নিত্যপণ্যের বাজার যেন কিছুতেই স্থির হচ্ছে না। একটি পণ্যের দাম কমার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে যাচ্ছে আরেকটির দাম। তাতে বিপাকে পড়ছে স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষগুলো।
এমন সময়ে কিছুটা স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসছে শীতকালীন সবজি। এরই মধ্যে ঢাকার কাঁচাবাজারগুলোতে বেশ কয়েক ধরনের শীতের সবজির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। দাম তুলনামূলক বেশি হলেও সরবরাহ বাড়ায় এসব সবজি ভূমিকা রাখছে বারোমাসি সবজির দাম কমাতে। তবে আলু আর পেঁয়াজের দাম এখনও চড়া।
শুক্রবার ঢাকার বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। এদিন ধানমন্ডি এলাকায় প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হতে দেখা গেছে ২০০ টাকায়। তবে মোহাম্মদপুর এলাকায় একই জাতের টমেটো বিক্রি করতে দেখা যায় ১৬০ টাকায়।
আবার ধানমন্ডিতে শিম বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজি দরে। একই শিম মোহাম্মদপুরবাসী কিনেছেন ১৪০ টাকায়।
শীতের সবজির মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম এখনও তুলনামূলক বেশি। ছোট আকারের একেকটি কপি মোহাম্মদপুর ও মিরপুরে ৫০-৬০ টাকা পিস দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
তবে বেড়েছে আলু, পেঁয়াজের দাম। বাজার ঘুরে জানা যায়, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ২০-৩০ টাকা। এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে গুনতে হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকা পর্যন্ত।
আলুর দামও চড়া। প্রতি কেজি আলু কিনতে হচ্ছে ৬৫ টাকায়। গত সপ্তাহে যা ছিল ৬০ টাকা। বাড়তি দামের জন্য সরবরাহ কমের অজুহাত বিক্রেতাদের।
বাজারমূল্য নিয়ে কথা হয় ধানমন্ডির বাসিন্দা শাহাজাদা ইসলামের সঙ্গে। সকাল সন্ধ্যাকে তিনি বলেন, “বাজারে যেন দাম বাড়ানোর লুকোচুরি খেলা চলছে। হঠাৎ কদিন আগে বন্যার কথা বলে সবজির দাম বাড়ালো বিক্রেতারা। সবজির দাম কমতে শুরু করলে বাড়ানো হলো ডিমের দাম। আবার ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণের পর দেখা গেলো চালের দাম বাড়ছে। এখন আবার পেঁয়াজের দাম ঊর্ধ্বমুখি।”
কয়দিন পরই নতুন পেঁয়াজ বাজারে উঠবে, এখন পেঁয়াজের এত দাম কেন- এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি।
বাজারে এক ধরনের অস্থিরতা আছে। সরকার এদিকে ঠিকমত নজর দিচ্ছে না বলে কিছু ব্যবসায়ী অতিমুনাফা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ এই ক্রেতার।
মিরপুর ও মোহাম্মদপুর এলাকার বাজারে বেগুন কিছুটা কমে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। মিরপুর শাহ আলী বাজার ও মোহাম্মদপুরে প্রতি কেজি করলা বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকা দরে। মোহাম্মদপুর এলাকায় কাঁকরোল বিক্রি হতে দেখা গেছে ১০০ টাকায়। ধানমন্ডিতে কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে।
ঢাকার নর্দা কাঁচাবাজারে ছোট আকারের লাউ বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। মাঝারি আকারের লাউয়ের দাম ছিল প্রতিপিস ৫০-৬০ টাকা।
মোহাম্মদপুর-মিরপুর এলাকায় এক কেজি পটল ৫০-৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, পেঁপে ৩০-৪০ টাকা, ধুন্দল, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গে ৭০-৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়।
কারওয়ান বাজারের বন্ধু বাণিজ্যালয়ের আড়ৎদার আনোয়ার হোসেন সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “শীতের প্রচুর সবজি এখনই উঠতে শুরু করেছে। সবজির বাজারে দ্রুতই স্বস্তি ফিরবে দ্রুত।”
বন্যার কারণে মাঝখানে কিছুটা দাম বেড়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন দাম আস্তে আস্তে কমতে থাকবে। শীতের সবজি যত উঠবে দাম ততই কমবে।
প্রায় সব বাজারেই কাঁচামরিচের দাম ছিল ১৬০ টাকা কেজি। অথচ মাস খানেক আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম উঠেছিল ৪০০ টাকা পর্যন্ত।
ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের একাধিক উদ্যোগের ফলে ডিমের দাম কিছুটা কমে এসেছে। ফার্মের মুরগির ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। অথচ দুই সপ্তাহ আগেও ডিমের বাজার ছিল অস্থির। প্রতি ডজন ডিম ১৭০-১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
ব্রয়লার মুরগি দাম ১৯০-২০০ টাকা কেজি। সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০০-৩২০ টাকায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই মুরগির বাজারে এমন দাম দেখা যাচ্ছে।