সর্বোচ্চ আদালতের আদেশের পর নিয়ে কোটা নিয়ে আন্দোলনের আর কারণ না দেখার কথা জানিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ বলেছে, এখন কেউ সড়কে অবস্থান নিলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপিল বিভাগের আদেশের পরদিন বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলন করে এই হুঁশিয়ারি দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার খ মহিদ উদ্দিন।
তিনি বলেন, “কোটা নিয়ে বুধবার আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই আর কোটা নিয়ে আন্দোলনের কোনও অবকাশ নেই।
“আমরা অনুরোধ করব, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা নতুন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টির মতো কর্মসূচি দেবেন না; অন্তত এই চার সপ্তাহ। এরপরও যদি আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে পুলিশ।”
‘জরুরি’ এই সংবাদ সম্মেলনের আগে ডিএমপিতে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। এরপর বিকালে ঢাকার কয়েকটি স্থানে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিতে চাইলে তাদের তুলে দেয় পুলিশ।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রায় প্রতিদিন সড়কে অবস্থান নিয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিলেও নমনীয় ছিল পুলিশ।
এখন কঠোর হওয়ার কারণ জানিয়ে মহিদ বলেন, “গত ১ জুলাই থেকে শাহবাগসহ বিভিন্ন জায়গায় আন্দোলনের কারণে যানবাহন, মানুষের চলাফেরা ও জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্য ডিএমপি বদ্ধপরিকর। আমরা চেষ্টা করেছি, পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবেলার জন্য। সেজন্য সহনশীল আচরণ করেছি।”
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ছয় বছর আগে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করেছিল সরকার। হাইকোর্টের এক রায়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হলে নতুন করে আন্দোলন শুরু হয়।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ গত ৬ জুলাই থেকে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করে আসছিল বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত। বুধবার সেই কর্মসূচি সারাদিন পালন করা হলে রাজধানীর সড়ক অচল হয়ে পড়ে।
আন্দোলনতকারীদের উদ্দেশে পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ বলেন, “যারা আন্দোলন করছেন, তাদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা ও ভালোবাসা আছে। কিন্তু দেশের প্রচলিত আইন ও দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে আমরা বাধ্য।
“ছাত্ররা শিক্ষিত, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে আমি অনুরোধ করব, তারা যেন আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর মানুষকে দুর্ভোগ দিয়ে কোনও কর্মসূচি না দেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ, আর কোথাও নামবেন না।”
প্রধান বিচারপতি ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করে তাদের বক্তব্য আদালতে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজপথ ছাড়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছে, বিষয়টির সুরাহা আদালতেই হবে বলে তারা প্রত্যাশা করছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ আন্দোলনকারীদের সতর্ক করে বলেন, “আদালতের নির্দেশনা ও আমাদের অনুরোধ সত্ত্বেও যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা হয়, তাহলে কিন্তু তা হবে সংবিধান অনুযায়ী অফেন্স (অপরাধ)। আমি মনে করি, তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করবেন না।
“এরপরও যদি কেউ নিজেদের অবস্থানে থাকেন বা আমাদের কথা না শোনেন, আদালতের নির্দেশনা না মানেন, তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আমাদের জবাবদিহিতা সবার কাছে, সবার অধিকার আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।”