Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
Beta
শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

‘পুলিশ আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিল’

স্বামীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বলছিলেন স্মৃতি আক্তার। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
স্বামীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা বলছিলেন স্মৃতি আক্তার। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
Picture of আব্দুল জাব্বার খান

আব্দুল জাব্বার খান

টঙ্গীর একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন নূর মোহাম্মদ (২৮), থাকেন গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায়। পরিকল্পনা ছিল শ্রমিক ভিসায় জর্ডান যাবেন, সেজন্য সব কাজ গুছিয়ে এনেছিলেন।

ফ্লাইটের দুদিন আগে ১৮ জুলাই একটি প্রশিক্ষণ শেষ করে বাসায় ফিরছিলেন। পথেই পড়েন কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার মধ্যে। পাশেই ছিল উত্তরা পূর্ব থানা। ভেবেছিলেন থানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালে আশ্রয় মিলবে। কিন্তু সেই দাঁড়ানোই হয়েছিল তার কাল। এখন পুলিশের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তার স্থান হয়েছে কারাগারে। বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন তো শেষ হয়েছেই, ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কায় পরিবারের সদস্যরা।

সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতের গারদখানার সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় নূর মোহাম্মদের স্ত্রী স্মৃতি আক্তারের সঙ্গে। তার কাছ থেকেই জানা গেল এসব।

স্মৃতি জানালেন, তার স্বামীর হাতে ছিল পাসপোর্টসহ জর্ডান যাওয়ার টিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। সেসবও পুলিশ সদস্যরা ছিঁড়ে ফেলেছেন, অভিযোগ তার।  

সকাল ১০টা থেকে আড়াই বছরের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে সিএমএম আদালতের সামনে দাড়িঁয়ে আছেন স্মৃতি। কী করবেন, কার কাছে যাবেন, কোথায় গিয়ে কথা বললে ন্যায়বিচার পাবেন তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না।

স্মৃতি বলেন, “১৮ জুলাই আমার স্বামী বিদেশ যাবেন বলে একটি ট্রের্নিং শেষ করে মগবাজার থেকে বাসার দিকে রওয়ানা দেয়। দুপুর একটার দিকে আমাদেরকে ফোন দিয়ে বলে চারদিকে শুধু আগুন আর আগুন। আমি কিছু দেখতেছিনা। আমাকে এসে নিয়ে যাও।

“একথা শুনে আমরা দ্রুত রিকশা নিয়ে বাসা থেকে বের হই। এরপর তার ফোন বন্ধ পাই। পরে বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আমাদের কাছে ফোনে খবর আসে তাকে রাস্তায় ফেলে পিটিয়ে তার হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। তার পাসপোর্ট ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

এরপর উত্তরা পূর্ব থানায় নানা হয়রানির কথা জানালেন স্মৃতি। বললেন, একজন পুলিশ সদস্য বলেছেন আমার স্বামীর কাছে আন্দোলনের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি। তাকে থানার সামনে থেকেই আটক করা হয়েছে। তাকে তারা ছেড়ে দেবে। কিন্তু সেটা হয়নি।

এমনকি তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগও তোলেন স্মৃতি।

তিনি বলেন, “আমরা পুলিশকে অনেক অনুরোধ করে বলেছি, ভাই সাড়ে তিন লাখ টাকা সুদের উপর ঋণ নিয়ে আমার স্বামীকে বিদেশ পাঠিয়ে দিচ্ছি। ২০ জুলাই আমার স্বামীর ফ্লাইট। সেই টিকেট, পাসপোর্ট, ট্রেনিংয়ের কাগজপত্র তার সঙ্গে ছিল। কত অনুরোধ করেছি, আপনারা আমাদের ভবিষ্যতটা নষ্ট করে দিয়েন না। কিন্তু তারা কিছু শোনেনি।

“পুলিশ তো আমাদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিল। এখন আমরা কি করব, কোথায় যাব। আমাদের পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি আমার স্বামী। সে কারাগারে। দুটি সন্তান নিয়ে আমাকে পথে বসতে হবে। আমার একটি সন্তান অসুস্থ, আমার শাশুড়ি অসুস্থ। এই অবস্থায় আমি কোথায় যাব?”

“ফুটপাতে ভাতের হোটেল ছিল আমার ছেলের”

মিরপুরের মো. শাওন (২৫)। বাবা নেছার হাওলাদার ভাড়ায় মাইক্রোবাস চালান, মা রুবি বেগম গৃহিনী।

গত ২০ জুলাই শাওনকে আটক করে মিরপুর থানা পুলিশ। এরপর থেকে ছেলের দেখা মিলছে না বলে জানালেন রুবি বেগম।

তিনি বলেন, “মিরপুর-১০ থেকে আমার ছেলেকে আটক করেছে পুলিশ। ফুটপাতে তার ভাতের হোটেল ছিল। সে কোনও আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত না। আমার ছেলে নির্দোষ। সে কোনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না। রিকশায় বাসায় ফেরার পথে তাকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ।”

রুবি বেগম আরও বলেন, “আমি রান্না করে দিতাম, আমার ছেলে ফুটপাতে ভাত বিক্রি করত। আজ কতদিন ছেলেকে দেখি না। দেখা করতে নাকি ১২শ টাকা লাগবে। এখন এত টাকা আমরা কোথায় পাব। উকিলকেও টাকা দিতে হবে, আমরা গরিব মানুষ, কোথায় সাহায্য পাব।”

ওষুধ কিনতে বেরিয়ে গ্রেপ্তার

পুলিশের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন সুজন ইসলামের (১৭) বাবা আলাউদ্দিন।

তিনি বলেন, “আমার ছেলেকে কাজ শেখার জন্য পাঠিয়েছি। ও এসি মেরামতের কাজ করে। ২১ জুলাই ওষুধ আনতে নতুনবাজারের ফরাজি হাসপাতালে যায়। পরে শুনতে পাই সেখান থেকে আমার ছেলেকে ধরে নিয়ে গেছে। পরে আমি ভাটারা থানায় যাই। থানায় গিয়ে ওসি সাহেবের সঙ্গে কথা বলি। ওসি সাহেব আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন ওই দিন রাত ১০টায় ওকে ছেড়ে দেবে।

“তারপর আমি থানা থেকে বের হয়ে বাইরে বসে থাকি। অনেকক্ষণর পর আবার যাই। তারপরও বলছে ছেড়ে দেবে। কিন্তু সারা রাত রেখে ভোর ৫টা বাজে থানা থেকে চালান করে পাঠিয়ে দেয় তারা। শুনেছি আমার ছেলের বিরুদ্ধে আটটি মামলা দিয়েছে।”

এসির কাজ করতে গিয়ে কয়েকদিন আগে সুজন চারতলা ভবন থেকে নিচে পড়ে গিয়ে বেশ আহত হয় জানিয়ে তার বাবা বলেন, “সেজন্যই ওষুধ কিনতে বেরিয়েছিল।  কিন্তু পুলিশ হাসপাতাল থেকে তাকে ধরে নিয়ে যায়। আমরা এখন কি করব, কোথায় যাব?”

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

ad

সর্বাধিক পঠিত