Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪
Beta
বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪

‘ঘটনাস্থলে না থেকেও’ আসামি হচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা

police-arms-100624
Picture of সাজ্জাদ হোসেন

সাজ্জাদ হোসেন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনায় সারা দেশের বিভিন্ন থানায় মামলা হচ্ছে। এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। মামলা হচ্ছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের নামেও।

তবে পুলিশ সদস্যদের অনেকেই বলছেন, তারা বিনা দোষে আসামি হচ্ছেন। ঘটনার সময় ছুটিতে থাকলেও আসামি করা হচ্ছে তাদের কাউকে কাউকে। কেউ কেউ যে ঘটনায় আসামি হয়েছেন সেই ঘটনার স্থলই তাদের কর্মস্থল নয়। কয়েক বছর আগের কর্মস্থলের সাম্প্রতিক ঘটনায়ও আসামি করা হয়েছে কাউকে কাউকে।

এমনই একজন পুলিশ সদস্য রংপুরের মেট্রোপলিটন পুলিশের নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) মজনু।

আন্দোলন চলাকালে গত ১৭ জুলাই নিহত হন ফল বিক্রেতা মিরাজুল ইসলাম মিরাজ। এ ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট রংপুর কোতয়ালী থানায় যে মামলা হয়েছে সেই মামলার ৬ নম্বর আসামি করা হয়েছে নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মজনুকে।

মামলায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উৎপল কুমার পাল, সহকারী কমিশনার ইমরান ও এসআই মজনুসহ রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে।

রংপুরে গত ১৭ জুলাইয়ের সংঘর্ষ। ফাইল ছবি

আসামিদের চেনেন না নিহত মিরাজের মা আম্বিয়া

এসআই মজনুসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হওয়া এ মামলার বাদী নিহত মিরাজের মা আম্বিয়া খাতুন। তিনি রংপুর কোতয়ালী থানাধীন নিউ জুম্মাপাড়া এলাকার প্রয়াত শামসুল হকের স্ত্রী।

আসামিদের নাম দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মিরাজের মা আম্বিয়া সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মামলায় কাকে আসামি করা হয়েছে আমি জানি না। তাদেরকে আমি চিনিও না। স্থানীয় কয়েকজন মানুষ, আর উকিল (আইনজীবী) মামলার কাগজে খালি আমার স্বাক্ষর নিছে।” 

আম্বিয়া খাতুনের সঙ্গে কথা বলার কিছুক্ষণ পরই এই প্রতিবেদকের মোবাইলে ফোনে করেন এক ব্যক্তি। নাম আমীর হোসেন লাবু জানিয়ে নিজেকে আম্বিয়া খাতুনের ভাগিনা পরিচয় দেন তিনি।

পরে দাবি করেন, গত ১৭ জুলাই মিরাজকে গুলি করে হত্যার সময় স্থানীয় যারা ঘটনাস্থলে ছিলেন তারাই আসামিদের নাম দিয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্যতম স্থানীয় বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ আলম তাজ।

ঘটনাস্থলে আমার ফুটেজ পাওয়া যাবে না : এসআই মজনু

তবে রংপুর সিটি করপোরেশনের ফুট ওভার ব্রিজের নিচে মিরাজকে যেখানে হত্যা করা হয় সেখানে দায়িত্বই পালন করেননি বলে দাবি করেছেন এসআই মজনু। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে তার দেওয়া একটি স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে।

মজনু জানিয়েছেন, তার ফেইসবুক আইডি মিসির আলী নামে।

তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “মিরাজ হত্যার আগের দিন ১৮ জুলাই নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করায় আমি আমার ফোর্সসহ রাতেই কতোয়ালী থানায় আশ্রয় নেই। রাতে থানায়ই অবস্থান করি।

“এ বিষয়ে জিডিতে হাজিরা নোটও আছে। পরদিন ১৯ জুলাই নবাবগঞ্জ ফাঁড়ির ফোর্সরা মিলে থানায় নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত হই। জিডিতে এটারও নোট আছে। ১৯ জুলাই ডিউটির প্রোগ্রামেও আমার নাম নেই।”

তিনি বলেন, “ঘটনার দিন আমার থানায় অবস্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ আছে। এছাড়া ব্যবহৃত মোবাইল সিডিআর, জিপিএস লোকেশনেও আমার অবস্থান থানায়। আমার নামে ইস্যুকৃত অস্ত্র থেকে কোনও গুলি ছোড়া হয়নি। ২০ রাউন্ড গুলিসহ পিস্তল নিয়েছি। ডিউটি শেষ করে অস্ত্রাগারে জমা দিয়েছি।

“ঘটনাস্থলে আমার কোনও ফুটেজ পাওয়া যাবে না। শুধুমাত্র ঘটনাস্থলেই নয়, পুরো মেট্রো এলাকায় কোনও আন্দোলনকারীদের সাথে অ্যাকশনের কোনও ফুটেজ পাবেন না। এরপরও ওই ঘটনায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।”

‘হত্যায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের আসামি করা হয়নি’

এসআই মজনু বলছেন, মিরাজ হত্যার ঘটনায় যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন মামলায় তাদের আসামি করা হয়নি।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “মিরাজ হত্যার ঘটনায় গুলিবর্ষণ করেছে জেলা পুলিশ, রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স (আরআরএফ), এপিবিএন সিটি বাজার। এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন রেঞ্জ ডিআইজি, জেলার পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা। এই ঘটনায় নেতৃত্ব দিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।

“তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ-সার্কেল) হোসেইন মো. রায়হান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আবু আশরাফ সিদ্দিক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি সার্কেল) নজরুল ইসলাম। অথচ কোনও মামলায় তাদের আসামি করা হয়নি।”

রংপুরে ঘটনাস্থলে ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার শাহজাহান। ছবি : সংগৃহীত

ছুটি নিয়ে গ্রামের বাড়ি গিয়েও আসামি এসআই রিপন!

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সহিংসতার ঘটনায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ এসআই কাজী রিপন সরকারের বিরুদ্ধে কোতয়ালী থানায় দুটি মামলা হয়েছে।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে দ্রুতবিচার আইনে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধের। আরেকটি মামলা হয়েছে হত্যার অভিযোগে। এর মধ্যে দ্রুত বিচার আইনের মামলায় ৮৩ নম্বর ও হত্যা মালায় ৮ নম্বর আসামি করা হয়েছে তাকে।

সিলেটে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বর অভিমুখী মিছিলে কয়েকদফায় বাধা দেয় পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
সিলেটে শিক্ষার্থীদের আদালত চত্বর অভিমুখী মিছিলে কয়েকদফায় বাধা দেয় পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

দ্রুত বিচার আইনে করা মামলায় ঘটনার সময় উল্লেখ করা হয়েছে ৪ আগস্ট, দুপুর ১২টা।

এসএমপির সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী ইনচার্জ এসআই কাজী রিপন সরকার বলছেন, সেসময় ছুটিতে নরসিংদীতে নিজ বাড়িতে ছিলেন তিনি। আবার মামলার ঘটনাস্থল দেওয়া হয়েছে সিলেট কতোয়ালীর থানার কোর্ট পয়েন্ট ও বন্দরবাজার এলাকা। আর হত্যা মামলায় ঘটনাস্থল উল্লেখ করা হয়েছে বন্দরবাজার এলাকায়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, নিজের ফাঁড়ি এলাকার বাইরে হওয়ায় বন্দরবাজার এলাকায় ডিউটি করার কোনও সুযোগই ছিল না এসআই কাজী রিপন সরকারের। 

এ বিষয়ে এসআই কাজী রিপন সরকার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমার বাবা নেই। সেজন্য ছোট ভাইয়ের বিয়ের বিষয়ে অভিভাবক হিসেবে কথা বলতে গত ২ আগস্ট ২ দিনের ছুটি নিয়ে আমি গ্রামের বাড়িতে যাই। সেখানে যাওয়ার পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আরও বেগবান হওয়ায় ৪ আগস্ট আমি আর কর্মস্থলে ফিরতে পারিনি।

“পরবর্তীতে অসহযোগ আন্দোলনসহ টোটাল শাটডাউন কর্মসূচি চলায় যানবাহন বন্ধ থাকায় আমি কর্মস্থলে যোগ দেই গত ১৫ আগস্ট। আমি ছুটিতে গেলাম ২ আগস্ট। অথচ ৪ আগস্ট সিলেটে হওয়া সহিংসতা কারণে দায়ের করা দ্রুত বিচার আইনের মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “ছুটির বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানার পাশাপাশি আমার অফিসিয়াল রেকর্ডেও অন্তর্ভুক্ত আছে। এছাড়া মোবাইলের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) দেখলেও ৪ আগস্ট আমার নরসিংদীতে অবস্থানের বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যাবে।”

এসআই রিপন সরকার বলছেন, এসব মামলার যারা বাদী তাদেরকে তিনি চেনেন না। তারাও তাকে চেনেন না।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “আর যে হত্যা মামলায় আমাকে আসামি করা হয়েছে সেটার ঘটনাস্থল বন্দরবাজার এলাকায়। আমার কর্মস্থল সোবহানীঘাট এলাকা হওয়ায় সেখানে আমার যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

“আমি ওই এলাকায় গিয়েছিলাম এমন কোনও ছবি, ভিডিও কিংবা অন্য কোনও ধরনের প্রমাণ কেউই দিতে পারবেন না। আর এসব মামলার যারা বাদী তাদের কাউকেই আমি চিনিও না। আমি নিশ্চিত তারাও কেউ আমাকে চেনেন না।”

এসআই কাজী রিপন সরকার দ্রুত বিচার আইনের যে মামলা আসামি সেই মামলার বাদী জুবের আহমেদ। তিনি নিজেকে সিলেট জেলা ছাত্রদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি দাবি করেছেন।

এই মামলার আসামি তালিকা করার বিষয়ে জানতে চাইলে সকাল সন্ধ্যাকে জুবের আহমেদ বলেন, “যারা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন, বল প্রয়োগ করেছেন, দমন-পীড়ন চালিয়েছেন আর তাদের যারা নির্দেশ দিয়েছেন এমন মানুষদের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী শাসনামলে যারা তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন তারাও মামলার আসামি হয়েছেন।”

অন্যদিকে রিপন সরকারের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন আবুল আহসান মো. আজরফ ওরফে জাবুর নামে আরেক ব্যক্তি।

গত ১৯ জুলাই সিলেট নগরীর বন্দরবাজার এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত সাংবাদিক এটিএম তুরাবের বড় ভাই তিনি।

সিলেটে পুলিশের মুখোমুখি আন্দোলনকারীরা।

মামলার আসামি তালিকা করার বিষয়ে জানতে চাইলে সকাল সন্ধ্যাকে আজরফ বলেন, “ঘটনার সময়ের ভিডিও ফুটেজ ও ছবি দেখে কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু আসামির নাম দিয়েছেন সিলেটের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতারা।”

এসময় আসামির তালিকা করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের নাম জানতে চাইলে তা জানাতে অস্বীকৃতি জানান তিনি।

আজরফ বলেন, “এখন আমার গোপনীয়তা রক্ষা করা উচিত, তাই আমি আর কিছু বলতে পারব না।” একথা বলেই মোবাইল ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

এর কিছুক্ষণ পরই এই প্রতিবেদকের কাছে আরেকটি নম্বর থেকে ফোন করেন এক ব্যক্তি।

নিজেকে ‘শ্যামল সিলেট’ পত্রিকার সাংবাদিক ও নিহত সাংবাদিক তুরাবের বন্ধু দাবি করে প্রতিবেদকের কাছে জানতে চান, কেন তুরাবের বড় ভাইয়ের কাছে মামলার আসামিদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলো?

এসময় প্রতিবেদন তৈরির কথা বললে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

‘আপনার বিরুদ্ধেও সাইবার মামলা করব আমি’

এর ২০ মিনিটের মাথায় আবারও এই প্রতিবেদককে নিজের মোবাইল নম্বর থেকে ফোন দেন মামলার বাদী নিহত সাংবাদিক তুরাবের বড় ভাই আজরফ।

উত্তেজিত কণ্ঠে তিনি দাবি করেন, মামলার আসামিদের বিষয়ে জানতে তাকে জোর করেছেন এই প্রতিবেদক। কেন জোর করেছেন- সে প্রশ্ন তুলে এই প্রতিবেদকের বিরুদ্ধেও মামলা করার হুমকি দেন তিনি।

আজরফ বলেন, “আমার ভাই মরার পর এতদিনেও আপনি একবারও খোঁজখবর নেননি। এখন আসামিদের বিষয়ে জানতে চাইছেন। আপনি কোনও পুলিশের কাছ থেকে টাকা খেয়ে এগুলো বিষয়ে জিজ্ঞেস করছেন। তাই আপনার বিরুদ্ধেও সাইবার মামলা করব আমি।”

‘ঘটনাস্থলে না থেকেও’ আসামি এসআই অমিতাভ দর্জি

ঘটনাস্থলে না থেকেও আসামি হওয়াদের এই তালিকায় আছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার সেলে কর্মরত এসআই অমিতাভ দর্জিও।

লালবাগ থানার একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে তাকে। মামলার পর থেকে গ্রেপ্তারের ভয়ে নিজের মোবাইল ফোন বন্ধ রেখেছেন তিনি। গতকাল বৃহস্পতিবার কর্মস্থলে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিবির সাইবার সেলের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “প্রায় এক বছর ধরে সাইবার সেলে কাজ করছেন এসআই অমিতাভ দর্জি। জেনেছি এখানে আসার আগে তিনি লালবাগ থানায় কর্মরত ছিলেন। সে কারণে লালবাগ থানা এলাকার সাম্প্রতিক সহিংসতার মামলায় তাকেও আসামি করা হয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ব্যাপক হামলা হয় দেশের বেশিরভাগ থানা। চালানো হয় ভাঙচুর, লুটপাট; ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। কোথাও কোথাও পুলিশ সদস্যরা হত্যারও শিকার হন।

এসব সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে জীবনরক্ষায় কর্মস্থল ছেড়ে চলে যান পুলিশ সদস্যরা। ফলে দেশে বন্ধ হয়ে যায় পুলিশি সেবা। বিপাকে পড়েন সাধারণ মানুষ।

এ অবস্থায় কর্মস্থল ত্যাগ করা পুলিশ সদস্যদের কাজে ফিরতে নির্দেশ দেন নতুন আইজিপি মো. ময়নুল ইসলাম।

এরপর ধীরে ধীরে কাজে যোগ দিতে শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা, চালু হতে শুরু করে থানাগুলোর কার্যক্রম। তবে এখনও সব থানায় পুরোদমে সেবা দেওয়া শুরু করতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকার শাহবাগে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কির পর পিছু হটেছিল পুলিশ। ফাইল ছবি

তালিকা ‘কপি করে’ আরেক মামালায় বসানোর অভিযোগ

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদরদপ্তরের এক কর্মকর্তা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, এরই মধ্যে সারা দেশে গণহারে পুলিশ সদস্যদের মামলার আসামি করা হচ্ছে। একই মামলার আসামিদের তালিকা কপি করে আরেক মামালায় বসানো হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন অনেক পুলিশ সদস্য।

আবার কর্মস্থলে যোগ দেওয়া অনেক পুলিশ সদস্যও মামলার আসামি হওয়ার খবর পাওয়ার পর গ্রেপ্তারের ভয়ে কর্মস্থল ছেড়ে যাচ্ছেন। এতে সেবা পক্রিয়া আরও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

আসামি পুলিশ সদস্যদের ভবিষ্যৎ কী

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তরা বলছেন, মামলার আসামি হওয়া মানেই গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন- এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই পুলিশ সদস্যদের। নির্দোষ কোনও পুলিশ সদস্য হয়রানির শিকার হবেন না, শাস্তি পাবেন না। তাদেরকে নির্ভয়ে কর্মস্থলে থেকে দায়িত্ব পালনের আহ্বানও জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) কমিশনার সাইফুজ্জামান ফারুকী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “এসআই মজনুর স্ট্যাটাসটি আমার চোখেও পড়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত জানি না আমি। তবে এটুকু বলতে পারি নির্দোষ কাউকে মামলার আসামি করলেই সে শাস্তি পেয়ে যাবে না। কেউ নির্দোষ হলে অবশ্যই তদন্তে উঠে আসবে বিষয়টি। 

তিনি বলেন, “যেসব পুলিশ সদস্য অপরাধ করেননি তারা মামলার আসামি হলেও ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই। আপনার নির্ভয়ে কর্মস্থলে থেকে নিজের দায়িত্ব পালন করুন।”

কেউই অবিচারের শিকার হবেন না : ডিআইজি রেজাউল

এ বিষয়ে পুলিশ সদরদপ্তরের ডিআইজি (অপারেশন) রেজাউল করিম সকাল সন্ধ্যাকে জানান, ঘটনাস্থলে না থেকেও মামলার আসামি হওয়ার বিষয়ে কিছু অভিযোগ তারাও পেয়েছেন।

তিনি বলেন, “তবে আমি আমার সহকর্মীদের বলতে চাই- মামলার আসামি হওয়া মানেই গ্রেপ্তার- এমনটা ভাবার কোনোই কারণ নেই। আগে মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হবে। সেখানে কেউ যদি দোষী প্রমাণিত হয় তখন সে গ্রেপ্তার হবে কিংবা নিজের দোষ অনুযায়ী সাজা পাবে।

“আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, মামলার আসামি হলেও নিরাপরাধ কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। এই সরকার গঠনই হয়েছে মানুষকে নায্য বিচার দেওয়ার উদ্দেশ্যে। তাই কেউই অবিচারের শিকার হবেন না- আমি এই কথা দিতে পারি।”

মামলার শিকার পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কোনও দুঃশ্চিন্তা না করে আপনারা নিজেদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করুন। আপনারা কেউ হয়রানির শিকার হবেন না। এ বিষয়ে প্রতিটি ইউনিটপ্রধানকেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল।

শুরুতে এই বিক্ষোভ শান্তিপূর্ণ থাকলেও গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা চালালে তা সহিংসতায় গড়ায়। এরপর কয়েকদিনে সারাদেশে সংঘাতে শতাধিক নিহত হলে সরকার কারফিউ জারি করে সেনা মোতায়েন করে, বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত ৬ জনের গায়েবানা জানাজা করেছে শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত ৬ জনের গায়েবানা জানাজা করে শিক্ষার্থীরা। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

আন্দোলনের দাবি মেনে আদালতের নির্দেশে কোটা সংস্কার হলেও শিক্ষার্থীরা হত্যাকাণ্ডের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলে তা কঠোর হাতে দমনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

এরপর ব্যাপক সংঘাতে কয়েকশ মানুষ নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন গণআন্দোলনে পরিণত হয়। তার চাপে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন।

এর তিন দিন পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত হয় অন্তর্বর্তী সরকার যারা জুলাই ও আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত