পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে আলোচিত গাড়িচালক আবেদ আলী জীবন ধরা পড়েছেন।
তাকেসহ মোট ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের মধ্যে
আবেদ আলীর ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম, পিএসসির দুই উপ-পরিচালক, এক সহকারী পরিচালক ও দুই অফিস সহায়ক রয়েছেন।
রবি ও সোমবার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয় জানিয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে।”
রবিবার ‘বিসিএস প্রিলি–লিখিতসহ গুরুত্বপূর্ণ ৩০ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস’ শিরোনামে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টোয়েন্টিফোর একটি প্রতিবেদন প্রচার করে।
সেখানে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার ও নন–ক্যাডারসহ বিভিন্ন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তোলা হয়। তাতে আবেদ আলীর নামও আসে।
গ্রেপ্তার ১৭ জনের মধ্যে ছয়জনই পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাদের কাছ থেকে সরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিপুল আলামত উদ্ধারের কথা জানিয়েছে সিআইডি।
গ্রেপ্তারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির এবং অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও সাজেদুল ইসলাম।
গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিকেল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন এবং লিটন সরকার।
গ্রেপ্তার সাজেদুল ইসলামের বরাতে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদুর রহমান সকাল সন্ধ্যাকে বলেন, “৫ জুলাই রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করতে তিনি (সাজেদুল) ২ কোটি টাকা দেন পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফরকে। এরপর আবু জাফর ট্রাংক খুলে চক্রের সদস্যদের প্রশ্নপত্র দেন। একইভাবে আগেও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছেন বলে সাজেদুলের দাবি।”
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, গ্রেপ্তার আবেদ আলী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনে (পিএসসি) গাড়িচালকের চাকরিতে ছিলেন। তিনি পিএসসি চেয়ারম্যানের গাড়িচালক হিসাবেই বেশিরভাগ সময় দায়িত্ব পালন করেন।
পিএসসির অধীন অধীন বিসিএসের ক্যাডার এবং নন ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের মাধ্যমে আবেদ আলী কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। তার নেতৃত্বাধীন চক্রটি প্রায় ৯ বছর ধরে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিল বলে সিআইডি কর্মকর্তাদের দাবি।
মাদারীপুরের ডাসার থানার বাসিন্দা আবেদ আলী কয়েক কোটি টাকার সম্পদের মালিক বলে চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়। তাতে বলা হয়, আবেদ আলী ড্রাইভারের কাজ ছেড়ে এখন নিজেকে শিল্পপতি পরিচয় দেন। কয়েকটি কনস্ট্রাকশন ফার্মের প্রধান তিনি। রাজধানীতে তার রয়েছে দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আছে আরেকটি বিলাসবহুল বাড়ি। কুয়াকাটায় তিনি থ্রি-স্টার হোটেলও খুলেছেন।
এরপর আবেদ আলীকে নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা শুরু হয়। তার বিপুল সম্পদের পাশাপাশি তার ছেলের বিষয়েও নানা তথ্য আসে।
ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা, তিনি পড়েছেন বিদেশে। বর্তমানে সিয়াম দামি গাড়ি ব্যবহারের পাশাপাশি নিজ এলাকায় প্রচুর দান-খয়রাত করেন বলেও জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান, আবেদ আলী ডাসারের পশ্চিম বেতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে আবেদ মেজ। আবেদের বড় ভাই জবেদ আলী এখনও কৃষিকাজ করেন। ছোট ভাই সাবেদ আলী অটোরিকশা চালান।
তাদের মধ্যে শুধু আবেদ আলীই বিপুল বিত্তের মালিক হয়ে ওঠেন। সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য তিনি প্রচারও চালিয়েছিলেন।
সোশাল মিডিয়ায় আবেদ আলীর বেশ কিছু ছবিও ভাইরাল হয়েছে। তাকে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রভাবশালী অনেকের সঙ্গেই দেখা যাচ্ছে ছবিগুলোতে। তবে সেই ছবিগুলোর সত্যতা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।