দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট রাতে হয়েছে, এবার তা কেউ বলতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষ্যে বুধবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেছেন, ‘‘এবারের নির্বাচনে কেউ বলতে পারবে না দিনের ভোট রাতে হয়েছে বা ভোট কারচুপি হয়েছে। কারণ অত্যন্ত স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, আপনারা দেখেছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন আইন করে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিয়েছি। সেই নির্বাচন কমিশনকে আমরা নির্বাচন পরিচালনা করতে দিয়েছি। কোনও রকম হস্তক্ষেপ আমরা করিনি, সহযোগিতা করেছি।
‘‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন থেকে শুরু করে সব কিছুই নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত ছিল। যেন নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয়। আমরা কখনও হস্তক্ষেপ করিনি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনের কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীসহ যারা নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।’’
এবারের নির্বাচন ‘অনেকেই বন্ধ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘‘অনেকেরই অনেক রকম স্বপ্ন আছে। নির্বাচনে মানুষ যাতে ভোট দিতে না আসে সেটা ঠেকাতে চেয়েছিল।
‘‘তারপরও ৪১ দশমিক ৮ ভাগ ভোট পড়েছে। এটা সোজা কথা নয়! আওয়ামী লীগ এবং আমাদের সমমনা দল যখন নির্বাচন করেছে, আরেকটি দল তখন নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে।’’
শেখ হাসিনা এবার নিয়ে পঞ্চমবার ও টানা চতুর্থবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।
জনসভা থেকে সরাসরি বঙ্গভবনে যাওয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আজকে আমাদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান ছিল। মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে আমার চিঠি হস্তান্তর করব। এরপর আমরা সরকার গঠন করব।
‘‘২০০৯ সালের পর প্রতিটি নির্বাচনে মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছে। কারণ জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে এই আওয়ামী লীগ। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ।’’
এর আগে তিনি বলেন, ‘‘আজ বাঙালী জাতির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। যেদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে ফিরে এসেছিলেন তার প্রিয় এই বাংলাদেশে। সবার আগে এসেছিলেন এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে, যেখানে তিনি ভাষণ দিয়েছিলেন।’’
‘‘স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে অল্প সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করে তুলতে চেষ্টা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঠিক সেই সময়ে তাকে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল।’’
‘‘এরপর অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় বসেছিল তারা ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে কিছু দল গঠন করে। আর কিছু অভিজাত শ্রেণি তৈরি করে। অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করার চেষ্টা করে। সেই পরিস্থিতিতে ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে এসে আমি প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, যে দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়েছে আমার বাবা-মা, সেই দেশের স্বাধীনতা কখনও ব্যর্থ হতে পারে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে গড়তে হবে।’’
‘‘এই দেশের মানুষের মধ্যেই আমি খুঁজে পেয়েছি আমার মায়ের স্নেহ, বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। ঠিক সেইভাবে আমি রাষ্ট্র পরিচালনা করেছি, যাতে প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে পরিবর্তন আনতে পারি,’’ যোগ করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘‘আমার অবাক লাগে, মিলিটারি ডিক্টেটররা যখন অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসল, তখন যারা কথা বলতো না, আমরা যখন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি, জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছি, তখনই আমাদের গণতন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন, নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন।
‘‘যখন নির্বাচন মানেই ছিল, দশটা হুন্ডা, বিশটা গুন্ডা, নির্বাচন ঠান্ডা। আজকে আর সেই অবস্থা নেই। জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। গণতন্ত্রকে সুসংহত করেছি।’’
‘‘দীর্ঘদিন এই গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলে আজকে বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। দারিদ্রের হার কমেছে। মানুষের আয় বেড়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। স্বাক্ষরতার হার বেড়েছে।’’
‘‘সবদিক থেকে যখন বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সারাবিশ্ব যেখানে বলছে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। তখন দেশের ভেতরে কিছু্ আছে দালাল শ্রেণি আর কিছু আছে বাইরের লোক, যাদের চোখে কিছুই ভালো লাগে না। মনে হয় যেন, একটি অগণতান্ত্রিক দল আসলেই তারা খুশি।’’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি আজকে এখানে দাঁড়িয়ে কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি, তারা সকল বাধা, ভয়ভীতি, অগ্নিসন্ত্রাস উপেক্ষা করে এই নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করেছে। ভোট দিয়েছে আওয়ামী লীগকে এবং আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনতে তারা গ্রহণ করেছে এবং নিজের ভোট নিজে দিয়েছে।
‘‘এবার মনে হয়েছে গ্রামে-গঞ্জেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা ভোট দিয়েছে। বিশেষ করে মহিলা ভোটাররা ছুটে এসেছে, ভোট দিয়েছে।’’