চার কোয়ার্টারের হকি ম্যাচ। তৃতীয় কোয়ার্টার শেষ হতে মাত্র মিনিট তিনেক বাকি। ওই সময় শুরু হলো মারামারি। শুক্রবার পল্টন মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে প্রিমিয়ার হকি লিগের শেষ ম্যাচটিতে মুখোমুখি হয় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনী ও মোহামেডান। এটাকে এক রকম অঘোষিত ফাইনালই ধরা হচ্ছিল।
যে ম্যাচে জিতলেই প্রিমিয়ার হকি লিগে ৬ বছর পর চ্যাম্পিয়ন হতো মোহামেডান। ম্যাচে তখন ৩-২ গোলে এগিয়েও ছিল সাদা কালো দলটি। এমনকি চ্যাম্পিয়নশিপ উদযাপনের জন্য ফুলের মালাও সঙ্গে করে এনেছিল মোহামেডানের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা।
অথচ সেই ম্যাচেই কিনা মারামারি করে ভজকট লাগিয়ে দিল দুই দলের খেলোয়াড়েরা। যে মারামারির জেরে শেষ পর্যন্ত খেলাই পণ্ড হয়ে যায়।
হকি স্টিকের আঘাতে মোহামেডানের ফরোয়ার্ড দীন ইসলাম ইমনের মাথা ফেটে গেছে। ম্যাচে মারামারি করার কারণে লাল কার্ড দেখেছেন আবাহনীর নাইম উদ্দিন, মোহামেডানের দীন ইসলাম ইমন ও তানভীর রহমান সিয়াম।
হলুদ কার্ড দেখেন আবাহনীর আফফান ইউসুফ ও মোহামেডানের জুল পিদাউস বিন মিজাউন।
ওমানের আম্পায়ার হুসাইন আল হুসানির এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেনি মোহামেডানের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। এরপর তো আর মাঠেই নামেনি মোহামেডান।
আম্পায়াররা প্রায় ২০ মিনিট মোহামেডানের জন্য অপেক্ষা করে শেষ বাঁশি বাজিয়ে দিলে রিফিউজ টু প্লে অনুসারে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয় ৫-০ গোলের ব্যবধানে।
এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত আবাহনীর পয়েন্ট ছিল ৩৪। মোহামেডানের ৩৫। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য তাই জয়ের কোনও বিকল্প ছিল না সাদা-কালোদের।
কিন্তু রিফিউজ টু প্লের নিয়মের পর আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করায় তাদের পয়েন্ট দাঁড়ায় ৩৭-এ। দিনের প্রথম ম্যাচে মেরিনার ইয়াংস ক্লাব ৪-২ গোলে হারায় পুলিশকে। এতে সমান ৩৭ পয়েন্ট হয়ে যায় মেরিনার্সেরও।
দুই দলের সমান পয়েন্ট হওয়ায় এখন মেরিনার্স ও আবাহনীকে প্লে-অফ খেলতে হবে। আগামী রবিবার হওয়ার কথা এই প্লে অফ ম্যাচ। কিন্তু দুই দলের আগ্রহে সেটা না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ঠেকানো গেল না মারামারি
সচরাচর মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে এমনটা দেখা যায় না। প্রধান গেটে ঢোকার মুখে পুলিশের বাধা। ভিআইপি গ্যালারিতেও কোনও দর্শক নেই। শুধু গণমাধ্যম কর্মীদের ঢোকার অনুমতি ছিল এই গ্যালারি ছাপিয়ে ওপরের তলায় প্রেসবক্সে।
হকি মাঠের মধ্যেও মোতায়েন করা হয় প্রচুর পুলিশ। একটা যুদ্ধংদেহী আবহের মধ্যে প্রিমিয়ার হকি লিগের শেষ ম্যাচটা শুরু হয়।
কার্যত লিগের শেষ ম্যাচ হলেও যেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোট গল্পের মতো কিছুটা বাকি রয়ে গেল। এ যেন শেষ হইয়াও হইলও না শেষ!
প্রতি মৌসুমে ঘটে যাওয়া ঘটনার মতোই ‘ঐতিহ্য’ মেনে মারামারি হলো এবারও।
ম্যাচে মারামারি সূত্রপাত হয় আবাহনীর খেলোয়াড় আফফান ও মোহামেডানের জুল পিদাউস মিয়াজুনের হাতাহাতির মধ্য দিয়ে। যেটির রেশ পরে ছড়িয়ে পরে অন্য খেলোয়াড়দের মধ্যেও। ডাগ আউট থেকেও ছুটে এসে যে মারামারিতে যোগ দেন মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা।
ম্যাচে আবাহনীর হয়ে ১টি করে গোল করেন আফফান ইউসুফ ও পুস্কর খীসা মিমো। মোহামেডানের হ্যাটট্রিক করেন ফাইজাল বিন সারি।
জিমিকে ছাড়াই খেলল মোহামেডান
৩টি হলুদ কার্ডের খাড়ায় লিগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলা হয়নি জিমির। এই ম্যাচে জিমিকে খেলানোর জন্য কম নাটক করেনি মোহামেডান।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছে ক্লাবের কর্মকর্তারা, জিমি ছাড়া মাঠে নামবে না মোহামেডান। ওদিকে হকি ফেডারেশনও অনড়। বাইলজ লঙ্ঘন করে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না ফেডারেশন।
শেষ পর্যন্ত জিমিকে ছাড়াই মাঠে নামে মোহামেডান। দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে ছাড়াই অবশ্য জয় পেতে চলেছিল। কিন্তু মারামারির ঘটনায় শেষ পর্যন্ত ম্যাচটাই শেষ হলো না।
পণ্ড ম্যাচ নিয়ে যা বললেন সাধারণ সম্পাদক
ম্যাচ পণ্ড হওয়ার পর দ্রুতই নিভে যায় ফ্লাড লাইট। এরপর হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ মাঠে ঢুকে সবাইকে বের করে দেন।
এরপর নিজের কার্যালয়ে বসে জানিয়ে দেন বাইলজের বাইরে তিনি কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না, “ মোহামেডান রিফিউজ টু প্লে করেছে। আমাদের আম্পায়াররা প্রায় ২০ মিনিট অপেক্ষা করেছে। মোহামেডানের অধিনায়ককে অনুরোধ জানিয়েছে মাঠে ফেরার। যেহেতু তারা খেলতে চায়নি তাই বাইলজের রিফিউজ টু প্লে অনুসারে আবাহনীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।”
তবু মোহামেডানের উদযাপন
ম্যাচ পণ্ড হওয়ার পরও দেখা যায় গলায় মালা নিয়ে উদযাপন করে মোহামেডানের খেলোয়াড়েরা। গ্যালারি থেকেও আনন্দ উল্লাস করে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ ছিল সবার। মোহামেডানের ম্যানেজার আরিফুল হক প্রিন্স ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, “আমার ৩ জন খেলোয়াড় বাইরে রেখে এভাবে ১২-১৩ মিনিট খেলতে পারব না। আমরা আম্পায়ারকে বলেছিলাম ভিডিও রেফারেল দেখে সিদ্ধান্ত নিতে। আমাদের হাতে ভিডিও আছে। কারা মারামারি করেছে সেটা দেখে সঠিক সিদ্ধান্ত নিক। সেখানে যদি ২টার জায়গায় ৩টা লাল কার্ডও আসে আমরা সেটা মেনে নেব। কিন্তু সেটা হয়নি।”
আবাহনী প্রস্তুত প্লে-অফ খেলতে
আবাহনীর ম্যানেজার মাহবুব হারুন ম্যাচ শেষে জানান, “ম্যাচে এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। আম্পায়ার রিফিউজ টু প্লে দিয়েছে। যে কারণে আমরা জিতে গেছি। বাইলজ অনুসারে ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নিলে আমরা অবশ্যই প্লে-অফে খেলতে প্রস্তুত।”