয়েছে, ধ্বংস হয়েছে ৩৫ হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।
তথ্য অনুযায়ী, পটুয়াখালী জেলায় এখন পর্যন্ত ৩ লাখ ২৭ হাজার মানুষ ক্ষতির মুখে পড়েছে এবং প্রায় ২৩৫টি বাড়ি পুরোপুরি এবং ১ হাজার ৮৬৫টি বাড়ি আংশিক ধ্বংস হয়েছে। কৃষি খাতে ২৬ কোটি টাকার বেশি এবং মৎস্য খাতে ২৮ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।