Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪

আন্দোলনে সন্ত্রাসীরা ঢুকেছে : শেখ হাসিনা

সেগুনবাগিচায় দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যে মঙ্গলবার ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুটি বাসে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সন্ত্রাসীরা ঢুকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে বলে সতর্ক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গত কয়েকদিনে সংঘটিত সংঘাতে প্রাণহানিসহ ভাংচুরে ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে ব্যাপক সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বুধবার জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে আসেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।

তিনি আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরে আদালতের রায় আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি অনাকাঙ্ক্ষিত সংঘাতে প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশও করেন তিনি।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা পুনর্বহাল করে হাইকোর্টের রায় আসার পর এই মাসের শুরু থেকে রাজপথে শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে অবরোধ-অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছিল তারা।

গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হওয়ার পরদিন মঙ্গলবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ থেকে ব্যাপক সহিংসতা হয়। তাতে ছয়জন নিহত হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকার বন্ধ ঘোষণা করে সরকার।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা বাতিলের দাবিতে শুরুতে শুধু শাহবাগে অবস্থান ছিল শিক্ষার্থীদের। ছবি : হারুন অর রশীদ রুবেল

তার একদিন বাদেই জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এই আন্দোলনের শুরুর কথা তুলে ধরে বলেন, “আন্দোলনের শুরু থেকেই সরকার যথেষ্ট ধৈর্য ও সহনশীলতা প্রদর্শন করেছে। আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ সহযোগিতা করে।

“এমনকি রাষ্ট্রপতির কাছে যখন আন্দোলনকারীরা স্মারকলিপি দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে, তখন তাদের সুযোগ করে দেওয়া হয় এবং নিরাপত্তারও ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”

কিছু মহল এই আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাভিলাষ চরিতার্থ করতে সন্ত্রাসী কর্মোণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল বলে দাবি করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এর ফলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে যেসকল ঘটনা ঘটেছে, তা বেদনাদায়ক ও দুঃখজনক। অহেতুক কিছু মূল্যবান জীবন ঝরে গেল।”

এসব ঘটনা কাম্য ছিল না মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “চট্টগ্রামে সন্ত্রাসীরা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে সন্ত্রাসীরা বহু ছাত্রকে হত্যার উদ্দেশে নির্মমভাবে নিচে ফেলে দিয়েছে। অনেক ছাত্রের হাত পায়ের রগ কেটে দেয়। একজন মৃত্যুবরণ করেছে, অনেকে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

“ঢাকা, রাজশাহী ও রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের বাসভবনে এবং ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক হলে অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর করা হয়। পথচারী, দোকানিদের আক্রমণ, অ্যাম্বুলেন্স চলাচলে বাধা দেওয়া হয়, শিক্ষকদের ওপর চড়াও হয়ে তাদের গায়ে হাত দেওয়া হয়েছে।”

এসব কর্মকাণ্ডে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জড়িত ছিল বলে মনে করেন না সরকার প্রধান।

তিনি বলেন, “বরং সন্ত্রাসীরা এদের মধ্যে ঢুকে সংঘাত ও নৈরাজ্যকার পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। এই ধরনের ঘটনায় যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।”

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘাত-সহিংসতার প্রেক্ষাপটে বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমি দ্ব্যর্থহীনভাবে ঘোষণা করছি, যারা হত্যাকাণ্ড, লুটপাট এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে, এরা যেই হোক না কেন, তারা যেন উপযুক্ত শাস্তি পায়, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“আমি আরও ঘোষণা করছি, হত্যাকাণ্ডসহ যেসব অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, সুষ্ঠু ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে সেসকল সে সকল বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে।”

“কাদের উস্কানিতে সংঘর্ষের সূত্রপাত হলো, কারা কোন উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অরাজক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিল, তা তদন্ত করে বের করা হবে,” হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভীষণ উদ্বেগে রয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এই সন্ত্রাসীরা যে কোনও সময় সন্ত্রাসীরা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করে তাদের ক্ষতি সাধন করতে পারে।”

তাই অভিভাবক ও শিক্ষকদের সজাগ থাকার পরামর্শ দেন তিনি।

কোটা নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে, তার সমাধান আদালতেই হওয়ার সুযোগ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, “তাই রাস্তায় আন্দোলনে নেমে দুষ্কৃতিকারীদের সুযোগ করে দেবেন না।”

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই ভাষণ দৃশ্যত প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনকারীরা। তারা বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত