Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪
Beta
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

চালের দাম কেড়ে নিচ্ছে ডিম-সবজির স্বস্তি

ss-rice-market-25102024
[publishpress_authors_box]

বাজারে ডিম-সবজির দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও চালের দাম বৃদ্ধির কারণে সেই স্বস্তি আর থাকছে না। প্রায় সপ্তাহ খানেক ধরে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বাড়তে দেখা গেছে। শুক্রবার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মোটা, মাঝারি ও সরু- প্রায় সব ধরনের চালের দাম খুচরা পর্যায়ে কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে।

হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধিতে মাসের বাজারের বাজেট মেলাতে হিমসিম খেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।

ঢাকার নর্দা এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন চিন্ময় কুমার ঘোষ। স্বল্প আয়ের এই কর্মজীবী সকাল সন্ধ্যাকে জানান, তিনি সাধারণত পাইজাম চাল কেনেন। আগে এ ধরনের চালের দাম ছিল ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা কেজি। এখন কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকায়।

এই ক্রেতা জানেন না, চালের দাম বাড়ার কারণ কী? তিনি মনে করেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে অন্তর্বর্তী সরকারকে আরও উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে হবে।

এদিন বাজারে প্রতিকেজি মোট দানার চাল খুচরা পর্যায়ে পড়েছে ৬৪-৬৫ টাকা। মাঝারি ব্রি-২৮ এর দাম ছিল ৬৬-৬৮ টাকা কেজি এবং সরু দানার (মিনিকেট ও নজিরশাইল) চাল পড়ে ৮৪-৮৫ টাকা।

বিক্রেতারা বলছেন, তাদের যারা চাল সরবরাহ করে তারাই দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদেরই একজন গ্রিন রোডের মো. আলী জেনালের স্টোরের মালিক মো. আলী।

সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারে গত সপ্তাহে ৫০ কেজি চালের দাম বস্তায় ১৫০-২০০ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে দাম বাড়লে খুচরা পর্যায়ে তো দাম বাড়বেই। আমরা মুনাফা করার জন্যই তো ব্যবসা করি।” 

মোহাম্মদপুর কৃষি বাজারে ২৮ জাতের চাল ব্র্যান্ড ভেদে প্রতি বস্তা ৩ হাজার ২০০ টাকা এবং জিরাশাইল ও মিনিকেটের বস্তা ৩ হাজার ৬০০ টাকা বা তার কিছু বেশি পড়ছে।

অবশ্য চালের দাম বৃদ্ধির আভাস আগেই দিয়েছিলেন পুরান ঢাকার বাদামতলী ও বাবুবাজার চাল আড়ৎ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন।

গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেছিলেন, বিভিন্ন এলাকায় বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে চালের সরবরাহ ঘাটতি দেখা দিয়েছ, পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। ঢাকায় যেসব আড়ৎদারদের চাল শেষ হয়েছে বা কমে আসছে, তারা ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা পর্যন্ত কেজিতে চালের দাম বাড়াতে শুরু করেছে।

ডিম-সবজিতে কিছুটা স্বস্তি

সরকারের একাধিক উদ্যোগের ফলে রাজধানী ঢাকায় ডিমের দাম কিছুটা কমে এসেছে। বর্তমানে ফার্মের মুরগির ডিম (বাদামি ও সাদা) ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকার মধ্যে। দুয়েকটি ছাড়া প্রায় সব সবজির দাম কমে এসেছে।

গত শুক্রবার পর্যন্ত ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ডিমের দাম ছিল ডজনপ্রতি ১৮০-১৯০ টাকা। ভোক্তা অধিদপ্তরের উদ্যোগে পাইকারি বাজারে ডিম সরবরাহ করার পর থেকে ডিমের বাজারে অস্থিরতা কিছুটা কমতে শুরু করে।

এর আগে অবশ্য দুই দফা ডিমের যৌক্তিক দাম বেঁধে দেওয়া হলেও সেই দামে ডিম কিনতে পারেননি ক্রেতারা।

এর মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ডিমের খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, ডজনপ্রতি ১৪২ টাকা করে। এরপর সেই দাম কিছুটা বাড়িয়ে ১৪৪ টাকা করা হয়। কিন্তু সেই দামে ডিম বিক্রি না করায় পাইকারি বাজারে ডিম সরবরাহের উদ্যোগ নেয় ভোক্তা অধিদপ্তর।

শুক্রবার রামপুরা কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি পটল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়; লম্বা বেগুন ৬০-৮০ টাকায়, গোল বেগুন ১০০-১২০ টাকায়। পেঁপের কেজি পড়ছে ৩০ টাকা। এছাড়া ধুন্দুল ৫০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ টাকা, গাজর ১০০ টাকা, কচুরমুখী ৭০-৮০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে।

ঢেঁড়সের কেজি ৬০-৭০ টাকায় নেমে এসেছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৮০ টাকা কেজি।

কচুরলতির কেজি এখনও ১০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না। বরবটি পড়ছে ৮০-৯০ টাকা কেজি। 

শীতের আগাম সবজির মধ্যে শিমের দাম কিছুটা কমে এসেছে।

কারওয়ান বাজারে শিম বিক্রি হয় ১২০-১৪০ টাকা কেজি। ওই বাজারে টমেটো বিক্রি হয় ১৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ১৯০-২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ছোট আকৃতির বাঁধাকপি ও ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা পিস।

কমেছে করলার দামও। কেজি পড়ছে ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ১০০ টাকার নিচে পাওয়া যায়নি।

নিম্নমুখী শাকের বাজারও। প্রতি আঁটি লাল শাক ২০ থেকে ২৫ টাকা, পাট শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৩০ টাকা, লাউ শাক ৪০ টাকা, মুলা শাক ২০ টাকা, ডাঁটা শাক ২৫ টাকা, কলমি শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা ও পালং শাক ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচামরিচের ঝাঁঝ কমছে

ঢাকার প্রধান প্রধান কাঁচাবাজারগুলোয় শুক্রবার এক কেজি কাঁচামারিচের দাম ছিল ২০০-২৪০ টাকা। আড়াইশ’ গ্রাম কাঁচামারিচের দাম পড়েছে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা।

সম্প্রতি কাঁচামরিচের কেজি প্রায় ৪০০ টাকায় উঠেছিল, যা গত সপ্তাহেও ছিল ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।

পরিবর্তন নেই আলু-পেঁয়াজের বাজারে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ পড়ছে ১২৫-১৩০ টাকা, আর ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০-১২০ টাকায়।

কিছুটা কম গরুর মাংসের দাম, মাছ বাড়তি দামেই

শুক্রবার ঢাকার বেশিরভাগ বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে। সোনালি মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৩০০-৩২০ টাকা। আর সাদা লেয়ার ২৬০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩০০ টাকা কেজি।

গরুর মাংসের দাম কিছুটা নিম্নমুখী। শুক্রবার সুপারশপ স্বপ্ন আলাদাভাবে গরুর মাংসের ব্যবস্থা রাখে। এই দিন এক কেজি গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৪০ টাকা।

কাঁচাবাজারগুলোয় গরুর মাংসের দাম ছিল ৭৫০ টাকা কেজি। এ ধরনের বাজারে কিছুকাল আগেও এক কেজি গরুর মাংস কিনতে ৭৮০-৮০০ টাকা ব্যয় করতে হতো। এছাড়া প্রতিকেজি খাসির মাংস ১ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে মাছ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামেই। প্রতি কেজি রুই ৩৮০-৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০-৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২২০-২৫০ টাকা, কোরাল ৭০০-৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০-৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ২০০-২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭০০-৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০-৯০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শৌল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত