Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৬ মে, ২০২৫

মালদ্বীপে চীনপন্থী মুইজ্জুর দলের নিরঙ্কুশ জয়

মালদ্বীপে পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল। ফাইল ছবি
মালদ্বীপে পার্লামেন্ট নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল। ফাইল ছবি
[publishpress_authors_box]

মালদ্বীপে জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছে দেশটির চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর দল পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। এতে দীর্ঘদিনের মিত্র ভারত থেকে চীনের দিকে দেশটির সরে যাওয়ার গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

রবিবার দিনভর ভোটগ্রহণ শেষে রাতে মালদ্বীপের নির্বাচন কমিশন প্রাথমিক ফল ঘোষণা করেছে। এতে দেখা গেছে, ৯৩টি আসনের মধ্যে ৯০টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা পিএনসি জয় পেয়েছে ৬৮টি আসনে। আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করতে এক সপ্তাহ লাগতে পারে।

দেশটির পার্লামেন্টে মোট আসন সংখ্যা ৯৩টি এবং সবকটি আসনেই রবিবার ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। ছয়টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্ররা মিলে মোট ৩২৬ জন প্রার্থী এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

এবারের নির্বাচনে ৪১ জন নারী প্রার্থীর মধ্যে মাত্র তিনজন প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। তাদের সবাই মুইজ্জুর দল পিএনসির সদস্য।

গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে মুইজ্জুর পরিকল্পনার জন্য এই নির্বাচনকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হিসেবে দেখা হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় পাস করেছেন মুইজ্জু।

বিদায়ী পার্লামেন্টে পিএনসি ও এর মিত্রদের মাত্র আটটি আসন ছিল। এতে গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করার পরও মুইজ্জুর পক্ষে তার চীনপন্থী নীতিগুলো নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া কঠিন হচ্ছিল। এই নির্বাচনের ফলে তার পথে আর কোনও বাধা রইলো না।

মালদ্বীপের সাবেক শাসক দল মালদিভিয়ান ডেমোক্রেটিক পার্টি (এমডিপি) মাত্র ৮৯টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয় পেয়েছে মাত্র ১০টিতে। তবে ভারতপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহর দলটি পার্লামেন্টে প্রধান বিরোধী দল হিসেবেই থাকবে।

পৃথিবীর নিরক্ষরেখা বরাবর প্রায় ৮০০ কিলোমিটারজুড়ে (৫০০ মাইল) ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ১১৯২টি ছোট ছোট প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত একটি নিচু ভূমির দেশ মালদ্বীপ। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের পানিতে তলিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর একটি এটি।

সাবেক নির্মাণ মন্ত্রী ৪৫ বছর বয়সী প্রেসিডন্ট মুইজ্জু প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ভূমি পুনরুদ্ধার এবং দ্বীপের ভূমির উচ্চতা বাড়ানোর মাধ্যমে তিনি এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করবেন। কিন্তু পরিবেশবাদীরা বলছেন, এতে বরং হিতে বিপরীত হতে পারে এবং সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।

মুইজ্জু দেশটির আগের সরকারের ‘ভারত ঘেষা’ নীতি থেকে পুরোপুরি বের হয়ে আসার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। গত বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই তিনি ভারতবিরোধী কথা বলা শুরু করেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর তিনি ভারতের আগে চীন সফরে যান এবং তার দেশ থেকে ভারতীয় সেনাদেরও চলে যেতে বলেন।

এ মাসের শুরুতে পার্লামেন্ট নির্বাচনের প্রচারণা চলাকালে মুইজ্জু চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে বড় বড় কয়েকটি অবকাঠামো চুক্তি করেন। এর আগে মার্চের শুরুতে চীন মালদ্বীপের সঙ্গে শক্তিশালী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক গড়ে তুলতে বিনামূল্যে সামরিক সহায়তা দেওয়ার একটি প্রতিরক্ষা সহযোগিতা চুক্তিও করে।

অতীতে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্টদের সকলেই ভারতপন্থী ছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের দ্য ডেমোক্রেটস পার্টি এবারের নির্বাচনে একটি আসনেও জয়লাভ করতে পারেনি। তিনি গতবারের শাসকদল এমডিপি থেকে বেরিয়ে নতুন ওই দল গড়েন।

দেশটির আরেক সাবেক প্রেসিডেন্ট আব্দুল্লাহ ইয়ামিনের নতুন দলও এবারের নির্বাচনে কোনও আসনে জয় পায়নি। নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে আদালত তাকে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে খালাস দেয়।

৫ লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যার দেশ মালদ্বীপে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৮৪ হাজার। দেশটির নির্বাচন কমিশনের হিসাব মতে, এবারের নির্বাচনে ৭২.৯ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন। তবে গত নির্বাচনে (২০১৯ সালে) ৮২ শতাংশ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন।

মালদ্বীপ শুধু তার সমুদ্র সৈকত ও বিলাসবহুল রিসোর্টের জন্যই পরিচিত নয়। দেশটির ভূ-কৌশলগত অবস্থানও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভারত মহাসাগরের ওই পথ দিয়েই পৃথিবীর পূর্ব থেকে পশ্চিমে জাহাজ চলাচল করে।

তাই ভারত মহাসাগরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে নজর রাখতে মালদ্বীপকে প্রয়োজন দিল্লির। একই কারণে চীনও দেশটিতে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টায় রয়েছে। ভারত মহাসাগরে আধিপত্য নিয়ে এই লড়াইয়ের একদিকে রয়েছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র আর অন্যদিকে চীন। পরাশক্তিগুলোর এই প্রতিযোগিতার প্রভাব পুরো দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতেই পড়ছে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা ও সান অনলাইন

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত