পর্তুগাল ০ (৩) : ০ (৫) ফ্রান্স
ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোকে আদর্শ করে বেড়ে উঠেছেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। পর্তুগাল-ফ্রান্সের ইউরো কোয়ার্টার ফাইনাল তাই হয়ে উঠে গুরু-শিষ্যের লড়াই। শেষ ইউরো খেলা কিংবদন্তি রোনালদো ম্যাচটাকে বলেছিলেন আবার যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে জেতা হলো না রোনালদোর। এমবাপ্পের দল টাইব্রেকারে ৫-৩ ব্যবধানে তাদের হারিয়ে পৌঁছে গেল সেমিফাইনালে। শেষ চারে তারা খেলবে স্পেনের বিপক্ষে।
নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়েও গোলের দেখা পায়নি কোনও দল। কোয়ার্টার ফাইনাল তাই গড়ায় টাইব্রেকারে। শেষ ষোলোয় অতিমানবীয় পারফর্ম্যান্সে ৩টা পেনাল্টি ঠেকিয়ে পর্তুগালের নায়ক বনে গিয়েছিলেন দিয়েগা কস্তা। ফ্রান্সের বিপক্ষে অবশ্য একটা সেভও করতে পারেননি তিনি।
টাইব্রেকারে ফ্রান্সের হয়ে ৫টা শটই জালে জড়ান উসমান দেম্বেলে, ইউসুফ ফোফানা, জুলস কুন্দে, ব্র্যাডলি বারকোলা ও থিও হের্নান্দেজ।
পর্তুগালের হয়ে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও বের্নার্দো সিলভা প্রথম দুটি শট জালে জড়ালেও তৃতীয় শট পোস্টে মেরে মিস করেন জোয়াও ফেলিক্স। চতুর্থ শট জালে জড়িয়েছিলেন নুনো মেন্দেস। তবে পঞ্চম শটটি আর নেওয়া হয়নি তাদের।
খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ালে প্রথম অর্ধে মাঠে ছিলেন এমবাপ্পে। পরের অর্ধে তাকে তুলে নেন কোচ দিদিয়ের দেশম। বেঞ্চে থেকেই দলের জয় উদযাপন করেছেন তিনি। রোনালদো আগেই ঘোষণা করেছিলেন এটা তার শেষ ইউরো। বিদায়টা তাই হলো বিষাদে।
ফ্রান্স-পর্তুগাল ম্যাচটা বিরতির আগে উসকে দিয়েছিল ৪০ বছর আগের স্মৃতি। ১৯৮৪ সালে ইউরোর কোনও ম্যাচে বিরতির আগে ডিবক্স থেকে শট নিতে পারেনি কোনও দল। আজও ঘটল এমনটা। ৪০ বছর আগের ম্যাচটিতেও মুখোমুখি হয়েছিল পর্তুগাল-ফ্রান্সই!
প্রথম ২৮ মিনিটে ৫টা কর্নার পায় পর্তুগাল। ৫টা কর্নারই নেন ব্রুনো ফের্নান্দেস। দুর্বল সেই শটগুলো যায় বিফলে। ফ্রান্স বিরতির আগে পায় একটাই কর্নার, ৩৪ মিনিটে। আন্তোয়ান গ্রিয়েজমানের শর্ট কর্নার নেওয়ায় বিফলে যায় সেটা।
রাফায়েল লেয়াও দুঃস্বপ্ন হয়েছিলেন জুলস কুন্দের জন্য। তাকে একাধিকবার বোকা বানান লেয়াও। ৪-৩-৩’এ বের্নার্দো সিলভা ডান প্রান্তে গেলেও কেঁপে উঠেছে ফ্রান্সের রক্ষণ। তারপরও বিরতির আগের পরিসংখ্যান বলছে পোস্টে ২টা শট নিয়ে পর্তুগাল লক্ষ্যে রাখতে পারেনি একটিও। আর ফ্রান্স ৩টা শট নিয়ে লক্ষ্যে রেখেছিল একটি।
মাস্ক পরে খেলতে অস্বস্তির কথা আগেই জানিয়েছিলেন এমবাপ্পে। আজ ৫৬তম মিনিটে বের্নার্দো সিলভার হেডার আবারও মুখে লাগলে শুশ্রূষার জন্য সাইডলাইনে চলে যান এমবাপ্পে।
ম্যাচের এক ঘণ্টা শেষ হওয়ার পর আক্রমণের গতি বাড়ায় দুই দল। ৬১ মিনিটে দারুন সুযোগ নষ্ট করেন পর্তুগালের ব্রুনো ফের্নান্দেস। জোয়াও ক্যানসেলোর পাস পোস্টের ৮ গজ সামনে থেকে শট নিলেও অসাধারণ সেভ করেন গোলরক্ষক মাইক মাইগনান।
৬৪ মিনিটে রাফায়েল লেয়াওয়ের অসাধারন পাসে ভিতিনহার শট ঠেকিয়ে আবারও ফ্রান্সের ত্রাতা মাইগনান। ফিরতি বলে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর বেকহিলেও কাজ হয়নি। গ্রিয়েজমানের জায়গায় উসমান দেম্বেলে নামলে ধার বাড়ে ফ্রান্সের।
৬৬ মিনিটে ফ্রান্সের কোলো মুয়ানি ভালো জায়গায় বল পেলেও রুবেন দায়াসের ব্লকে বেঁচে যায় পর্তুগাল। ৩ মিনিট পর এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা ৫ গজ সামনে একা পেয়ে যান গোলরক্ষককে। তার শট অবিশ্বাস্যভাবে বাঁক নিয়ে বাইরে যায় পোস্ট ঘেঁষে।
রোনালদো ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। কিন্তু তাঁকে তুলে নেননি পর্তুগীজ কোচ রবার্টো মার্টিনেজ। তার একটা জাদুকরী মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। তাই উল্টো ফের্নান্দেস আর ক্যানসেলোকে তুলে নেন মার্টিনেজ। ৮৫ মিনিটে বক্সের বাইরে ভালো জায়গায় ফ্রিকিক পেলেও দেয়ালে মেরে নষ্ট করেন রোনালদো।
ইনজুরি টাইমের তৃতীয় মিনিটে দেম্বেলের পাস বক্সের মাথায় ভালো জায়গায় পেলেও এমবাপ্পের দুর্বল শটে নষ্ট হয় ফ্রান্সের সুযোগ। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। দুই অর্ধে দুই দল একাধিক সুযোগ পেলেও কাজে লাগাতে না পারায় ম্যাচের ফয়সালা হয় টাইব্রেকারে।
১২০ মিনিটে পোস্টে ফ্রান্সের শট ছিল ২০ টি, লক্ষ্যে ৫টি। আর পর্তুগালের পোস্টে শট ১৫টি, লক্ষ্যে ৪টি।
ম্যাচ চলার সময়ই ইংলিশ সাবেক তারকা রিও ফার্ডিনান্ড বলছিলেন, ফ্রান্স পেনাল্টির অপেক্ষা করছে। সেই টাইব্রেকারেই শেষ পর্যন্ত বাজিমাত ফ্রান্সের।