দেশের বাজারে সোনার দাম নতুন রেকর্ড করেছে। অবশ্য কেবল বাংলাদেশেই নয়, বিশ্ববাজারেও রেকর্ড গড়েছে মূল্যবান এই ধাতুটি।
সবশেষ ঘোষণা অনুযায়ী, রবিবার থেকে সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা বাংলাদেশে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকায় বিক্রি হবে। এটি দেশে বাজারে ইতিহাসের সর্বোচ্চ দাম।
শনিবার রাতে প্রতি ভরিতে ৩ হাজার ১৪৯ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এক সপ্তাহের ব্যবধানে এল সোনার দামের নতুন ঘোষণা।
বাজুসের নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, রবিবার থেকে দেশের বাজারে এক গ্রাম ২২ ক্যারেট সোনা কিনতে ১১ হাজার ৪০৭ টাকা লাগবে। ১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রামে এক ভরি হিসাবে প্রতি ভরি কিনতে লাগবে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৫১ টাকা।
২১ ক্যারেটের প্রতিভরি সোনা কিনতে লাগবে ১ লাখ ২৬ হাজার ৯৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটে লাগবে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৬০ টাকা। আর সনাতন পদ্ধতির এক ভরি সোনা বিক্রি হবে ৮৯ হাজার ২১৮ টাকায়।
শনিবার পর্যন্ত দেশের বাজারে ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনা বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ২৯ হাজার ৯০২ টাকায়।
হিসাব করে দেখা যাচ্ছে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট সোনার দাম বেড়েছে ৩ হাজার ১৪৯ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম বেড়েছে ২ হাজার ৯৯৮ টাকা। ১৮ ক্যারেটের বেড়েছে ২ হাজার ৫৭৮ টাকা। সনাতন পদ্ধতির প্রতিভরি সোনার দাম বেড়েছে ২ হাজার ২০৪ টাকা।
বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণ বা পিওর গোল্ডের দাম বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সোনার নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিশ্ববাজারেও রেকর্ড
একই দিন আন্তর্জাতিক বাজারেও রেকর্ড হয়েছে। যেখানে প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স সোনার দাম ২ হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে।
গত কিছুদিন ধরেই আন্তর্জাতিক বাজারে সোনার দাম বাড়ছিল। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার এই ধাতুর দাম সর্বোচ্চে ওঠে। এবার সোনার দাম বাড়ার মূল কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানো ও মধ্যপ্রাচ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা কথা।
সবশেষ শনিবার রাত সোয়া ৯টায় বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স (৩১ দশমিক ১০৩৪৭৬৮ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৩৪ ডলার ৯৫ সেন্ট বা ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬২২ ডলার ৩০ সেন্টে উঠেছে।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে যখন দেশের বাজারে সোনার বাড়ানো হয়, তখন বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ছিল ২ হাজার ৫৭৮ ডলার ২৪ সেন্ট।
সাধারণত বিশ্বে যে কোনও অনিশ্চয়তা দেখা দিলেই সোনার দাম চড়তে থাকে। বিশ্ববাজারের প্রভাব তখন স্থানীয় বাজারেও পড়ে।
কোভিড মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে সোনার দাম বাড়লেও পরে স্থিতিশীল হয়।
গত ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতে প্রতি আউন্সের দাম ছিল ২ হাজার ডলারের নিচে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সোনার দাম এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল বুধবার মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতি সুদহার বড় ব্যবধানে কমানোর বিষয়টি। ওইদিন দশমিক ৫০ শতাংশ পয়েন্ট সুদ কমানো হয়। ফলে সোনা কেনার দিকে বিনিয়োগকারীদের ঝোঁক আরও বাড়ে।
বিশ্ববাজারে ২০২৪ সালে সোনার দাম এখন পর্যন্ত ২৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০১০ সালের পর সোনার দাম কখনোই এতটা বাড়েনি।
মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চলছে। সংঘাত চলছে বিশ্বের আরও অনেক দেশে। ফলে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা থেকে বিনিয়োগ নিরাপদ রাখতে অনেকেই সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
রুপার দাম অপরিবর্তিত
সোনার দাম বাড়লে অপরিবর্তিত রয়েছে রুপার দাম।
২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ১০০ টাকা, ২১ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ২ হাজার ৬ টাকা, ১৮ ক্যারেটের এক ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৭১৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি রূপা ১ হাজার ২৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।