এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দফায় দফায় বৈঠকের পর অবশেষে ক্ষমতা ভাগাভাগি করে কেন্দ্রে সরকার গঠনের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)।
রাজধানী ইসলামাবাদে মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিলাওয়ালের বাসভবন জারদারি হাউস থেকে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দল দুটির মধ্যে সমঝোতার ঘোষণা আসে।
জারদারি হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল বলেন, “সরকার গঠনে আমার দল ও পিএমএল-এনের হাতে পর্যাপ্ত আসন আছে। পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ার বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছি। একইসঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট পিপিপি নেতা আসিফ আলি জারদারিকে প্রেসিডেন্ট পদে যৌথ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।”
পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য পদে কারা বসছেন- এ প্রশ্নের জবাবে বিলাওয়াল বলেন, “আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। তবে ঘোষণা এখনই নয়, পরে আসবে।”
ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার রাতে পিএমএল-এন নেতা ইশাক দারের বাসভবনে যান পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল। সেখানে আগে থেকেই নওয়াজ শরিফের ছোট ভাই শেহবাজ উপস্থিত ছিলেন।
আধ ঘণ্টা পর তারা সবাই জারদারি হাউসের উদ্দেশে রওনা দেন। জারদারি হাউস থেকেই এরপর সংবাদকর্মীদের সামনে দুই দলের সরকার গঠনের ঘোষণা আসে।
অন্য পদে যারা বসছেন
জাতীয় পরিষদের অন্য পদগুলোতে আগামীতে কাদের দেখা যাবে, এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টোর ছেলে বিলাওয়াল মুখ না খুললেও একাধিক অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ডন জেনেছে, পরিষদের স্পিকার পদে বসতে যাচ্ছেন নওয়াজের দলের এক নেতা।
অন্যদিকে সিনেটের চেয়ারম্যান পদ পাচ্ছেন পিপিপির এক নেতা। দলটির নেতা ইউসুফ রাজা গিলানি সিনেটের চেয়ারম্যান হতে যাচ্ছেন, এমন খবর পেয়েছে ডন।
এছাড়া খাইবার পাখতুনখাওয়া ও পাঞ্জাবের প্রাদেশিক পরিষদের গভর্নর পদও পাচ্ছে পিপিপি।
সূত্রের বরাত দিয়ে ডন লিখেছে, পিএমএল-এন ও পিপিপি যৌথভাবে বেলুচিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে সরকার গঠন করবে। পিপিপি নেতা সরফরাজ বাগতি সম্ভবত বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।
ডনের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ সিনেটে ডেপুটি চেয়ারম্যান পদে পিএমএল-এনের কোনও নেতাকে দেখা যাবে। অন্যদিকে পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ডেপুটি স্পিকার হবেন পিপিপির কোনও নেতা।
পাকিস্তানের সংবিধানের ৯১ (২) ধারা অনুযায়ী, জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন ২৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকতে হবে। শপথ গ্রহণের পর অধিবেশনের প্রথম দিন আইনপ্রণেতারা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করবেন।
এরপর নতুন স্পিকার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করবেন। ৩৩৬ আসনের জাতীয় পরিষদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হতে গেলে ১৬৯টি ভোটের দরকার পড়ে।
পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির মেয়াদ গত বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হলেও তার উত্তরসূরি নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত এই পদের দায়িত্ব পালন করে যাবেন তিনি।
কেন্দ্র ও চার প্রদেশে সরকার গঠনের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে। একই সঙ্গে মার্চের প্রথম সপ্তাহে হবে সিনেটের নির্বাচন।
পাকিস্তানে জাতীয় পরিষদের ২৬৫ আসন ও চার প্রদেশে (পাঞ্জাব, খাইবার পাখতুনখাওয়া, বেলুচিস্তান ও সিন্ধ) ভোট হয় ৮ ফেব্রুয়ারি। বিতর্কিত এই নির্বাচনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৯৩টি আসনে জয়ী হয়। এছাড়া পিএমএল-এন ও পিপিপি জয় পায় যথাক্রমে ৭৫ ও ৫৪টি আসনে। পরে পিটিআই সমর্থিত একজনসহ নির্বাচনে বিজয়ী কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থী পিএমএল-এনে যোগ দেয়।
নির্বাচনে কোনও দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। এ কারণে জোট সরকার গঠনে ৮ ফেব্রুয়ারির পর কয়েক দফা বৈঠক করেন পিএমএল-এন ও পিপিপির নেতারা। তবে কয়েকবার বৈঠকে বসার পরও সরকার গঠনে চূড়ান্ত ঐকমত্যে মঙ্গলবারের আগ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেননি তারা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, কেন্দ্র ও প্রাদেশিক পরিষদে ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে পিএমএল-এন ও পিপিপির শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় আসার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানে নির্বাচন পরবর্তী সৃষ্ট অনিশ্চয়তার অবসান ঘটবে।