ভারতে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এই সফরে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে নতুন সাতটি সমঝোতা স্মারক সই হয়।
পাশাপাশি উভয় দেশের স্বার্থে একটি টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ডিজিটাল এবং সবুজ অংশীদারত্বের জন্য যৌথ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে সম্মত হন দুই প্রধানমন্ত্রী।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে শুক্রবার নয়া দিল্লি গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। মোদী টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর দ্বিপক্ষীয় সফরের জন্য শেখ হাসিনাই প্রথম আমন্ত্রণ পান।
সফরের দ্বিতীয় দিন ব্যস্ত সময় কাটিয়ে শনিবার রাতে প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরে আসেন বলে বাসস জানিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইটটি রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঢাকার হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে ভেড়ে।
নয়া দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় জানান ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কীর্তিবর্ধন সিং। ভারতে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোস্তাফিজুর রহমানও বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন।
টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর ভারতে প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফরে শনিবার সকালে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে শেখ হাসিনাকে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানান মোদী। সেখানে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা ও গার্ড অব অনার দেওয়া হয়।
এরপর রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর সমাধি সৌধে ফুল দিয়ে শেখ হাসিনা যান ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর হায়দরাবাদ হাউজে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে তার একান্ত বৈঠক করেন তিনি। সেখানে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে নিজ নিজ পক্ষে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা ও মোদী।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সুনীল অর্থনীতি ও সামুদ্রিক সহযোগিতা, রেলওয়ে, সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য, একাডেমিক সহযোগিতা, মৎস্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সাতটি নতুন সমঝোতা স্মারক সই হয়। পাশাপাশি তিনটি পুরনো সমঝোতা স্মারক নবায়ন হয়।
বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদী ঘোষণা দেন, ভারতে চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে যেতে ই-ভিসার আবেদন করা যাবে। পাশাপাশি রংপুরে একটি সহকারী হাই কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হবে।
এছাড়া সিরাজগঞ্জে একটি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো স্থাপনের ঘোষণাও দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী, যা ভারতের অনুদানের অর্থে নির্মিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, “উভয় দেশই একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের দিকে আমাদের পথ দেখানোর জন্য ‘রূপকল্প ঘোষণা’ অনুমোদন করেছে। আমরা টেকসই ভবিষ্যতের জন্য ‘ডিজিটাল অংশীদারিত্ব’ এবং ‘সবুজ অংশীদারিত্ব’ বিষয়ক দুটি সমন্বিত রূপকল্পকে সামনে রেখে কাজ করতে সম্মত হয়েছি।”
ভারতকে বিশ্বস্ত বন্ধু অভিহিত করে তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সৃষ্ট সম্পর্ককে বাংলাদেশ সবসময়ই বিশেষ গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ক্রমাগত বিকশিত এবং দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।”
অন্যদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয় শঙ্কর বলেছেন, ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথম’, ‘অ্যাক্ট ইস্ট’, সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক নীতির সংযোগস্থলে রয়েছে বাংলাদেশ।
দেশে ফেরার আগে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।
মধ্যাহ্ন ভোজে বিরিয়ানিতে আপ্যায়ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মানে হায়দরাবাদ হাউজে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দেওয়া মধ্যাহ্নভোজে কলকাতার বিরিয়ানিও ছিল বলে বাসস জানিয়েছে।
বিরিয়ানির পাশাপাশি সুগন্ধি বাসমতি চালের ভাত এবং কলকাতার ধরনে রান্না করা শাকসবজি এবং অন্যান্য স্থানীয় খাবার পরিবেশন করা হয় এই ভোজসভায়।
ভোজ শুরু হয় ভারতের স্ট্রিট ফুড হিসেবে বহুল পরিচিত দই ফুচকা দিয়ে। এরপর আসে মটরশুটির সুপ। এর সঙ্গে ছিল মাছের পাতুরি। নিরামিশাষী মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর জন্য পরিবেশন করেন ছানার পাতুরি। তাতে ছানার সঙ্গে মেশানো ছিল নারকেল, কাঁচা আম, মরিচ আর সর্ষে বাটা।
এছাড়া ভোজে ছিল সিঙাড়া, যাতে পুর হিসাবে ছিল আলু, পনির, ফুলকপি, বাদাম ও থাইম।
শেখ হাসিনাসহ অতিথিদের পাতে এরপর দেওয়া হয় ‘আমারান্থ কোফতা গুলবদন’ অর্থাৎ কোফতার কারিতে সেদ্ধ করা আমারান্থ বাজরার ডাম্পলিং।
তারপর পাতে আসে গুজরাটি প্রণালীতে জিরা, পেঁয়াজ আর টমোটা দিয়ে রান্না করা পাঁচমিশালি সবজি। এর পরে পাতে দেওয়া হয় দই পনির। আরও ছিল শুক্তো ও মসুর ডাল।
এছাড়া ছিল স্পেশাল ভারতীয় রুটি, পান রসমালাই কুলি, গুড়ের জিলাপি ও আমের কুলফি এবং বিভিন্ন মৌসুমি ফলমূল ও মাসালা কফি।