যুক্তরাষ্ট্রের মুদ্রা ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময়মূল্য আরও কমেছে।
মঙ্গলবার একদিনেই ডলারের দর ২ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। এদিন আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে প্রতি ডলার ১২০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। ব্যাংকগুলোও নগদ ডলারসহ সব ক্ষেত্রেই ১২০ টাকা দরে ডলার লেনদেন করেছে।
খোলাবাজার বা কার্ব মার্কেটে প্রতি ডলার ১২২ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১২২ টাকা ৬০ পয়সায় ডলার বিক্রি হয়েছে ।
সোমবার আন্তঃব্যাংক লেনদেনসহ সব ক্ষেত্রেই ১১৮ টাকায় ডলার লেনদেন হয়। কার্ব মার্কেটে বিক্রি হয় ১২০ টাকা ৫০ পায়সায়।
গত রবিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভায় ডলারের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়। ওই বৈঠকে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য বাড়ানোর উদ্যোগ হিসেবে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যান্ড ১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিনিময় হার নির্ধারণের ক্রলিং পেগ ব্যবস্থায় এতদিন ডলারের মধ্যবর্তী দাম ছিল ১১৭ টাকা, যা ১১৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে ডলারের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারবে।
নতুন সিদ্ধান্তে খুব দ্রুতই আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে তারল্য ফিরে আসবে এবং বিনিময়ের পরিমাণও দ্রুত বাড়বে বলে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়।
ওই সিদ্ধান্তের এক দিন পর ডলারের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বাজারে ডলারের সর্বোচ্চ দর ছিল ১২০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ১১৯ টাকা ৭০ পয়সা।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক ১২০ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার ক্ষেত্রেও একই দর নেওয়া হয়েছে। অন্য সরকারি ব্যাংক ও বেসরকারি ব্যাংকগুলোও সব ক্ষেত্রে ডলারের দর নিয়েছে ১২০ টাকা।
গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম ডলারের দর বাড়ল।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতির মধ্যেও খোলাবাজারে ডলারের দাম বেড়ে গিয়েছিল। গত ৩১ জুলাই হঠাৎ করেই কার্ব মার্কেটে ডলারের দর ১২৪ টাকায় ওঠে। ১ আগস্টও চড়া থাকে বাজার। পরে অবশ্য তা কমে ১২০ থেকে ১২১ টাকার মধ্যে নেমে আসে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক গত ৮ মে ডলারের দর নির্ধারণের নতুন পদ্ধতি ‘ক্রলিং পেগ’ চালু করে। এর মাধ্যমে এক লাফে প্রতি ডলারে ৭ টাকা বাড়িয়ে মধ্যবর্তী দর ঘোষণা করা হয় ১১৭ টাকা। এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় ডলারের দর নির্ধারিত ছিল ১১০ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকার গুলশানের একটি মানিচেঞ্জারের কর্মকর্তা বলেন, “ব্যাংকগুলো ডলারের দাম বাড়িয়েছে। তার প্রভাব খোলাবাজারেও পড়েছে।”
মঙ্গলবার রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকও ১২০ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রেও একই দর নিয়েছে।
বেসরকারি ইস্টার্ন ব্যাংক ১২০ টাকা দরে নগদ ডলার বিক্রি করেছে। এলসি খোলার ক্ষেত্রেও এই দর নিয়েছে। রেমিটেন্সের ক্ষেত্রে এই দর দিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১৪ আগস্ট আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে টাকা-ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা।
এ হিসাবে দেখা যাচ্ছে, এক বছরে টাকার বিপরীতে ডলারের দর বেড়েছে ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।