কোটাবিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতায় প্রাণহানির প্রেক্ষাপটে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত আসেনি।
অবশেষে বুধবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশের আটটি বিভাগীয় শহরের সিটি করপোরেশন এলাকাভুক্ত প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব সত্যজিত রায় দাশ স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়, কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন দেশের আট বিভাগীয় শহরের সিটি করপোরেশন এলাকার সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্ট পরিচালিত শিশু কল্যাণ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টারসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানানো হয় নির্দেশনায়।
এর আগে মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
সেই সঙ্গে আগামী বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠেয় সব শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করার কথা জানানো হয় আরেক বিজ্ঞপ্তিতে। স্থগিত হওয়া পরীক্ষার পরবর্তিত সময়সূচি পরে জানানো হবে এবং ২১ জুলাই থেকে পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা যথারীতি চলবে বলেও জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা আসে। ইউজিসির এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুায়ী সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সব মেডিকেল, প্রকৌশল, টেক্সটাইল কলেজসহ অন্য সব কলেজের শিক্ষা কাজ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া অবধি বন্ধ থাকবে।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তার স্বার্থে হল ছাড়তেও বলা হয়েছে।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার পর কোটাবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সহিংসতা ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। তাতে মঙ্গল অন্তত ছয়জন নিহত এবং বহু আহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজন নিহত হয়েছে।
দিনভর সংঘর্ষের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মঙ্গলবার ঢাকাসহ ছয় জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
দেশের সব মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষা স্থগিত
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত দেশের সব মাদ্রাসার ফাজিল পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। ফাজিল প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের ১৮ জুলাই থেকে পরবর্তী সব পরীক্ষা স্থগিত থাকবে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ কে এম আক্তারুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
স্থগিত পরীক্ষার সময়সূচি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে জানানো হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সকল অধিভুক্ত ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
উপাচার্যের অনুমোদনক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।