কোটা সংস্কার নিয়ে সর্বোচ্চ আদালত থেকে কাঙ্ক্ষিত রায় আসার প্রত্যাশা রেখে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজপথে আন্দোলনে নেমে সন্ত্রাসীদের সুযোগ করে না দিতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছেন তিনি। আন্দোলন সংঘাত-সহিংসতা ছড়াচ্ছে যারা, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তি দেওয়ার কথাও তিনি বলেছেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলন ঘিরে প্রাণক্ষয়ের পর বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন প্রধানমন্ত্রী।
সেখানেই তিনি আন্দোলনকারীদের আশ্বস্ত করেন, পাশাপাশি সংঘাত সৃষ্টিকারীদের কড়া বার্তা দেন।
বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। ২০১৮ সালে এক আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে তা তুলে দিয়েছিল সরকার।
তবে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালে একটি রিট আবেদন হলে গত ৫ জুন হাইকোর্ট এক রায়ে সব কোটা পুনর্বহাল করে। তার পরই নতুন করেন আন্দোলন শুরু হয়।
ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০১৮ সালে ছাত্র সমাজের আন্দোলনে সরকার সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীকালে মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোটা বহাল রাখার পক্ষে এক আবেদনে উচ্চ আদালত সরকারের ওই পরিপত্র বাতিল করে দেয়।”
হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিতে সরকার আবেদন করলেও সর্বোচ্চ আদালতের সাড়া পায়নি। তবে আপিলের আবেদন করেছে। আগামী ৭ অগাস্ট তার ওপর শুনানি হবে। এরইমধ্যে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাও চাইলে তাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপন করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ওই পরিপত্র বহাল রাখার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করা হয়। তার শুনানির দিনও ধার্য করা হয়।”
এরপরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, কিছু মহল এই আন্দোলনকে ব্যবহার করে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছে।
আন্দোলনের মধ্যে সংঘাতে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেনা প্রকাশের পাশাপাশি এসবরে জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তাদের রাজপথে না নেমে আপিল বিভাগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “আপিল আদালতে শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালত শিক্ষার্থীদের কোনও কথা থাকলে তা শোনার সুযোগ করে দিয়েছে।”
আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কোটা নিয়ে জটিলতার সমাধানের সুযোগ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ায় সমাধানের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রাস্তায় নেমে দুষ্কৃতিকারীদের সংঘাতের সুযোগ করে দেবেন না।
“সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত আমি সকলকে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”
আন্দোলনকারীদের হতাশ না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বিশ্বাস, ছাত্রসমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকেও ন্যায়বিচারই পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।”