Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫
Beta
শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫

ইস্টার উপলক্ষে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতির ঘোষণা পুতিনের

easter truce ppn
[publishpress_authors_box]

ইউক্রেনের সঙ্গে চলমান যুদ্ধের মধ্যে ইস্টার উপলক্ষে ৩০ ঘণ্টার স্বল্পমেয়াদি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। 

অবশ্য এই ঘোষণাকে সন্দেহের চোখে দেখছে কিয়েভ। কারণ যুদ্ধ এখন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে প্রবেশ করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলমান শান্তি আলোচনাও স্থবির হয়ে পড়েছে।

পুতিন বলেন, শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে (মস্কোর সময় অনুযায়ী) সোমবার মধ্যরাত পর্যন্ত “সব ধরনের যুদ্ধ কার্যক্রম” বন্ধ থাকবে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলীয় সময় অনুযায়ী, এই সময় শুরু হয়েছে শনিবার সকাল ১১টায়, আর শেষ হবে রবিবার বিকেল ৫টায়।

তিনি আরও বলেন, “আমরা ধরে নিচ্ছি ইউক্রেনও আমাদের অনুসরণ করবে।” তিনি জানান, এই যুদ্ধবিরতি রাশিয়াকে মূল্যায়ন করতে সাহায্য করবে যে, কিয়েভ আসলে যুদ্ধবিরতি চাইছে কি না।

তবে এই ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা অভিযোগ করেন, রাশিয়ান বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শনিবার রাতে এক ভাষণে বলেন, “সর্বাধিনায়ক কমান্ডারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু ফ্রন্টলাইনে রাশিয়ান হামলা অব্যাহত রয়েছে এবং রুশ গোলাবর্ষণ এখনো চলছে।”

জেলেনস্কি জানান, ইউক্রেন এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণাকে সন্দেহের চোখে দেখছে। কারণ পুতিন এখনো যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতে সম্মতি দেননি।

জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়া এখন হঠাৎ করে পুরোপুরি ও নিঃশর্তভাবে নীরবতার ফরম্যাটে যোগ দিতে চাইলে ইউক্রেনও একইভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে। রাশিয়া চুপ থাকলে ইউক্রেনও চুপ থাকবে। কিন্তু হামলা হলে আত্মরক্ষায় প্রতিঘাত করা হবে।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ইস্টার উপলক্ষে ঘোষিত স্বল্প সময়ের যুদ্ধবিরতি ৩০ দিনে বাড়ানোর আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, “এতে রাশিয়ার আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হবে। ৩০ ঘণ্টা সংবাদ শিরোনার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু প্রকৃত আস্থা গড়ে তুলতে যথেষ্ট নয়। ৩০ দিন শান্তির সুযোগ দিতে পারে।”

এই ঘোষণা দেওয়ার সময়টিও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এই ঘোষণা এসেছে এক দিন পরেই, যখন ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছে যে তারা রাশিয়া ও ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে ধৈর্য হারাতে বসেছে। আবার কয়েক ঘণ্টা আগেই রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে কুরস্ক অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এই এলাকায় গত বছর ইউক্রেন হঠাৎ করে হামলা চালিয়েছিল।

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রেই সিবিহা এক্স প্ল্যাটফর্মে লেখেন, “দুঃখজনকভাবে, পুতিনের বক্তব্য ও তার কর্মকাণ্ড প্রায়ই এক হয় না। রাশিয়া যেকোনো সময় থেকেই মার্চ মাস থেকে টেবিলে থাকা সম্পূর্ণ ও নিঃশর্ত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করতে পারে।”

যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর পুতিন মস্কোর ‘ক্রাইস্ট দ্য সেভিয়ার’ ক্যাথেড্রালে একটি অর্থোডক্স ইস্টার সেবায় অংশ নেন। তার সঙ্গে ছিলেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোব্যানিন এবং অন্যান্য উপাসনার্থীরা, জানিয়েছে রয়টার্স।

সেখানে পুতিনকে একটি জ্বালানো লাল মোমবাতি হাতে দেখা যায় এবং তিনি নিজের মাথায় ক্রস চিহ্ন আঁকেন। এই সেবা পরিচালনা করেন প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। তিনি রাশিয়ার অর্থোডক্স চার্চের প্রধান ও পুতিনের ঘনিষ্ঠ সমর্থক। তিনিও ইউক্রেনে যুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

পুতিনের এই ঘোষণা যুদ্ধের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসেছে।

কুরস্কের পাশাপাশি যুদ্ধ চলছে পূর্ব ফ্রন্টের বিভিন্ন এলাকায়ও। গত তিন বছরে এই ফ্রন্টলাইনের খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। কারণ কোনো পক্ষই বড় কোনো অগ্রগতি অর্জন করতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার জানিয়েছে, ইউক্রেন সাম্প্রতিক সময়ে টোরেৎস্ক এলাকার আশেপাশে রাশিয়ান সেনাদের কিছুটা পিছু হটাতে সক্ষম হয়েছে। তবে রাশিয়া ধীরে ধীরে কুপিয়ানস্ক, লিমান এবং কুরাখোভে এলাকায় অগ্রসর হচ্ছে।

এর বাইরে, শনিবার দুই পক্ষ এই যুদ্ধে অন্যতম বড় বন্দী বিনিময় কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, বন্দী থাকা ২৭৭ জন ইউক্রেনীয় সেনাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ২৪৬ জন ইউক্রেনীয় সেনাকে একই সংখ্যক রুশ সেনার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়েছে। তারা আরও জানায়, “সদিচ্ছার নিদর্শন” হিসেবে রাশিয়া ১৫ জন রুশ সেনার পরিবর্তে ৩১ জন আহত ইউক্রেনীয় সেনাকে ছেড়ে দিয়েছে।

পূর্ববর্তী বন্দী বিনিময়গুলোর মতো এই বিনিময় কার্যক্রমেও মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।

একই সময়ে, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে চলমান শান্তি প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ মস্কো আলোচনা পিছিয়ে দিচ্ছে এবং আগেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে।

গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অগ্রগতির কোনো স্পষ্ট লক্ষণ দেখা না দিলে যুক্তরাষ্ট্র খুব শিগগিরই ইউক্রেনে শান্তি আনার প্রচেষ্টা থেকে সরে আসবে।

আরও পড়ুন

সর্বশেষ

সর্বাধিক পঠিত