নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে সবাই। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে এই দাবি-দাওয়ার মিছিল গিয়ে এখন ঠেকেছে প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি যমুনায়।
রবিবার চারটি ব্যানারে ভিন্ন ভিন্ন পেশার ব্যক্তিরা ১ দফা দাবি নিয়ে সমবেত হলেও মূলত প্রত্যেকেই আসে চাকরি স্থায়ী করার নিশ্চয়তা চাইতে।
তাদের মধ্যে অনেকেই সকাল থেকে বিভিন্ন জায়গায় মানববন্ধন, প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন শেষে চলে আসে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবনে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে দেড় দশকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর গত ৮ আগস্ট ড. ইউনূস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।
গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনকালে বঞ্চিতরা এখন তাদের নানা দাবি পূরণে সরব হয়ে উঠেছে। তাতেই প্রধান উপদেষ্টার বাড়ি ঘিরে জমছে হাজার মানুষের ভিড়।
গত সপ্তাহে একসঙ্গে দুটি কিংবা তিনটি সংগঠনকে সেখানে দেখা গেলেও রবিবার সেখানে ব্যানারের সংখ্যা চার-এ গিয়ে দাঁড়ায়।
বিকাল ৫টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, যমুনার সামনে উভয় পাশের সড়কেই আন্দোলনকারীদের অবস্থান। ফলে বন্ধ হয়ে যায় যান চলাচল। যমুনার ভেতরে কিছু মালামাল নেওয়াও আটকে দিয়েছিল তারা।
যমুনার প্রবেশ পথে অবস্থান নিয়ে ছিল ‘তথ্য আপা’ পদের কয়েকশ কর্মচারী। তাদের পাশে ছিল পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের চুক্তিভিত্তিক কর্মীরা। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল দিক থেকে আসার পথে ছিল একটি প্রকল্পের কর্মীরা।
সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ২০০৯ সালের বিদ্রোহের সময় চাকরিচ্যুত কয়েকশ জওয়ান এসেছিল চাকরি ফেরত পাওয়ার দাবিতে। সারিবদ্ধভাবে বসে চাকরি পুনর্বহালের দাবি জানায় তারা।
চাকরিচ্যুত বিডিআর সৈনিক সন্দীপন তালুকদার সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “২০০৯ সালে আমাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আমরা চাকরি ফেরত চাই।”
এর আগে চাকরি ফেরত পাওয়ার জন্য আন্দোলন করেছেন কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “হ্যাঁ। ২০০৯ সালে আসছিলাম শহীদ মিনারে। তখনকার পুলিশ আমাদেরকে মানববন্ধন করতে দেয় নাই।”
এই কর্মসূচিতে তিনশ জনের মতো অংশ নিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, তারা প্রথমে প্রেস ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। সেখান থেকে। সচিবালয়ে যান। সেখান থেকে বিকালে আসেন যমুনার সামনে।
সরকারের কারও সঙ্গে কোনও কথা হয়েছি কি না- জানতে চাইলে সন্দীপন বলেন, “কারও সঙ্গে কোনও কথা হয় নাই।”
তাদের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহের সময় তারা চট্টগ্রামে রাইফেল ট্রেনিং সেন্টারে ছিল। বিদ্রোহের বিষয়ে তারা কিছু জানত না। ‘অন্যায়ভাবে’ ৭৬তম ব্যাচের ৫১৬ জন সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া ১ হাজার ৫৫ জন তাদের নিয়োগ করার দাবিতে যমুনার সামনে অবস্থান নেয়।
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীনে চুক্তিভিত্তিক ফ্রি সার্ভিস ডেলিভারি প্রোগামের আওতায় বিভিন্ন পদে এই নিয়োগ হয়েছিল।
জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলা থেকে আসা রিমা ইয়াসমীন বলেন, “প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর আছে। দুই বছর আছে। পরে বাড়াইতে বাড়াইতে ১০ বছর করছে। এহন ৩০ জুন পর্যন্ত মেয়াদ আছিল গেছেগা। এদিকে আমাদের কাজ করাইতেই আছে। আবার অর্ধেকডিরে স্থগিত রাখছে।”
তাদের চাকরিতে মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব ভাতা কিছুই নেই জানিয়ে তিনি বলেন, “শুধু ৫৫০ টাকা হাজিরা। একবার বলে বাড়ব, আবার বলে বাড়ব না। টালবাহানা করে।”
স্ত্রীর চাকরির নিশ্চয়তা পেতে পঞ্চগড় উপজেলার দেবীগঞ্জ উপজেলার সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন আলতাফুর রহমান। তিনি বলেন, “আমার স্ত্রীর চাকরি করে, তাই আমি এখানে এসেছি।
“কেউ ১০ বছর পর্যন্ত চাকরি করেছে। গত জুনে হুট করে নির্দেশনা দিয়েছে, তোমাদের রেজিস্ট্রার, ট্যাব এগুলো আমাদের কাছে জমা দেও। আমাদের কথা হলো, হুট করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া আমরা মানব না। আমরা স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করছি। এখানে আড়াইটার দিকে আসছি।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধীনে ডিজিটাল তথ্য আপা প্রকল্প (২য় পর্যায়) রাজস্ব খাতে আনার দাবি নিয়ে আসেন কয়েকশজন।
৪৯২ উপজেলায় চারটি করে পদ রয়েছে এই প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্পের জনবল প্রায় দুই হাজার।
তাদেরই একজন হাবিবা আক্তার লাবণী এসেছেন দাবি নিয়ে। বাগেরহাট জেলার মোল্লাহাট উপজেলায় তথ্য সেবা সহকারী হিসেবে কর্মরত তিনি।
লাবণী বলেন, “আমরা সকাল ৮টা থেকে এখানে অবস্থান নিয়েছি। আমাদের শুধু ১টাই দাবি, ২০১১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত আমরা এই প্রকল্পে চাকরি করছি। এখন অধিকাংশেরই চাকরি নাই। চাকরির বয়স শেষ।
“প্রথমে ১৩ উপজেলায় পাইলট প্রকল্প দিয়ে শুরু হলেও শেষ পর্যন্ত ২০১৭ সালে ৪৯২ উপজেলায় সারাদেশে নিয়োগ দেয়৷ প্রায় দুই হাজার নারী যদি বেকার হয়ে যায়, তাহলে বাংলাদেশে কীসের উন্নয়ন?”
মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আইজিএ (সমাপ্ত) প্রশিক্ষণ প্রকল্পের জনবলকে রাজস্ব খাতে নিতে অন্য একটি দলও ১ দফা দাবি নিয়ে যমুনার সামনে ছিলেন।
তাদের এসব দাবি নিয়ে সরকারের কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।