কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছয়জনের প্রাণহানির ঘটনার পর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্রলীগের নেতারা।
রোকেয়া হল থেকে শুরু হয়ে সারা রাতে একে একে শামসুন্নাহার হল, কুয়েত মৈত্রী হল,বঙ্গমাতা হল, সুফিয়া কামাল হল, জহুরুল হক হল এবং জিয়া হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের নেতাদের। প্রাধ্যক্ষের কাছ থেকে ছাত্রলীগসহ ছাত্রদল, জামাত-শিবির নিষিদ্ধের নোটিশেও স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১১টার পর রোকেয়া হলে প্রথম ছাত্রলীগ নেতাদের অবরুদ্ধ করে পিটুনি দেওয়া হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন আন্দোলনকারীরা। তাদের তোপের মুখে হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ ১০ নেত্রীকে রাত ১২টার পর অ্যাম্বুলেন্সে করে হল থেকে করে নিয়ে আসে প্রক্টরিয়াল বডি।
রোকেয়া হলের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের যখন বাইরের লোকজন দিয়ে হামলা করা হয়েছে তখন ছাত্রলীগের এই নেতারা হাততালি দিয়েছে, প্রতিবাদ করেনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব ছাত্রী এই ঘটনায় হামলাকারীদের সাথে ছিল, আর যাই হোক ওদের সাথে এক হলে আমরা থাকব না। তাই রাতে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছে। ছাত্রলীগসহ ওদের মত আরও যেসব দল আছে তাদের রাজনীতি আমাদের হলে হবে না।”
ঘটনা চলাকালে রোকেয়া হলের প্রাধ্যক্ষ নিলুফার পারভীন ও আবাসিক শিক্ষকেরা হলেই ছিলেন। ছাত্রলীগ নেত্রীদের বের করে নিয়ে যাওয়ার পর রোকেয়া হলের ছাত্রীরা প্রাধ্যক্ষকে ঘিরে ধরেন। তারা হাতে লেখা একটি বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করতে প্রাধ্যক্ষকে চাপ দেন। একপর্যায়ে প্রাধ্যক্ষ সেখানে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছে, “আমরা রোকেয়া হলের মেয়েরা আজ এই মর্মে লিখিত নিচ্ছি যে, আজ থেকে রোকেয়া হলের অভ্যন্তরে ছাত্ররাজনীতি (ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, যুবদল, জামায়াত-শিবির) নিষিদ্ধ করা হলো। কোনও ধরনের পলিটিক্যাল রুম (রাজনৈতিক কক্ষ) বা গণরুম থাকবে না। রাজনৈতিক কর্মসূচি হলে হবে না।
“কোনও ধরনের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা হলের সঙ্গে থাকবে না। আমরা হলের মেয়েরা যদি এসব দলের দ্বারা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে এর দায় প্রশাসন ও হল প্রাধ্যক্ষকে নিতে হবে। আজ থেকে রোকেয়া হলকে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ঘোষণা করা হলো।”
এরপরই একে একে বাকি হলগুলোতেও এই ঘটনা ঘটতে থাকে। যেসব হলে ছাত্রলীগের নেতাদের পাওয়া যায়নি সেখানে তাদের রুম ভাঙচুরও করে শিক্ষার্থীরা।
শামসুন্নাহার হলের শিক্ষার্থী অর্ণি আনজুম সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “আমাদের আজকে এই পরিস্থিতিতে ঠেলে দিছে ছাত্রলীগ। ওদের সন্ত্রাসী কাজ আর কতদিন সহ্য করা যায়। তাই আমরা আমাদের হলে ওদের নিষিদ্ধ করেছি। আমাদের হলে এসব সন্ত্রাসীর কোনও জায়গা হবে না।”
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. মাকসুদুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “রোকেয়া হল থেকে ১০ জন ছাত্রীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। যেসব হলে এই ঘটনা ঘটেছে, সেটা আমি শুনেছি।”
তিন বলেন, “এখন তো ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা হয়েছে। এসবের আগে এখন আমাদের কাছে আমাদের শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ। সেটাতে আমরা মনোযোগ দিচ্ছি। পরবর্তীতে আমরা এগুলো নিয়ে কথা বলব। কিছুক্ষণ পরই সিন্ডিকেট মিটিং আছে, আমরা কখন হল ভ্যাকেন্ট করব তা সিদ্ধান্ত হবে।”
ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও কেন্দ্রীয় বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও পর্যায়ের নেতাকেই ফোনে পাওয়া যায়নি।
গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার পর কোটাবিরোধী বিক্ষোভ থেকে সহিংসতা ছড়িয়েছে দেশজুড়ে। তাতে অন্তত ছয়জন নিহত এবং বহু আহত হয়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় নিহত হয়েছে দুজন। চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজন নিহত হয়েছে। এমাসের শুরুতে আন্দোলন শুরুর পর নিহতের ঘটনা এটাই প্রথম।
দিনভর সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার ঢাকাসহ ছয় জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও স্নাতকের শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভে কলেজ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সারাদেশে স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়ও।