আগামী ৩০ জুন শেষ হতে যাওয়া ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি সাময়িক হিসাবে হয়েছে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ। মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার।
অর্থবছরের সাত মাস- গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সোমবার অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই সূচকের তথ্য প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে দেশে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। চূড়ান্ত হিসাবে অবশ্য তা কমে ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে।
চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছর শেষে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ডলারের হিসাবে চলতি মূল্যে জিডিপির আকার দাঁড়িয়েছে ৪৫৯ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে এই অঙ্ক ৫০ লাখ ৪৮ লাখ ২৭ কোটি টাকা।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে ডলারের হিসাবে জিডিপির আকার ছিল ৪৫২ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবে ছিল ৪৪ লাখ ৯০ লাখ ৮৪২ কোটি টাকা।
সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ ডলার। টাকার হিসাবে এই অঙ্ক ৩ লাখ ৬ লাখ ১৪৪ টাকা।
গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে ডলারের হিসাবে মাথাপিছু আয়ের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৪৯ ডলার। টাকার হিসাবে এই অঙ্ক ছিল ২ লাখ ৭৩ লাখ ৩৬০ টাকা।
প্রতি ডলার ১০৯ টাকা ৯৭ পয়সা ধরে জিডিপি ও মাথাপিছু আয়ের এই হিসাব কষেছে বিবিএস।
তাদের হিসাব অনুযায়ী, সাময়িক হিসাবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি বেশ খানিকটা বাড়লেও কৃষি ও শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি কমেছে।
সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ দশমিক ২১ শতাংশ। গত অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাবে এই হার ছিল ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরে শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সাময়িক হিসাবে এই খাতে প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৭১ শতাংশীয় পয়েন্ট কমে ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশে নেমে এসেছে।
সাময়িক হিসাবে চলতি অর্থবছরে সেবা খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ। চূড়ান্ত হিসাবে গত অর্থবছরের এই হার ছিল ৫ দশমিক ৩৭ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জনের খাত হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধিকে বরাবরই দেখিয়ে আসছে।
২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে অর্জিত হয় ৭ দশমিক ৮৮ শতাংশ। ওই প্রবৃদ্ধি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
পরের বছর কোভিড মহামারীর ধাক্কায় তা ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। ২০২০-২১ অর্থবছরে তা আবার বেড়ে ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশে উঠেছিল। পরের বছর ৭ শতাংশ ছাড়ালেও গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবার ৫ দশমিক ৭৮ শতাংশে নেমে আসে।
এর আগে চলতি অর্থবছরের দু্ই প্রান্তিকের জিডিপি প্রবৃদ্ধির তথ্য প্রকাশ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো। তাতে দেখা যায়, দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, যা প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় অর্ধেক।
প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে সরকার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরলেও তা যে অর্জিত হবে না, তা অর্থনীতিবিদরা তখনই বলছিলেন।