ঈশ্বরকে নিয়েও রসিকতা করা যাবে, আর তাতে ধর্মের কোনও অবমননা হবে না। এ কথা বলেছেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের শীর্ষ ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস।
শুক্রবার ইতালির ভ্যাটিকান সিটিতে বিশ্বের শতাধিক কৌতুকশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও লেখকদের উপস্থিতিতে এক অনুষ্ঠানে একথা বলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রধান ধর্মগুরু ফ্রান্সিস।
একদিকে ইতালির দক্ষিণাঞ্চলীয় পুলিয়ার একটি রিসোর্টে বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার তিনদিন চলে জি-৭ সম্মেলন।
উন্নত সাত দেশের এই সংগঠনের নেতারা সেখানে বিশ্বের বড় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গিকার করেন। রাশিয়াকে রুখতে ইউক্রেনের সঙ্গে একাত্মতা, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে সমর্থন, আফ্রিকায় টেকসই অবকাঠামোতে বিনিয়োগ এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও অভিবাসন মোকাবেলার কথা বলেন তারা।
আর অন্যদিকে শুক্রবার ভিন্ন ধরনের একটি আন্তর্জাতিক সমাবেশের আয়োজন হয় ভেটিকান সিটিতে। সেখানে পোপ ফ্রান্সিস হাস্যরসের গুরুত্ব নিয়ে তার নিজস্ব বার্তা দেন।
পোপের ওই অনুষ্ঠানে বিশ্বের ১৫টি দেশ থেকে আসা শতাধিক কমেডিয়ান তথা কৌতুক শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও হুপি গোল্ডবার্গ, জিমি ফ্যালন, জুলিয়া লুইস-ড্রেইফুস, ক্রিস রক, কোনান ও’ব্রায়েন ও স্টিফেন কোলবার্টের মতো যুক্তরাষ্ট্রের শোবিজ তারকারাও এতে অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে পোপ ফ্রান্সিস তার বক্তব্যে বলেন, “চারপাশে এতো মন খারাপ করা সংবাদের ভিড়ে এবং আমাদের নানা সামাজিক ও ব্যক্তিগত ব্যস্ততার মাঝেও কমেডিয়ানরা শান্তি ও হাসি ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।”
‘আমি নিজেও ৪০ বছর ধরে ভালো রসবোধের জন্য প্রার্থনা করছি’ উল্লেখ করে পোপ বলেন, “আপনারা মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারেন, কেননা হাসি সংক্রামক।”
পোপ ফ্রান্সিসের মতে, কেউ কোনও মানুষের মুখে হাসি ফোটালে এর মধ্য দিয়ে সেই ব্যক্তি আদতে ঈশ্বরকেও হাসান।
তিনি বলেন, “ঈশ্বরকে নিয়েও রসিকতা করা যাবে।” আর তা ‘ধর্ম অবমাননা হবে না’ বলেও মনে করেন তিনি। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা যেমন প্রিয়জনদের নিয়ে রসিকতা করি।” তবে খেয়াল রাখতে হবে “যেন বিশ্বাসীরা যেন আঘাত না পান, বিশেষ করে গরিবরা।”
উপস্থিত দর্শক-শ্রোতাদের উদ্দেশে পোপ কৌতুকছলে বলেন, “আমিও আপনাদের কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাই, (মুখে একটি হাসি নিয়ে) তবে আমার বিরুদ্ধে নয়!” তার এ কথায় দর্শক-শ্রোতারা হেসে ওঠেন।
কমেডিয়ানদের উদ্দেশে পোপ আরও বলেন, “আপনারা মানুষকে সমস্যায় থাকা অবস্থায়ও হাসাতে পারেন। আপনারা হাস্যরসের মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন; ভুলে যাওয়া পরিস্থিতিকে স্মরণ করিয়ে দেন; নিপীড়ন তুলে ধরেন; অনুচিৎ আচরণ দেখিয়ে দেন।”
৮৭ বছর বয়সী এই ধর্মযাজক বলেন, হাস্যরস সামাজিক দেয়াল সরিয়ে দিয়ে মানুষকে পরস্পরের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতেও সহায়তা করে।
পোপ বলেন, “যেখানে বর্তমানে যোগাযোগ অনেক সময় সংঘাত তৈরি করে, সেখানে আপনারা জানেন কীভাবে বৈচিত্রময় এবং পরস্পর বিপরীতধর্মী বাস্তবতাকে একত্রিত করতে হয়। আপনাদের কাছ থেকে কত কিছুই না শেখার আছে আমাদের!”
তার বক্তব্য শেষ করার পর পোপ কৌতুক শিল্পীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন এবং তাদের অনেকের সঙ্গেই হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন। অতিথিদেরও অনেকে পোপকে ইতালিয়ান মদসহ নানা উপহার দিয়েছেন।
পোপ এমন এক সময়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করলেন যখন তার বিরুদ্ধে সমকামী মানুষদের নিয়ে অপমানজনক কথা বলার অভিযোগ উঠেছে। এর জন্য তিনি দুঃখপ্রকাশ করে ক্ষমাও চেয়েছেন।
কমেডিয়ানদের নিয়ে ওই অনুষ্ঠানের পর পোপ ফ্রান্সিস জি-৭ সম্মেলনেও যোগ দেন। ক্যাথলিক গির্জার প্রধানদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম জি-৭ সম্মেলনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেন।
জি-৭ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ছিল শুক্রবার। সেদিন সম্মেলনে যোগ দিয়ে পোপ ফ্রান্সিস কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে কথা বলেন।
কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বের কথা স্বীকার করের পোপ। তিনি বলেন, এটি উত্তেজনা বাড়াতে পারে। আর জ্ঞান অর্জনের সুযোগের প্রসারও ঘটাতে পারে।
তবে একই সময় এআই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বৈষম্য বাড়াতে পারে বলে মনে করেন পোপ।
তথ্যসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স, গার্ডিয়ান