ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধার মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা সুসংহত রাখতে ইইউতে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা উত্তরণের মেয়াদ ২০২৯ সালের পরিবর্তে ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর বিষয়ে এ সমর্থন চান তিনি।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন আয়ারল্যান্ডের এন্টারপ্রাইজ, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী সাইমন কভেনির নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। তাদের সঙ্গে আলাপেই এ কথা বলেন তিনি।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
নজরুল ইসলাম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন যাতে ইইউ বাংলাদেশের জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা, বিশেষ করে জেনারেলাইজড স্কিম অফ প্রেফারেন্স (জিএসপি) বৃদ্ধি করে।”
আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সবসময় বাংলাদেশের পাশে থেকেছে। এখন ইইউ প্ল্যাটফর্মে বাংলাদেশের স্বার্থের বিষয়ে বাংলাদেশকে সমর্থন করতে আয়ারল্যান্ডের প্রতি অনুরোধ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার জন্য আইরিশ ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিন থেকে চার বিলিয়ন ভোক্তার বাংলাদেশকে একটি সম্ভাব্য বড় মার্কেটিং হাব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতিশীল খাতে আয়ারল্যান্ডের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রম ইস্যু নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য ছড়ানো হয় এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “ইইউভুক্ত দেশগুলো এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে কোনও ভুল বোঝাবুঝির সুযোগ থাকবে না।”
এসময় আয়ারল্যান্ডের মন্ত্রী সাইমন কভেনির বলেন, আয়ারল্যান্ড জাতিসংঘ ও ইইউ ফোরামে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে।
দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও জোরদারে ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আয়ারল্যান্ডের প্রথম অনারারি কনস্যুলেট খোলার জন্য এই সফর উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই কার্যালয়টি দু’দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পারিক সম্পর্ক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সহায়ক হবে।”
বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও খাদ্য শিল্পে (কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প) আয়ারল্যান্ড প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে চায় বলেও জানান তিনি। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে তার দেশ স্বাগত জানাবে বলেও উল্লেখ করেন।
এসময় রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কথা বলেন তিনি। রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তা জোরদার, তাদের উপার্জনশীল কাজে নিয়োজিত করার ও বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য উন্নত ঘরের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেন।
জবাবে শেখ হাসিনা জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সেখানে মাঝে মাঝে হত্যা ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত হয় কারণ সেখানে অনেক অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী রয়েছে যারা বাংলাদেশে দীর্ঘদিন অবস্থানের কারণে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েছে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ভারতে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি ও বাংলাদেশে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ জামিল খান।