একে অবিশ্বাস্য বললেও ভুল হয়। তবে দিয়েগো কস্তা যা করেছেন তা গল্প নয়, সত্যি। পেনাল্টি শ্যুট আউটে এক-দুটি নয়, টানা তিনটি শট আটকে দিয়ে রূপকথার জন্ম দিলেন। ইউরোর ইতিহাসে এই কীর্তি গড়া প্রথম গোলরক্ষক হয়েছেন কস্তা। চোখ কপালে তোলা বীরত্বে স্লোভেনিয়ার বিপক্ষে দলকে দেখালেন ইউরোয় কোয়ার্টার ফাইনালের পথ।
টানা তিন পেনাল্টি ফেরানোর আগে, অতিরিক্ত সময়ের ১১৫তম মিনিটে আরেকটি নিশ্চিত গোলের শট ফিরিয়ে পর্তুগালকে ম্যাচে রেখেছিলেন। ফাঁকা পোস্টের সামনে দাঁড়িয়ে ওয়ান টু ওয়ান লড়াইয়ে জিতেছেন স্লোভেনিয়ার ফুটবলারের সঙ্গে।
স্লোভাকদের মারাত্মক ডিফেন্ডিং, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পেনাল্টি মিসের দিনে, দিয়েগো কস্তার অতিমানবীয় গোলকিপিংয়ে স্লোভেনিয়াকে কাঁদিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখল পর্তুগাল। নির্ধারিত সময়ে গোলশূণ্য ড্র হওয়ার পর পেনাল্টি শ্যুটে ৩-০ তে জিতেছে তারা।
কোয়ার্টারে রোনালদোদের প্রতিপক্ষ ফ্রান্স। ২০১৬ ইউরোতে তাদের হারিয়েই শিরোপা জিতেছিল পর্তুগাল।
নিজেদের ইতিহাসে প্রথম কোন বড় টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচ খেলতে নেমেছিল স্লোভেনিয়া। তাই বলে নড়বড়ে ভাব একটুও ছিল না দলটির। গ্রুপ পর্বে যেমন চমক উপহার দিয়ে চেক রিপাবলিককে হারিয়ে দেয়, ইংল্যান্ডকেও চোখ রাঙ্গানি দিয়ে জয় বঞ্চিত করে, পর্তুগীজদেরও একই পারফরম্যান্স উপহার দেয় তারা।
কিন্তু দুর্ভাগ্য দলটির। ইতিহাস গড়ার প্রান্তে থেকেও মুখ গোমরা করে ফিরতে হয় স্লোভাকদের। শুধু ভাগ্য সঙ্গ দেয়নি বলেই। নয়তো পেপের ভুলে ম্যাচের ১১৫তম মিনিটেই জিতে যায় তারা। প্রায় মধ্য মাঠে সতীর্থকে পাস দিতে দিয়ে বল নিয়ন্ত্রন রাখতে ব্যর্থ হন অভিজ্ঞ পর্তুগাল ডিফেন্ডার পেপে।
কাছেই দাঁড়িয়ে থাকা স্লোভেনিয়া ফুটবলার সেসকো সুযোগ লুফে নিতে ভুল করেননি। সহজেই বল পায়ে নিয়ে পেপেকে পেছনে ফেলে পোস্টের দিকে ছোটেন। সামনে গোলরক্ষক দিয়েগো কস্তা ছাড়া আর কোন ফুটবলার নেই।
ততক্ষণে পুরো স্টেডিয়াম বুঝে গেছে পর্তুগালের হার নিশ্চিত হওয়া গোলটি হতে যাচ্ছে। কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে সেসকোর ডান পায়ের শট বাঁ-পা বাড়িয়ে আটকে দেন কস্তা। নিশ্চিত গোল হজম করা থেকে বেঁচে যায় পর্তুগাল।
এই মুহূর্তে ভাগ্যকে সঙ্গে না পাওয়ার আক্ষেপ করতে পারে স্লোভেনিয়া। নয়তো মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় ম্যাচে পর্তুগালের সঙ্গে শতভাগ জয়ের রেকর্ড ধরে রাখতো তারা।
১১৫ মিনিটের ওই মুহুর্তের আগে পর্তুগীজদের সঙ্গে চোখে চোখ রেখে লড়ছিল স্লোভাকরা। অতিরিক্ত সময়ে রোনালদোর পেনাল্টি আটকে দিয়ে দলকে ওই মুহূর্তে হাসি এনে দেন গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাক।
অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদ লিজেন্ড গোলরক্ষক ওবলাক বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রোনালদোর শট ফেরান। তাতে ইউরো ইতিহাসে শততম পেনাল্টি গোলের রেকর্ড বঞ্চিত হন পাঁচবারের বর্ষসেরা তারকা। এছাড়াও ম্যাচে আরও একবার রোনালদোর ফ্রি কিক ফিরিয়ে দেন ওবলাক। দলের পক্ষে যে কোন বড় আসরে শেষ সাত ম্যাচ ধরে গোলহীন থাকতে হয় রোনালদোকে।
ম্যাচে ব্যর্থ হলেও দলের পক্ষে পেনাল্টিতে তার পা থেকেই প্রথম গোল আসে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্যূটে দলের অপর দুই অভিজ্ঞ ব্রুনো ফার্নান্দেজ ও বার্নার্দো সিলভা গোল করে পর্তুগালের জয় নিশ্চিত করেন।