Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫
Beta
শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি, ২০২৫

শিক্ষার্থীশূন্য ঢাবি ক্যাম্পাস পুলিশ-বিজিবি-আনসারের দখলে

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। ছবি : সকাল সন্ধ্যা
[publishpress_authors_box]

কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এখন শিক্ষার্থীশূন্য। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়কে অবস্থান নিয়ে তাদের বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দেখা মেলেনি আন্দোলনকারীদের।

শিক্ষার্থীশূন্য ঢাবি ক্যাম্পাস এখন কার্যত পুলিশ, বিজিবি ও আনসারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের দখলে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে বিজিবি ও আনসার সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশপথগুলোতে পাহারায় রয়েছে পুলিশ সদস্যরা।

বুধবার রাতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ঢাবি ক্যাম্পাসে দেখা গেছে এমন চিত্র।

ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢোকা ও বের হওয়ার সময় পুলিশকে পরিচয়পত্র দেখাতে হচ্ছে। পরিচয়পত্র না দেখে কাউকে ছাড়া হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে কোনও গণপরিবহন নেই, রিকশাও কম। সেইসঙ্গে পথচারী মানুষের সংখ্যাও কম।

শাহবাগ, নীলক্ষেত, আজিমপুর, নিউমার্কেটের প্রায় সব দোকান বন্ধ। একটা দুটো দোকান খুললেও সেখানে মানুষের ভিড় নেই।

সরকারি চাকরিতে আগে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকলেও ২০১৮ সালে এক আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরির ক্ষেত্রে তা তুলে দিয়ে পরিপত্র জারি করে সরকার। ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের নেতা অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে আবেদন করেন।

সেই আবেদনের শুনানি শেষে গত ৫ জুন ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের পাশাপাশি জেলা, নারী, প্রতিবন্ধীসহ সব কোটাই পুনর্বহালের নির্দেশ দেয়। কোটা পুনর্বহালের রায়ের পর আবার শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে তারা নামে আন্দোলনে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে ব্যারিকেড বসিয়েছে পুলিশ। ছবি : সকাল সন্ধ্যা

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষ রায়টি স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে। একইসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে আবেদন করেন। সেই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ গত ১০ জুলাই কোটা এবং হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করে। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে আপিলের আবেদনও করতে বলা হয়।

আদেশের সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা চাইলে আদালতে তাদের বক্তব্য দিতে পারে।

সর্বোচ্চ আদালতের আদেশকে ইতিবাচক বললেও আন্দোলনকারী বলছে, তাদের দাবি সরকারের কাছে। নির্বাহী বিভাগকেই সংস্কার করে কোটা ৫ শতাংশে কমিয়ে আনতে হবে।

এই পরিস্থিতিতে গত রবিবার সাম্প্রতিক চীন সফর সম্পর্কে জানাতে গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কোটাবিরোধী আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে। আদালতের বিরুদ্ধে কথা বলার অধিকার নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত আদালত থেকে সমাধান না আসে আমাদের কিছু করার থাকে না, এটা বাস্তবতা।”

মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের (কোটাবিরোধীদের) এত ক্ষোভ। কেন এত ক্ষোভ? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতি-পুতিরা পাবে?”

প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে পর ওইদিন মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা।

এরপর প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার ঢাবিতে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলা শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। ওইদনি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পর বিক্ষোভ থেকে সহিংসতা ছড়ায় দেশজুড়ে।

সড়কে গণপরিবহন চলছে খুবই কম। বাসের সংখ্যা একেবারেই হাতেগোণা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশাই চলছে বেশি। সকালে নিউমার্কেট এলাকা থেকে তোলা ছবি – সকাল সন্ধ্যা

কোটাবিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার দিনভর দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ-সহিংসতায় ছয়জন নিহত হয়। এর মধ্যে ঢাকায় দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজন নিহত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় ও স্নাতকের শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভে কলেজ শিক্ষার্থীরাও যোগ দেওয়ার প্রেক্ষাপটে সারাদেশে স্কুল-কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বৃহস্পতিবারের এইচএসসি পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়। বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব বিশ্ববিদ্যালয়ও।

এরপর পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহতদের জন্য বুধবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা।

এই কর্মসূচি ঘিরে বুধবার সকাল থেকেই শাহবাগ ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জড়ো হওয়ার চেষ্টা করলে আন্দোলনকারীদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাবি সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তের পর হল ছাড়তে শুরু করে শিক্ষার্থীরা।

পরে বুধবার বিকাল ৪টার দিকে ঢাবি উপাচার্য মাকসুদ কামালের বাসভবনের সামনে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা।

এমন পরিস্থিতিতে বুধবার সন্ধ্যা জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরে আদালতের রায় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তবে সেই আহ্বান উপেক্ষা করে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় আন্দোলনকারীরা।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত