ইউক্রেনের জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে আগামী এক মাস হামলা বন্ধ রাখার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে এক মাসের পূর্ণ যুদ্ধবিরতি চেয়েছিলেন, তাতে রাজি হননি তিনি।
ট্রাম্প মনে করেন, এই ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতি স্থায়ী শান্তি চুক্তির প্রথম ধাপ হতে পারে।
মঙ্গলবার ট্রাম্পের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ নিয়ে টানা প্রায় দুই ঘণ্টার ফোনালাপে পুতিন এই সীমিত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন বলে জানিয়েছে রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ান।
দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে ফোনালাপের পর ক্রেমলিন জানিয়েছে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়া বন্ধ করলেই কেবল স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন সম্ভব, অন্যথায় নয়।
অন্যদিকে এই সীমিত যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন সরকার।
এই চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া ও ইউক্রেন এক মাসের জন্য একে অপরের জ্বালানি অবকাঠামোর ওপর কোনও ধরনের হামলা বা গুলি চালানো থেকে বিরত থাকবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সর্বাত্মক আক্রমণ শুরু হওয়ার পর ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে ইউক্রেন। হামলা চালাতে থাকে রাশিয়ার জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতেও। এতে চাপে পড়ে রুশ অর্থনীতি।
এখন এই জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে হামলা স্থগিত করা হলে আখেরে লাভ রাশিয়ার, এমনটাই মনে করছেন ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের জ্যেষ্ঠ ফেলো মারিয়া স্নেগোভায়ার।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, জ্বালানি কেন্দ্রে এক মাসের জন্য হামলা স্থগিত রাখা যুদ্ধের ময়দানে সময় নেওয়ার কৌশল হতে পারে পুতিনের। রুশ সেনারা ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে এগিয়ে যাচ্ছে। এই এক মাসে তারা সেখানে আরও অগ্রসর হবে।
মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিনের দীর্ঘ ফোনালাপের পর হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কৃষ্ণ সাগরে যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি আরও একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনায় বসবে তারা, যা দ্রুতই শুরু হবে।
এই আলোচনায় ইউক্রেন থাকবে কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ কেবল জানিয়েছেন, আগামী রবিবার সৌদি আরবের জেদ্দায় আলোচনা শুরু হবে।
ফক্স নিউজের এক অনুষ্ঠানে উইটকফ বলেন, “জ্বালানি কেন্দ্রের ওপর হামলা ও কৃষ্ণ সাগরে গোলাগুলি বন্ধ রাখার বিষয়ে এতদিন ঐকমত্যে পৌঁছানো যায়নি।
“মঙ্গলবার আমরা সেই জায়গায় পৌঁছেছি। আমার ধারণা, পূর্ণ যুদ্ধবিরতির চুক্তির খুব কাছাকাছি আমরা।”
ট্রাম্পের দূতের এই মন্তব্য নিয়ে ক্রেমলিনের বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তাতে তারা সাড়া দেয়নি।
ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে বলেছে, “ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপের পর রুশ সেনাবাহিনীকে ইউক্রেনের জ্বালানি কেন্দ্রগুলোতে হামলা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন পুতিন।
“তবে তার উদ্বেগ, এই সীমিত যুদ্ধবিরতি ইউক্রেনকে পুনরায় অস্ত্র সংগ্রহ ও আরও সেনা নিয়োগের সুযোগ তৈরি করে দিতে পারে।”
এদিকে পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে সন্তোষ জানিয়ে ফক্স নিউজের দ্য ইনগ্রাহাম অ্যাঙ্গেল টকশোতে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের দারুণ কথাবার্তা হয়েছে। প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কথা বলেছি আমরা।”
তবে ফোনালাপে ট্রাম্প যা চেয়েছিলেন, তা পাননি। পুরো ৩০ দিনের পূর্ণ যুদ্ধবিরতি চেয়েছিলেন তিনি।
কিছুদিন আগেই ট্রাম্প বলেছিলেন, ইউক্রেনের সঙ্গে কাজ করা রাশিয়ার চেয়ে কঠিন। কিন্তু এরপর তার প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতিতে রাজি হন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি; পুতিন হননি।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থা জার্মান মারশাল ফান্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টিন বারজিনা বলেন, “ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপ স্পষ্ট করেছে, রাশিয়া কতটা কঠিন সহযোগী হতে চলেছে।
“একই সঙ্গে এর মাধ্যমে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাশিয়া আসলে এই যুদ্ধ থামানোর ব্যাপারে কোনোভাবেই আগ্রহী নয়।”