গ্রাহকদের নগদ টাকা তুলে নেওয়ার চাপ বাড়ায়, তা সামলাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ধার নিয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
এর মধ্যে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো ধার নিয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা ধার নিয়েছে অন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
বাংলাদেশ ব্যাংক বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাংকে নগদ টাকার সরবরাহ কম থাকলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ধার নিয়ে গ্রাহকের চাহিদা মেটানো হয়।
গত ১৮ জুলাই (বৃহস্পতিবার) ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধের পর টানা পাঁচ দিন ব্যাংক বন্ধ ছিল। শুক্র-শনিবারের সাপ্তাহিক ছুটির পর রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তিন দিন ছিল সাধারণ ছুটি। গত বুধবার ব্যাংকগুলো খুলেছে। এদিন থেকে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত লেনদেন হচ্ছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া সহিংসতার কারণে জানমাল রক্ষার কথা বলে সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এতে এ সময় ব্যাংক থেকে টাকা তুলতে না পেরে এটিএম বুথের ওপর নির্ভর হয়ে পড়েন গ্রাহকরা। তাছাড়া ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ইন্টারনেট ব্যাংকিংও বন্ধ থাকায় অনেকেই নগদ টাকার স্বল্পতায় পড়েন।
বুধবার ব্যাংক লেনদেন শুরু হলে বিভিন্ন ব্যাংকের শাখায় গ্রাহকদের ভিড় বাড়তে শুরু করে।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, বেশির ভাগ গ্রাহক টাকা তুলতে ব্যাংকে আসছেন। ফলে নগদ টাকার সংকটে পড়ে ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত বুধবার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেপো, অ্যাসিউরড রেপো, অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট (এএলএস) ও শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোর জন্য ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির (আইবিএলএফ) নিলাম অনুষ্ঠিত হয়।
এই নিলামে ৭ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১৪টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৫ হাজার ৭ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ৯টি ব্যাংককে ২ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা, ২৮ দিন মেয়াদি রেপো সুবিধার আওতায় ১২টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে ৭ হাজার ১৯৭ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এছাড়া বুধবার ১৮০ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড রেপো আওতায় ৩টি ব্যাংককে ৫ হাজার ৬৯১ কোটি টাকা এবং ১ দিন মেয়াদি অ্যাসিউরড লিকুইডিটি সাপোর্ট আওতায় ১১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংককে ৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
পাশাপাশি ১৪ দিন মেয়াদি ইসলামিক ব্যাংকস লিকুইডিটি ফ্যাসিলিটির আওতায় ১টি ব্যাংককে ৪৯৭ কোটি টাকা ও ২৮ দিন মেয়াদে ৫টি ইসলামি ধারার ব্যাংককে ৯৮৪ কোটি টাকা ধার দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সব মিলিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৫২১ কোটি টাকা ধার নেয় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, ৭ দিন মেয়াদে টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৬০ শতাংশ, ১৪ দিন মেয়াদে সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭০ শতাংশ ও ২৮ দিন মেয়াদি টাকা ধারের সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
এছাড়া অ্যাসিউরড রেপো ও অ্যাসিউরড লিকুইডিটির সুদহার ছিল সাড়ে ৮ শতাংশ। ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ছিল ৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। ২৮ দিন মেয়াদি ইসলামি ধারার ব্যাংকের জন্য মুনাফার হার ছিল ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে সাড়ে ৬ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বড় ধরনের সহিংসতা শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ গত ১৮ জুলাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ১৬ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা ধার নিয়েছিল।