স্থানীয় পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও এর পাশাপাশি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বাড়ছে বলে মনে করেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু। সংসদে তার পক্ষে দেওয়া প্রশ্নের উত্তরে এ কথাই জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী।
মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাবে এ প্রসঙ্গ উঠে আসে।
স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী তার পক্ষে প্রশ্নের উত্তর দেন।
প্রবাসী কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী বলেন, “নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার আওতায় আনার জন্য সরকার বদ্ধ পরিকর। সেই লক্ষ্যে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। বাংলাদেশে ব্যবহৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্য পণ্যের বিরাট একটি অংশ দেশে উৎপাদিত হয়ে থাকে। সাধারণত ভোজ্য তেল, চিনি ও মসলাজাতীয় পণ্য আমদানি করা হয়।
“আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য নির্ধারণের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজার মূল্য, পরিবহন খরচ ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয় সম্পর্কিত। তবে স্থানীয় পণ্যের মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলামের লিখিত প্রশ্নের জবাবে লিখিত উত্তর দেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “বর্তমানে ভারত, চীন ও পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৪৮৮ দশমিক ৮৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ভারতের সঙ্গে সাত হাজার ১৬০ দশমিক ৮১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, পাকিস্তানের সঙ্গে ৪ শ ৬৬ দশমিক ৩৩, মিয়ানমারের সঙ্গে ঘাটতি ১১৬ দশমিক ২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ভূটানের সঙ্গে ঘাটতি ১৪ দশমিক ২৯ মিলিয়ন ডলার এবং আফগানিস্তানের সঙ্গে সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি ১ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।”
নেপাল, শ্রীলংকা ও মালদ্বীপের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি নেই জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ বেশি। আর সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভারতের সঙ্গে ঘাটতি বেশি। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতির পরিমাণ ১৫ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।”
স্বতস্ত্র সংসদ সদস্য মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরীর লিখিত প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানিয়েছেন, এক সময় দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় কম ছিল। তখন বেশি চা উদ্বৃত্ত থাকত এবং বেশি চা রপ্তানি করা হত। বর্তমানে দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় ১০০ মিলিয়ন কেজি। উৎপাদন ও চাহিদা প্রায় সমান।
তিনি বলেন, “মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের জন্য দেশে উৎপাদিত প্রায় সকল চা ব্যবহৃত হয়ে থাকে ফলে রপ্তানির জন্য খুব বেশি চা উদ্বৃত্ত থাকে না। তবে ২০২৩ সালে দেশে ১০২ দশমিক ৯২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ড হয়েছে। তার মধ্যে সাড়ে ১০ লাখ কেজি চা রপ্তানি হয়েছে। পক্ষান্তরে মাত্র ৬ লাখ কেজি চা পুনঃরপ্তানি ও ভ্যালু এডেড চা তৈরির জন্য আমদানি হয়ে থাকে।”
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পংকজ নাথের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, রমজান মাসে আবশ্যকীয় পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় মধ্যে রাখতে বাজারে নিত্য পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ বজায় রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
১৬ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্য মজুদ
অধিবেশনে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশে সরকারি খাদ্য গুদামে সব মিলিয়ে ১৬ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। খাদ্যশস্যের এ মজুদ সন্তোষজনক বলেও তিনি জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজী আনারের এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, “চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত হিসাবে সরকারি খাদ্য গুদামে সর্বমোট ১৬ লাখ ৭৯ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। মজুদকৃত খাদ্যশস্যের মধ্যে রয়েছে ১৪ লাখ ৩৮ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ২ লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন গম। খাদ্য মজুদ বর্তমানে সন্তোষজনক। দেশে খাদ্য মজুদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকার অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সূত্রে চাল ও গম অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ এবং আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।”
আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা
আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরীর এক প্রশ্নের লিখিত উত্তরে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, আগামী পাঁচ বছরে ৬০ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠানোর কর্মপরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
তিনি বলেন, “বিদেশে কর্মী প্রেরণ একটি চলমান প্রক্রিয়া। ২০২২ সালে ১১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৩ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থানের জন্য দেশ ছেড়েছেন। ২০২৩ সালে এ সংখ্যা ১৩ লাখ ৫ হাজার ৪৫৩ জনে উন্নীত হয়েছে।”