বিজয় দিবস উদযাপনে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ নামে যে কনসার্ট বসেছে সংসদ ভবনের সামনের সড়কে, সেখানে হাজারো মানুষের সমাগম হয়েছে। দেড় যুগ পর এমন আয়োজনের সুযোগে উচ্ছ্বসিত বিএনপির নেতাকর্মীরা।
মানিক মিয়া এভিনিউয়ে এই কনসার্ট ঘিরে ব্যাপক উদ্দীপনার পাশাপাশি ঘটেছে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। মঞ্চ ভেঙে আহত হয়ছেন একাধিক গণমাধ্যমকর্মী। এছাড়া আশেপাশে এলালায় দুপুর থেকেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
সোমবার দুপুর দেড়টায় কনসার্ট শুরু হলেও নির্ধারিত সময়ের আগেই দর্শকের উপস্থিতি শুরু হয়। দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী যুবদলের কর্মীরা বিশাল জাতীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে সেখানে আসে। বিএনপির অঙ্গসংগঠন ছাত্রদল, যুবদলের নেতাকর্মীরাও বিভিন্ন স্থান থেকে মিছিল নিয়ে আসে।
মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধরে খামারবাড়ি পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছে ভ্রাম্যমাণ হকাররা। কনসার্ট উপভোগ করতে আসা কেউ কেউ সড়কের পাশের গাছে চড়ে বসেন।
বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী খুরশীদ আলমের কণ্ঠে ‘পাখির নাম দোয়েল, ফুলের নাম শাপলা, দেশের নাম বাংলাদেশ, সুফলা সুফলা’ গান দিয়ে শুরু হয় কনসার্ট। এরপর গান করেন নাসির খান।
দুপুর ২টার দিকে মঞ্চে আসেন তরুণ সঙ্গীতশিল্পী প্রীতম হাসান। প্রথমে ‘খোকা,’ ও পরে ‘হাতে লাগে ব্যথারে, ‘উরাধুরা’ শিরোনামের গানগুলো পরিবেশন করেন তিনি। এরপর গান করেন শিল্পী মৌসুমী। তার পরই গান শোনান আলম আরা মিনু। ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তিসেনা’, ‘সোনা দানা দামি গহনা’ গান গেয়ে তিনি মাইক্রোফোন তুলে দেন মনির খানে হাতে।
সেসময় ‘চিঠি’ ও ‘প্রেমের তাজমহল’ গান গেয়ে দর্শক মাতান মানির খান। এরপর ‘তোমায় দেখলে মনে হয়’ ও ‘সাগরিকা’ গান গেয়ে দর্শক মাতান কনকচাঁপা।
সঙ্গীতশিল্পী ইথুন বাবু ও মৌসুমী দুপুর আড়াইটায় মঞ্চে উঠেন। তারা গেয়েছেন ‘আমি মেজর জিয়া বলছি’ গানটি।
পরে বাউল গান দিয়ে মঞ্চ মাতান ইলিজা পুতুল, গোলাপি, আলিয়া বেগম ও চিশতি বাউল। বিকাল ৫টার পর গান করেন সঙ্গীতশিল্পী ইমরান মাহমুদুল ও কনা।
কনসার্টে একক গান পরিবেশন করেন বরেণ্য সঙ্গীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী, বেবী নাজনীন ও জেফারের।
এছাড়া পারফর্ম করে নগরবাউল, ডিফারেন্ট টাচ, আর্ক, সোলস, শিরোনামহীন, আর্টসেল, অ্যাভয়েড রাফা ও সোনার বাংলা সার্কাস।
মঞ্চ ভেঙে আহত সাংবাদিকরা
বিকাল পৌনে ৪টার দিকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কনসার্ট চলাকালে সাংবাদিকদের জন্য বানানো একটি মঞ্চ ভেঙে পড়ে।
এতে ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি জাহানারা পারভীন ও যমুনা টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক আরেফিন শাকিলসহ নিউজ২৪, মাছরাঙা, এটিএন নিউজসহ বেশ কয়েকটি টিভি চ্যানেল এবং অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকও আহত হয়েছেন।
জাহানারা পারভীন বিএনপির মিডিয়া সেলে বলেন, “আমার হাত কেটে গেছে। এছাড়া আমাদের ক্যামেরা পার্সন তপন আয়েশা মেমোরিয়াল হাসপাতাল ভর্তি আছেন ।”
যমুনা টেলিভিশনের আরেফিন শাকিল বলেন, “বিএনপির কনসার্টে মঞ্চ ভেঙে পড়েছে, অনেক সাংবাদিক আহত, ক্যামেরা ভেঙে গেছে অনেকের। আমি কোমড়ে ও আমার ক্যামেরাপারসন পায়ে ব্যথা পেয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছি। দোয়া করবেন।”
বিএনপির কনসার্টে নিরাপত্তা ঘাটতির কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন গণমাধ্যমকর্মীরা।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল বারী বিএনপির মিডিয়া সেলে সাংবাদিকদের নিরাপত্তার ব্যবস্থার কথা ভাববার কথা বলেছেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক নেতা এবং দৈনিক নয়া দিগন্ত পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি মঈন খান বিএনপির মিডিয়া সেলে বলেন, বিএনপির উচিত সাংবাদিকদের চিকিৎসার সব ব্যয় বহন করা। উন্নত বিশ্বে অবশ্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ারও নিয়ম রয়েছে।
আহত সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাক্তার রফিকুল ইসলাম ও ড্যাবের চিকিৎসক নেতৃবৃন্দকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।
বিএনপির সাংস্কৃতিক প্লাটফর্ম ‘সবার আগে বাংলাদশ’ আহ্বায়ক ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, “গত ১৫ থেকে ১৬ বছর বাংলাদেশের মানুষ বিজয় দিবস উদযাপন করতে পারেনি। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের নানা অত্যাচার, অনাচারের মুখে পড়তে হয়েছে। তাই জাতিকে একত্রিত করার মধ্য দিয়ে এবারের বিজয় দিবস পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
“বিজয় দিবসে বিএনপি নতুন প্রত্যাশা নিয়ে জনগণ ও নতুন প্রজন্মের সামনে হাজির হতে চাইছে।”
কনসার্ট রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এবারের বিজয় দিবসকে সার্বজনীনভাবে উদযাপন করার লক্ষ্যে এই কনসার্টের পরিকল্পনা।
“দিল্লির আনুগত্য করার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। আমরা নতুন প্রজন্মের কাছে বাংলাদেশের নিজস্ব সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই এই উদ্দেশ্য নিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু করলাম।”
‘সবার আগে বাংলাদেশ’ প্লাটফর্ম গত ১০ ডিসেম্বর আত্মপ্রকাশ করে।