যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদায় সারাদেশে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা। ঈদের নামাজের খুতবা শেষে মোনাজাতে যুদ্ধ আর হানাহানি ভুলে বিশ্বশান্তি কামনা করা হয়। যুদ্ধ-আক্রান্ত ফিলিস্তিনের গাজাসহ বিশ্বের মুসলিম উম্মার শান্তি, সমৃদ্ধি ও সুস্থতা কামনায় দোয়া করেন মুসল্লিরা। নামাজ শেষে পরস্পর কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন।
ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ সারাদেশে ১৮৪টি ঈদগাহ ও প্রায় দেড় হাজার মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ানো হয়।
জাতীয় ঈদগাহ
ঢাকার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাত শুরু হয় সকাল সাড়ে ৭টায়। সেখানে নামাজ আদায় করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাতে ইমামতি করেন জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন।
জাতীয় ঈদগাহে মোট ১২১টি কাতারে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা ছিল। নারীদের জন্য ছিল আলাদা ব্যবস্থা। ভোর থেকেই প্রধান জামাতে নামাজ আদায় করার জন্য মুসল্লিদের ঢল নামে। নামাজ শুরুর এক ঘণ্টা আগেই মূল ফটকের সামনে দেখা যায় মুসল্লিদের লম্বা সারি। নিরাপত্তামূলক কিছু নির্দেশনা মেনে হাজারো মুসল্লি সারিবদ্ধভাবে ঈদগাহে প্রবেশে করেন। নামাজ ও দোয়া শেষে পুরো ময়দানে ছিল উৎসবের আমেজ। পরস্পর কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন।
জাতীয় মসজিদ
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে হয়েছে ঈদের নামাজের ৫টি জামাত। সেখানে প্রথম জামাত শুরু হয় সকাল ৭টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররমের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা ইহসানুল হক। এখানে কয়েক হাজার মুসল্লি নামাজ ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন। দেশবাসীর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের জনগণের জন্য বিশেষ দোয়া করা হয়।
জাতীয় মসজিদে দ্বিতীয় জামাত হয় সকাল ৮টায়, তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায় ও সর্বশেষ জামাত হয় বেলা পৌনে ১১টায়।
সংসদ ভবন
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় ঈদুল আজহার নামাজের জামাত শুরু হয় সকাল ৮টায়। জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ, হুইপ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও সংসদ সচিবালয়ের কর্মচারীসহ এলাকার মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করেন। সেখানে মোনাজাতে বিশ্বের মুসলিম উম্মাহসহ দেশ ও জাতির কল্যাণ, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।
ঢাকায় আরও জামাত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে ঈদের জামাত হয় দুটি। প্রথম জামাত সকাল ৮টায় ও দ্বিতীয় জামাত সকাল ৯টায় হয়। এছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম হল মসজিদে সকাল ৭টায়, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে সকাল ৮টায় ও ফজলুল হক মুসলিম হলের পূর্ব পাশের খেলার মাঠে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হয়।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) খেলার মাঠে সকাল ৭টায় ঈদের নামাজের জামাত শুরু হয়। আজিমপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক এলাকার বায়তুন নূর জামে মসজিদে জামাত ছিল সকাল ৮টায়।
ধানমন্ডির সোবহানবাগ মসজিদে সকাল ৮টায়, ধানমন্ডির ৩ নম্বর রোডের এনায়েত মসজিদে সকাল সাড়ে ৭টায়, ৭ নম্বর রোডের বাইতুল আমান মসজিদে সকাল ৮টায় ও তাকওয়া মসজিদে সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হয়।
পুরান ঢাকার লালবাগ শাহী মসজিদে ঈদ জামাত হয়েছে সকাল ৮টা ও ৯টায়। আজিমপুর ছাপরা মসজিদ সকাল সাড়ে ৭টায়, সাড়ে ৮টায় ও সাড়ে ৯টায় আর কবরস্থান মসজিদে সকাল ৭টায়, ৮টায়, ৯টায় ও ১০টায় পরপর হয় চারটি জামাত।
মিরপুর-১২ এর হারুণ মোল্লাহ ঈদগাহ, পার্ক ও খেলার মাঠে সকাল ৭টায় ও রাজধানীর পল্লবী থানার ২ নম্বর ওয়ার্ডের হারুন মোল্লাহ ঈদগাহ মাঠে সকাল ৭টায় ঈদের জামাত হয়।
গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ অ্যান্ড ঈদগাহে তিনটি জামাত হয়। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার মারকাজুল ফিকরিল ইসলামিতে (বসুন্ধরা কমপ্লেক্স) সকাল ৭টায় ঈদের জামাত হয়। আবাসিক এলাকাটিতে আরও ৫টি মসজিদে ঈদের নামাজ হয়।
কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ায় ১২৫টি ঈদগাহে হয়েছে ঈদের নামাজের জামাত। সকাল সাড়ে ৭টায় কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জামাত হয়। এতে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও এমপি মাহবুব উল আলম হানিফ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক মো. এহেতেশাম রেজাসহ মুসল্লিরা নামাজ আদায় করেন।
সারাদেশেই ঈদের নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মানুষের সুস্থতা ছাড়াও মুসলিম উম্মা ও বিশ্বশান্তি কামনায় দোয়া করা হয়। নামাজ শেষে কোরবানির উদ্দেশ্যে ঘরে ফেরেন মুসল্লিরা।